: ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ
২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নব-নির্বাচিত আমীর ডা. শফিকুর রহমান শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথ শেষে দেশবাসী ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য দিয়েছেন। দলের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
তার বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো। “আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।
সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। কঠিন সময়েও তার রহমতের দুয়ার আমাদের জন্য অবারিত রেখেছেন। আপনারা ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে আমাকে এ সংগঠনের আমীর নির্বাচিত করেছেন। দেশ ও জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর মতো আদর্শবাদী, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও জনপ্রত্যাশিত একটি প্রগতিশীল দলের দায়িত্ব পালনে আমি আমার প্রিয় দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা, আন্তরিক দোয়া এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার একান্ত সাহায্য ও রহমত কামনা করছি।
আজ আমি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি জনাব মকবুল আহমাদের প্রতি, যিনি এক কঠিন ক্রান্তিকালে আমীরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আজীবন আমাদের হৃদয়ে অভিভাবক হিসেবে থাকবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর নেক হায়াত দারাজ করুন এবং তাঁর সকল দ্বীনি খেদমত কবুল করুন।
আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই সমস্ত মহান ব্যক্তিদের যারা যুগে যুগে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ, মানবতার মুক্তি ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবন দান করেছেন। বিজয়ের এই মাসে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদ ও সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের বীরত্ব, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেছি। শ্রদ্ধার সাথে বিশেষভাবে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি জনাব শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে।
আমি আরো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, ভাষা সৈনিক ও ডাকসু’র সাবেক জিএস প্রফেসর গোলাম আযম, সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীকে যারা ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাঁদেরকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তাদের শাহাদাত কবুল করুন। সেই সাথে স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফকে; যিনি দীর্ঘদিন সরকারি নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি আরও স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীল নায়েবে আমীর অধ্যাপক একেএম নাজির আহমাদকে; যিনি দীর্ঘদিন সরকারী নির্যাতনের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। সেই সাথে গভীর মর্মবেদনা নিয়ে স্মরণ করছি জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সেই সমস্ত ভাই ও বোনদের যারা দ্বীন কায়েমের এই সংগ্রামে শাহাদাত বরণ করেছেন।
আমি শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, পাঁচ বারের নির্বাচিত সাবেক এমপি মাওলানা আবদুস সুবহান, বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন, সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে যারা সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘ নয় বছর যাবত কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জননন্দিত এই রাজনৈতিক নেতাদের সরকার যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করেছে।
সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্রীসংস্থাসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মাসের পর মাস জেলখানায় আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বহু সংখ্যক নেতা ও কর্মীকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে অনেককে পঙ্গু করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আল আযামী, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ওয়ালিউল্লাহ, আল-মুকাদ্দাস, হাফেজ জাকির হোসেন, মুহাম্মাদ রেজওয়ান হোসেনসহ বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। তাদেরকে পরিবারের কাছে অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলের সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
প্রিয় দেশবাসী,
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু আজ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে কিছু নেই। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। মিছিল-সমাবেশসহ সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যত নিষিদ্ধ। বর্তমান সরকার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন নজীরবিহীনভাবে একযোগে মহড়া দিয়ে মধ্য রাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। যেহেতু ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়েছে, তাই জনগণের প্রতি তারা কোনো দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা করে না। দেশপ্রেমিক জনগণের নিকট এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার।
সচেতন দেশবাসী,
দীর্ঘদিন জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় দেশে এখন চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ জনজীবনকে অতীষ্ঠ করে তুলেছে। সরকারি ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নামধারী ক্যাডাররা দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল তৈরি করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। এরকম বহু আবরারের জীবন টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে ধ্বংসের মুখোমুখি। হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিরোধী মত দমনে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণের পরিবর্তে আদালতে দৌঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রিয় দেশবাসী,
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পিঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। অপরদিকে কৃষিপণ্য ও চামড়ার নায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক-জনতা। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুট হচ্ছে হরহামেশা। জনগণের হাতে টাকা নেই; নেই কর্মসংস্থানও। ব্যবসার অবস্থা করুণ। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দলীয় লোকদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-আত্মসাৎ, মদ-জুয়া, ক্যাসিনো দেশকে গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এবং অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ প্রতিনিয়ত বাইরে পাচার হচ্ছে। যা দেশের গোটা অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক অশনি সংকেত।
দুনিয়ায় মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বিচারাঙ্গণের অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকার কর্তৃক একজন প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার নজীরবিহীন ঘটনাই প্রমাণ করে বিচারাঙ্গণের চরম দুরবস্থার কথা। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা অনুপস্থিত।
দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ আজ অবহেলিত। সংস্কৃতির নামে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে জোরপূর্বক জাতির ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার বাস্তব প্রমাণ খুন, গুম ও ধর্ষণসহ নির্বিচারে পিটিয়ে মানুষ হত্যা।
প্রিয় দেশবাসী,
সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যার আশু সমাধানের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু ভারত অন্যায় ও অযৌক্তিভাবে সে দেশের লোকদের সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। ফলে বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন।
প্রায় ৫ শত বছরের পুরোনো বাবরী মসজিদ সম্পর্কে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা ভারতের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা আশা করি ভারত সরকার বাবরী মসজিদটি পূর্বের স্থানে পুনরায় নির্মাণ করে সে দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় মৌলিক অধিকারের প্রতি সুবিচার করবেন। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান, চীনের উইঘুর মুসলমান, আফগানিস্তান, মিশর, ইরাক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর চরম জুলুম-নিপীড়ন চলছে। এ সব সমস্যার যথাযথ সমাধান খুঁজে বের করে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি ওআইসি, জাতিসংঘসহ সকল শান্তিকামী রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি অপার সম্ভাবনার একটি দেশ। জামায়াতে ইসলামী এ দেশকে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এ লক্ষ্যেই জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত তার জন্মলগ্ন থেকেই সুশিক্ষা, চিকিৎসা, বেকারত্ব দুরীকরণ ও যুব সমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যা দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন। দেশ ও মানুষের কল্যাণে জামায়াতের গঠনমূলক তৎপরতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে-ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত সুধী সমাজ,
জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠন পরিচালনা ও গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে আসছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বসবাস করছে। আমরা একটা আদর্শ লালন করি। সেই সাথে ভিন্নমতের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। সন্ত্রাস ও চরমপন্থার ঘোরতর বিরোধী আমরা। আমরা যেনতেন উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষপাতি নই। জামায়াতে ইসলামীকে খোলামনে জানতে এবং মূল্যায়ন করতে আপনাদের প্রতি সবিনয় আহবান করছি। জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি বা জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের সাথে সরাসরি আলাপ করতে এবং আমাদের বিপুল সাহিত্য ভা-ার ও প্রকাশনা থেকেও ধারণা নেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি। আমরা সবার সাথে মত বিনিময়ে আগ্রহী। আপনাদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা, পরামর্শ ও সহযোগিতা আশা করছি।
প্রিয় সংগঠনের সহকর্মী ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও জামায়াত তার সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, ত্যাগ-কুরবানীর বিনিময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। শহীদদের চুড়ান্ত কুরবানী, জেল-জুলুম-নির্যাতন এ আন্দোলনকে মজবুত করেছে। ইসলামী আন্দোলন হচ্ছে রাসূল (সা.) এর দেখানো পথে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে মহান আল্লাহ তা’য়ালার বিধান প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম। ইসলামের আলোকে নিজেকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি এই সুমহান আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
“তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখবে।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০)
মনে রাখতে হবে, পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতরা আগে দাওয়াত পাওয়ার হকদার।
গ্রাম-গঞ্জে ও শহরে সর্বত্রই সংগঠনকে মজবুত করার জন্য আমাদেরকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জামায়াতে ইসলামীর কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। প্রতিটি শাহাদাতের ঘটনা জামায়াতের প্রতি জনগণকে সহানুভূতিশীল করেছে। যতই জুলুম-নির্যাতন চালানো হোক না কেনো, ইসলামী আন্দোলনকে উৎখাত করা সম্ভব নয়। পবিত্র কালামে হাকীমে বলা হয়েছে-
‘এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। অস্বীকারকারীরা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা আস সফ-৮)
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তষ্টি এবং পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ কাজকে সকল কাজের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে জামায়াত নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং ধৈর্য ধরার আহবান জানাচ্ছি। উদার ও প্রশস্ত মন নিয়ে সর্বস্তরের জনশক্তি এবং সাধারণ মানুষের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। শুধু জামায়াত নেতা-কর্মীরাই আজ মজলুম নন, দেশের সর্বস্তরের জনগণই নির্যাতনের শিকার। মজলুম মানুষের কাছে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মনোভাব নিয়ে ছুটে যেতে হবে। বিভিন্ন বিপদ-আপদ ও দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের নিকট জামায়াত নেতা-কর্মীদের বরাবরের মতো সবার আগে পাশে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র পার্থিব সফলতা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নিকট বিবেচ্য বিষয় নয়। পরকালের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। আন্দোলনের সাফল্যের ব্যাপারে ধৈর্য্যরে সাথে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। মৌলিক মানবীয় গুণাবালী ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে সকলের মন জয় করে নিতে হবে। মৌলিক ইবাদতে আরও নিষ্ঠার পাশাপাশি নফল ইবাদাত বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ, নফল রোজা, সাধ্যমত মানুষের কল্যাণে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় ও সার্বক্ষণিক দোয়া-জিকিরের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’য়ালার সাথে আমাদের সম্পর্ককে কাঙ্খিত মানে উন্নীত করতে হবে। সফলতার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’য়ালার হেদায়েতকে ধারণ করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। পবিত্র আল-কুরআনে বলা হয়েছে-
“হে ঈমানদানগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবলায় দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আল-ইমরান: ২০০)
প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশ আমাদের সকলের। এদেশে যেসব সমস্যা বিরাজমান সেগুলোর সমাধান সকলে মিলে করবো-ইনশা আল্লাহ। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি ঐক্য না থাকে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির বদলে অন্য কোনো পন্থায় যদি দেশ পরিচালিত হয় তাহলে স্বপ্নের বাংলাদেশ পাওয়া তো দূরের কথা, স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জুলুম-নির্যাতন সত্ত্বেও শত প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে রাজপথে প্রতিবাদ মুখর থেকেছে। আগামী দিনেও সবাইকে সাথে নিয়েই জামায়াতে ইসলামী দেশ গড়ার রাজনীতি অব্যাহত রাখবে-ইনশাআল্লাহ। তাই ক্ষমতাসীনসহ সকল রাজনৈতিক দল ও মহলের প্রতি আমার আহবান, আসুন দেশপ্রেম ও ইসলামী চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাই। বৃহত্তর কল্যাণে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা করি। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে গিয়ে বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা, ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমীন॥