ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ দেশে আইন, আদালত ও সংবিধান কোনটাই কার্যকর নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। আজ বুধবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমানের আদালতে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন ঢাবি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহসভাপতি (ভিপি) মোজাহিদ কামাল উদ্দিন। আদালত এ বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী এনামুল হক রুপম। বাদীপক্ষের অপর আইনজীবী হলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি মোজাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, নুর ছাত্র সংসদের ভিপি পদটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন অনৈতিক সুপারিশ, তদবির বাণিজ্যসহ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
তার প্রতিক্রিয়ায় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, কী পদক্ষেপ নেব সেটি বুঝতে পারছি না। যেখানে আপনারা জানেন বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রেখেছে সরকার। কারণ সরকার চেয়েছে। সুতরাং এখন সরকার যদি চায় যে ডাকসুর ভিপিকেও জেলে ভরা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকার কিন্তু নানা ধরনের ইস্যু তৈরি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আমি যতই চেষ্টা করি না কেন। আমি কিছু করতে পারব না। কারণ সরকার তো এদেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
যাদেরকে তাদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হচ্ছে ভেরিয়ার বা বাঁধা মনে হচ্ছে তাদেরকে দমন করার জন্য নানা অপকৌশল ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে এই সরকারের যে স্বৈরতন্ত্র, যে গণতন্ত্রকে নিঃশেষ করে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিল সেটি তুলে দিয়েছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে এই দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েমের জন্য একটি মেগা প্লান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিল। তারপরে নির্বাচন তো এখন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারে না। মানুষের ভোট ছাড়াই আজকের সরকার ঠিকে আছে। আওয়ামী লীগের লোক ছাড়া কেউ ভোট দেয়নি। সুতরাং এখন রাজনৈতিকভাবে তো কোন শক্ত প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। সেখানে আমরা যে ছাত্র সমাজ বিশেষ করে ২০১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে সরকারের অন্যায় নিয়ে আমরা কথা বলছি। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। সে আন্দোলনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন ছিল। যা ছিল যৌক্তিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন। সে আন্দোলনকে সরকার ভয় পেয়েছিল। কারণ তাদের তো মনে আছে যে এই দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েমের জন্য কাজ করছে তারা। তখন তারা প্রচার করেছিল যে এটি একটি সরকার বিরোধী আন্দোলন। সে কারণে তাদের যে সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ তাদেরকে দিয়ে সে আন্দোলনগুলোতে হামলা চালিয়েছে। আমরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দেখেছি হেলমেট বাহিনী। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেখেছি হাতুড়ি বাহিনী। তখন ছাত্র লীগ যে ভুমিকা পালন করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে রাশেদ খান, মাহফুজুর রহমান, আতাউল্লাহসহ আরো অনেক ছাত্রকে মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল।কারণ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল সেই আন্দোলনকে থামানো, আন্দোলনকে দমন করা।
ভিপি নুর বলেন, দীর্ঘদিন পরে যখন ডাকসু নির্বাচনে আসলো, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। যখন গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোট কিংবা সরকার যখন দেখল যে নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জয়লাভ করতে যাচ্ছে। তখন পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো শুরু করলো। যেটা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছড়িয়ে ছিল যে ১২৫ কোটি টাকা তারেক রহমান দিয়েছে আন্দোলনের পেছনে। সেখানে ২৫ টাকাও কিন্তু তারা কোন অবৈধ লেনদেনের তথ্য প্রমাণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে আমরা দেখেছি শিবিরের প্যাডে বিবৃতি বানিয়ে আমাদের নামে প্রচার করেছে যে শিবিরে সমর্থন আমাদের রয়েছে। এই ধরনের অপপ্রচার এবং প্রোপাগান্ডা যখন রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেই চালায় এবং রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কোন গোষ্টিকে ব্যবহার করে চালায় তখন তার বিরুদ্ধে ফাইট করা বা প্রমাণ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমাদের নৈতিক শক্তি রয়েছে। আমরা জানি এদেশের সাধারণ মানুষ ও ছাত্র সমাজ আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদেরকে ভালবাসে। আমাদের প্রতি তাদের সমর্থন ও তাদের প্রতিও আমাদের সমর্থন রয়েছে। সেই জায়গাটায় আমাদের বিশ্বাস, যে আমাদের যদি এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকার যে কোন ধরনের নিপিড়ন চালায়, নির্যাতন চালায়, অতীতের মতোই সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। আমাদের পাশে দাঁড়াবে।
ডাকসু ভিপি বলেন, আমরা বলছি এই দেশের আদালতে আমাদের কোন বিশ্বাস নেই। কারণ আমরা দেখেছি ডাকসুর ভিপিকে পাসপোর্ট পর্যন্ত দেয়া হয় না। কারণ সরকার আটকে রেখেছে। সেখানে আদালতে গিয়ে কি আমি ন্যায় বিচার পাবো?
আদালতে আমি যাব অমুকের কাছে দৌড়াব, তমুকের কাছে দৌড়াবো এটা হচ্ছে টাইম লস এবং প্রহসন। আজকে যদি আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতো, তাহলে আমি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারতাম।
তিনি বলেন, যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতি অবিচারের শিকার। আমরা দেখেছি, দেশবাসী দেখেছে তাকে জোর করে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দেশে ন্যায় বিচার আশা করা এবং এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের কাছে জনকল্যাণ মূলক কিছু আশা করাটাই খুবই দুরহ ব্যাপার। আজকে শুধু ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা ডাকসুর ভিপি নয়, প্রত্যেকটি ভিন্ন মতের মানুষ যাদের সাথে সরকারের যোগাযোগ নেই লিয়াজো নেই তারা নির্যাতন-নিপিড়নের শিকার হচ্ছে। এখানে আমাদের আহ্বান জনগণের কাছে। জনগণ যেন এই সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
নুরুল হক নুর বলেন, এখন আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ছাত্রলীগের একজন নেতা। যার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। ভর্তাবাড়ি নামে বকশিবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে ফাও খাওয়ার অভিযোগ। আজকে ডাকসু ভিপির পদত্যাগ নিয়ে যে পানিঘোলা করছে যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি তথাকথিত সংগঠন। যেটি আবার দু’টি অংশে বিভক্ত। তাদের নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়েই। একাংশের যে আহ্বায়ক আকম জামাল উদ্দীন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের একজন বিতর্কিত শিক্ষক। তিনি ডাকসুর কর্মকর্তাদের নিয়ে কাজ করেছেন সেখানে তাদের টাকা দেননি। নীলক্ষেত থেকে কাজ করেও তিনি টাকা পরিশোধ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে এসবের লিখিত অভিযোগ ছিল।
আরেক অংশের নেতা আল মামুন, বুলবুল সহ আরো অনেকে আছেন। তারা হত্যা মামলার আসামি। তাদের পিস্তলসহ সেসব ছবি পেপারে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চটি মূলত ছাত্রলীগের একটি অংশ। ছাত্রলীগের মধ্যে যারা উশৃংখল এবং বহিষ্কৃত তারাই এই সংগঠন করে। ছাত্রলীগের যখন প্রয়োজন হয় তখন তারা এই সংগঠনকে ব্যবহার করে। যাতে ছাত্রলীগের নামটা না আসে।
তারা যে পানিঘোলা করার চেষ্টা করছে, ডাকসুর ভিপি চাঁদাবাজি করেছে, টেন্ডারবাজি করেছে, অনিয়ম করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। এখানে স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্র পৃষ্টপোষকতা করছে। জনগণের শক্তি সামর্থ যদি আমাদের পাশে না থাকে সেখানে তাদের সমর্থন ছাড়া আমাদের আর কোন ভরসা নেই।
আইনগতভাবে যে আমরা কোন প্রতিকার পাব, তা আমরা বিশ্বাস করি না। দেশে আইন আদালত সংবিধান কোনটাই কার্যকর নেই।