ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ কালিগঞ্জের পাউখালী এলাকায় বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনায় জড়িত ছিনতাই চক্রের দুই সদস্য সাইফুল ও দীপ নিহত হওয়ার পর থেকে শ্যামনগরের ত্রাস মামুন, হাফিজুর এবং মোস্তফা গা ঢাকা দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর সাতক্ষীরার সাউথ ইষ্ট ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে শ্যামনগরে ফেরার পথে পাউখালী এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে এসে টাকা বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের গতিরোধ করে দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ছিনতাইকরীরা। এসময় বিকাশ এজেন্টদের কাছে থাকা ২৬ লাখ টাকা নিয়ে তারা আশাশুনির দিকে চলে যায় এবং অপর একটি মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী চক্রকে নিরাপদে সটকে পড়তে সহায়তা করে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কালিগঞ্জের পাউখালী এলাকায় বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনার পর জড়িত দুই ছিনতাইকারী পুলিশের সাথে গত ৩০ নভেম্বর বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর থেকে শ্যামনগরের আলোচিত মামুন-হাফিজ-মোস্তফা গ্যাং স্টার গ্রুপের কোন সদস্যকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া দীপ ও সাইফুল নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মামুন তার দুই সহযোগী হাফিজ ও মোস্তফাকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ৩০ নভেম্বর সকালেও মামুনকে তার দুই সহযোগীসহ শ্যামনগরের কলবাড়ি ও নীলডুমুর এলাকায় দেখা গিয়েছিল। এক পর্যায়ে দীপ ও সাইফুল বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে কিছুটা বিচলিত হয়ে মামুন তার নিজ মোটরসাইকেলযোগে নওয়াবেঁকীর দিকে রওনা হয় এবং মোস্তফা এবং হাফিজকে অন্য কোন স্থানে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
একটি সূত্র জানায়, দীপ ও সাইফুল নিহত হওয়ার খবরে বেসামাল হয়ে পড়ায় মামুন ও হাফিজ পথিমধ্যে নিজেদের মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনারও শিকার হয়।
মামুনের ঘনিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে, কলবাড়ী থেকে মামুন সরাসরি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার অভিমুখে রওনা দেয়। তবে তার দুই প্রধান সঙ্গী হাফিজ এবং মোস্তফা কোথায় আত্মগোপনে গেছে সে বিষয়ে কেউ কোন তথ্য দিতে পারেনি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শ্যামনগরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল ইসলাম ওরফে ডরমেটর পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর কিছুদিন গোটা এলাকা ঠান্ডা ছিল। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক হাফিজুর রহমান এবং বাদঘাটা ইয়ংস্টার ক্লাবের সভাপতি ও মাদক সেবনের অভিযোগে সদ্য উপজেলা যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত হওয়া গোলাম মোস্তফার সাথে মিলে গত উপজেলা নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও কেনা বেঁচা আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তাদের নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়।
সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ এই ত্রি-ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস পেত না।
উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ আল মামুনের পিতা বাদঘাটা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল বাকি সোর্স হিসেবে চোরাকারবারীদের কযেকটি কোটি টাকার চালান ধরিয়ে দেয়ার কারণে প্রায় দশ বছর পূর্বে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। এছাড়া বাদঘাটা গ্রামের কুদ্দুস আকন্দের ছেলে গোলাম মোস্তফা জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে নানা প্রকারের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। এছাড়া গোপালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে হাফিজও এলাকায় উঠিত সন্ত্রাসী হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ নাম-ডাক করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ আল মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ‘নি’ আদ্যক্ষরের একটি মেয়ের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঐ মেয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বিধায় তারা বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করলেও দীর্ঘদিন ‘লিভ ইন’ করে আসছে। যা ছেলে ও মেয়ের পরিবারের সবাই জানে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিবাহিত হলে সংগঠনের পদ হারাতে হওয়ার আতংকের কারনে তারা নিজেদের বিয়ের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঐ নেত্রীর প্রভাবে মামুন গত কয়েক মাস আগে শ্যামনগরে ফিরে এসে কলবাড়ী এলাকায় একটি ছোট কাঁকড়ার প্রজেক্ট করে। স্থানীয়দের দাবি কাঁকড়ার প্রজেক্ট তার আইওয়াশ। মূলত সে ঐ প্রজেক্টকে তার আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করতো। ইতোপূর্বে তার মা মামুনের এমন কর্মকান্ডের বিরোধীতা করায় চাচাদের সাথে যোগসাযশে নিজ মাকেও সে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল বলেও স্থানীদের দাবি।
ছোট বেলা থেকে ভাল স্বভাবের ছেলে হিসেবে গড়ে উঠলেও তার প্রেমিকা (স্ত্রী) এর প্রভাবের কারণে মামুন গত কয়েক বছরে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেন বলে খোদ স্থানীয়দের দবি। স্থানীয়দের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলবাড়ীর আস্তানাসহ শ্যামনগর উপজেলা সদরের পশু হাসপাতালের ভিতরে হাফিজ ও মোস্তফাসহ অন্যদের নিয়ে সে সার্বক্ষনিক ইয়াবার আসর বসাতো।
এছাড়া স্ত্রী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেত্রী হওয়ার বিষয়টিকে পুঁজি করে মামুন পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অসংখ্য মানুষের নিকট থেকে তিন থেকে সাত লাখ পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মামুনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাফিজ এক ডজন মামলার আসামী হলেও আজ পর্যন্ত কখনও পুলিশের হাতে আটক হয়নি। ছিনতাই রাহাজানির পাশাপাশি হরিনগর নদীর চরে শাহাজালাল নামের এক যুবককে মেরে মাটিতে পুতে রাখাসহ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট মাসুদুল আলম দোহাকে চন্ডিপুর এলাকায় বেধড়কম মারপিটসহ স্থানীয় এক বাড়িতে নাবালিকা শিশুকে আটকে রেখে ধর্ষণসহ নানা ধরণের অপকর্ম করে সে বার বার পার পেয়ে যায়। আর মোস্তফা মামুন এবং হাফিজের ফরমায়েস খেটে তাদের যাবতীয় অপকর্মে সহায়তা করে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে মামুন, হাফিজ ও মোস্তফাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কাছে থাকা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগ রয়েছে এ ত্রি-ত্রাসের তত্ত্বাবধানে গোপালপুর, বাদঘাটা, হায়বাদপুর, নুরনগর ও মাহমুদপুর এলাকায় যাবতীয় মাদক বেচা কেনা হয়। স্থানীয়রা অবিলম্বে শ্যামনগরের এই তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রেপ্তারপূবর্ক আইনের আওতায় এনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।