ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ মিয়ানমারের কার্যত শাসক এবং দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুচি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর গণহত্যার বিষয়ে তার দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তিনি আজ (বুধবার) ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন এবং এসময় তার দেশের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে তিনি বলেন, “আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তা ভুল। রাখাইন রাজ্যে যে অভিযান চালানো হয়েছে তা ছিল ক্লিয়ারেন্স অপারেশন।” তিনি দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যের পুলিশ ফাঁড়িতে গেরিলাদের হামলার জবাবে ওই অভিযান চালানো হয়।
হেগের আদালতে সুচি তার ভাষায় ‘ভুল এবং বিভ্রান্তিকর’ কর্মকাণ্ডের জন্য গাম্বিয়াকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, “এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে উঠতে পারে না।”
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলমান
অং সাং সুচি দাবি করেন, যদিও অনেক বেশি মাত্রায় সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং বেসামরিক লোকজন মারা গেছে তবে তাকে গণহত্যা বলা যায় না। তিনি দাবি করেন, “অযৌক্তিকভাবে যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা এবং শাস্তি দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এসব ঘটনাকে কী গণহত্যা বলা যায়?”
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বর গণহত্যা চালায়। হত্যাকাণ্ডের মুখে টিকতে না পেরে সেখান থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কোনমতে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। জাতিসংঘ বিষয়টি তদন্ত করেছে এবং এরইমধ্যে ওই ঘটনাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। তারপরও অং সাং সুচি একে গণহত্যা বলতে নারাজ। অথচ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল।
—–0———
তার দেশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। উল্টো তিনি গাম্বিয়ার মামলাকে ‘ভুল দিকনির্দেশক’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে বুধবার নোবেলবিজয়ী সু চি বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ হয়তো উড়িয়ে দেয়া যায় না, তবে তার পেছনে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল- এমন ধরে নেয়াটাও মিয়ানমারের জটিল বাস্তবতায় ‘ঠিক হবে না’।
বক্তব্যের শুরুতে সু চি আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, গণহত্যার উদ্দেশে অভিযান পরিচালনার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনোভাবেই মেনে নেবে না আমাদের সরকার। যখন দেশের বিচার ব্যবস্থা ব্যর্থ হবে, শুধু তখনই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এর বিচার করতে পারবে।
তিনি বলেন, যেসব সেনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এমন কোনো কাজ করে থাকে; যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাহলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।
মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ এই আদালতে সাবেক গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানায় মামলার বাদী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রক্তাক্ত এক সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত এই অভিযানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়। প্রাণে বাঁচতে সেই সময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদে মুসলিম দেশ গাম্বিয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের উৎসাহে গণহত্যার দায়ে মামলা করে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে।