আখতারুজ্জামান : নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সরকারের ক্রমাগত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘোষণা। বাড়ছে না বেসরকারি ঋণ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিক কমছে। এদিকে মাত্র চার মাসেই সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে। চলতি অর্থবছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। আবার গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ০৪ শতাংশে নেমেছে। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফলে সরকারের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
জানা গেছে, সরকারের তরফ থেকে ক্রমাগত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও, বিশ্বখ্যাত রেটিংস এজেন্সি ফিচ বলছে, আগামী দু’বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে। দুর্বল অবকাঠামো নির্দেশক, খুবই স্বল্প রাজস্ব আয় ও দুর্বল ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক প্রভাবে এমনটি হবে বলে মনে করছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে এখন পর্যাপ্ত নগদ অর্থ নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ফলে একদিকে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহী নয় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকার ঘোষিত কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের (২০১৯) অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধির ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে ব্যাংকে এখন পর্যাপ্ত নগদ অর্থ নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এর অন্যতম কারণ। এছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ফলে একদিকে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহী নয় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে বেসরকারি ঋণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। আর যে হারে বাড়ছে তা মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এত কম হারে বাড়লে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা গেল অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থা কমেছে। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত আসছে না। ফলে ব্যাংকে অর্থ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়ে ঋণও নিতে চাচ্ছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ কমে গেছে। তিনি বলেন, কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ঋণের চাহিদাও বাড়বে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে ৩৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র চার মাসেই সরকার পুরো অর্থবছরের ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে। বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশে ঠেকেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও এই হার ২০-২২ শতাংশের ওপর ছিল। বর্তমানে নগদ টাকার চরম সংকটে আছে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক। এক হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম ১৮ দিনে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। ব্যাংক থেকে সরকারি ঋণের এ ঊর্ধ্বগতি বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধিকে আরও সঙ্কুচিত করেছে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য তা অর্জন করতে হবে। তা না হলে খরচ কমাতে হবে। দুইয়ের কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বেড়ে যাবে। আর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম মাস জুলাই অর্থাৎ ১৮ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায়। সে হিসাবে মাত্র ১৮ দিনের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছিল ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে ৩৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। সবমিলে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ অব্যাহত থাকলে অবশ্যই বেসরকারি খাতে প্রভাব পড়বে। এর ফলে সুদের হার আরও বাড়বে। পুরো বিষয়টি উল্টোদিকে যাচ্ছে, কারণ একদিকে সরকার বলেছে সুদের হার কমাতে, অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সংকট আরও প্রকট করছে। মূলত বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার এসব ঋণ নিচ্ছে। অথচ সরকার ঘাটতি পূরণে রাজস্ব আদায়ে যেভাবে জোর দেয়া দরকার সেভাবে দিচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি চলতি মুদ্রানীতির ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। তবে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ১ শতাংশ।
সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাড়তি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ চাপের মুখে পড়তে পারে বলে এক বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এবারের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে ধরেছে। এতে উৎপাদনশীল খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে সরকারের তরফ থেকে ক্রমাগত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও, বিশ্বখ্যাত রেটিংস এজেন্সি ফিচ বলছে, আগামী দু’বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের শীর্ষ ৩ ক্রেডিট এজেন্সির মধ্যে একটি ফিচ। সংস্থাটির অর্থনৈতিক পূর্বাভাষ বিশ্বজুড়েই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কম হবে বললেও, বাংলাদেশের রেটিং আগের অবস্থানেই রেখেছে ফিচ। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন রেটিং আগের মতোই বিবি-। বাংলাদেশের এই রেটিংয়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধি, উচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ক্রমবর্ধমান তবে গড়পড়তা সরকারি ঋণের ভূমিকা আছে। তেমনি আছে দুর্বল অবকাঠামো নির্দেশক, খুবই স্বল্প রাজস্ব আয় ও দুর্বল ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক প্রভাব। ফিচ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিভিন্ন নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অটুট ছিলো। এর মধ্যে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনাও ছিল। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বাংলাদেশের। ‘বিবি’ ক্যাটাগরিতে থাকা দেশগুলোর মিডিয়ান প্রবৃদ্ধি হার ৪.২% হলেও, গত ৫ দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার ছিল গড়ে ৭.৪ শতাংশ। সরকারের অনুমান বলছে, ২০১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ ঘরোয়া চাহিদা বৃদ্ধি। উচ্চ রেমিট্যান্স ও রফতানি।
তবে ২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কমে ৭.৫ শতাংশ ও ২০২১ অর্থবছরে ৭.২ শতাংশ হবে বলে ফিচ পূর্বাভাষ দিয়েছে। যদিও আগামী বছর ৮.২ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। নিজেদের পূর্বাভাষের পেছনে কারণ হিসেবে ফিচ বলছে, বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের বৈদেশিক চাহিদা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কমছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক বাণিজ্য ধীর হয়ে যাওয়ার পর এই প্রবণতা দেখা গেছে। এছাড়া বিবি বিভাগের দেশগুলোর মিডিয়ান মুদ্রাস্ফীতি ৩.৪ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের ৫.৫ শতাংশ। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক। ২০১৯ সালের অক্টোবর নাগাদ এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া কয়েকটি বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানির প্রভাবও পড়ছে অর্থনীতিতে। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যের দুর্বল অবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ থেকেও খুব বেশি লাভবান হচ্ছে না বাংলাদেশ। ফিচ পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, সরকারের ঘাটতি ২০১৯ অর্থবছরে বেড়েছে। গতবার ৪.৬ শতাংশ হলেও এবার তা হয়েছে ৪.৮ শতাংশ। এর কারণ দুর্বল রাজস্ব আদায়। রাজস্ব এখন জিডিপি’র মাত্র ৯.৬ শতাংশ, যা নাইজেরিয়া ব্যতীত ফিচের হিসাবে বিশ্বের সর্বম্ন। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে নতুন ট্যাক্স আইন বাস্তবায়ন হলেও জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আদায় সহসাই বাড়ার সম্ভাবনা কম। ফিচ আরও বলেছে, সরকার ২০১৯ অর্থবছরে রাজস্বের ৩.৫ গুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। যা ফিচ র্যাংকিং-এর বিবি বিভাগের দেশগুলোর মিডিয়ান মাত্রার (১.৬ গুণ) দ্বিগুণেরও বেশি।
এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, চাপে থাকা ঋণের পরিমাণ হয়তো যতটা বলা হয় তার চেয়েও বেশি। এ ছাড়া সরকারি ব্যাংকের অবস্থা গুরুতর। তবে পরিস্থিতি কম ক্ষতিকর হয়েছে এই কারণে যে, দেশের বেসরকারি খাতের ঋণের সামগ্রিক হার অনেক কম, জিডিপি’র ৩৭ শতাংশ। দুর্বল পরিচালন মান, সহজে ব্যবসা করার সূচকে খারাপ অবস্থাও নেতিবাচক হয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) বলছে, দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করা দরকার। সংস্থাটি বলেছে, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিনিয়োগের লক্ষ্য হচ্ছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলার। মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতির যৌক্তিক পদ্ধতিগত উন্নয়ন ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বিল্ড মনে করে, সাধারণত ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ তখনই বৃদ্ধি পায়, যখন ব্যাংক বিভিন্ন কোম্পানি ও বেসরকারি খাতে বেশি ঋণ দেয়। কিন্তু বেসরকারি খাতে ঋণ প্রদানের হার দীর্ঘ সময় ধরে কমছে। এর কারণ বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাব।
Check Also
ডিসেম্বরের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এল ২ বিলিয়ন ডলার
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে ২০০ কোটি মার্কিন (২ বিলিয়ন) ডলারের …