ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: শ্যামনগর প্রতিনিধি: পশ্চিম সুন্দরবনের বেহালা মরাখাল নামীয় অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ শিকারের সময় বুধবার দুপুরের দিকে মুন্সিগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ১৩টি নৌকাসহ ৩৩জন জেলেকে আটক করেছে। আটককৃতরা সবাই কয়রা এলাকার জনৈক কামরুল কোম্পানীর প্রধান কামরুল ইসলামের নৌ-বহরের জেলে হিসেবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে মাছ শিকারের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিল। আটককৃতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে সিরাজুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, কোরবান আলী, ইমান আলী, বিল্লাল হোসেন, মনিরুল ইসলাম (২), ইউনুস গাজী, আব্দুল মালেক, হাসান শেখ, মাওলা বকস, আবু হানিফ, আফাজ উদ্দীন, শফিকুল ইসলাম, রবিউল গাজী, রবিউল গাইন, হারুন গাইন, ইফাজ ও মনিরুল (৩) আব্দুর রহিম, শাহাজান, হামিদ, মনিরুল (৪), রব্বানী ও আবুল হোসেনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা সকলেই খুলনার কয়রা এবং দাকোপ, আমতলা, মহেশ^রীপুর, গিলমারী এবং পানখালী এলাকার বাসিন্দা।
নৌ-পুলিশ খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়া উদ্দীন আহমেদ জানান, বনদস্যু জিয়া বাহিনীল হাতে অপহৃত এক জেলেকে উদ্ধারে মুন্সিগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে বুধবার বেলা বারটার দিকে তারা নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত বেয়ালা মরা খালের মধ্যে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা দেখতে পেয়ে চ্যালেঞ্জ করে নৌকাটি আটক করে। এসময় তারা কামরুল কোম্পানীল হয়ে অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ শিকারে এসেছে এবং তাদেও সাথে থাকা আরও ১৩টি নৌকার তথ্য দেয়। এসময় নৌ-পুলিশ সদস্যরা বনবিভাগের সহায়তা নিয়ে অপরাপর নৌকাসহ মোট ৩৩ জেলেকে আটক করে। এসময় তাদের নিকট থেকে ১৫০টি কাঁকড়া শিকারের আটল, ত্রিশটি ব্যবহার নিষিদ্ধ বড় জাল এবং বেশকিছু পরিমান মাছ উদ্ধার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহমদ আরও জানান, আটককৃতদের বনবিভাগের হাতে হস্তান্তরের পর তারা ঐ জেলেদের বিরুদ্ধে অভয়ারণ্য এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে নিয়মিত মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করবে।
আটককৃত জেলে হামিদ ইফাজসহ অনেকেই জানান, নির্দিষ্ট স্থানে মাছ বেশি না পাওয়ার কারণে মালিক তাদেরকে অভয়ারণ্য যাওয়ার জন্য পরার্মশ দেয়। বনবিভাগের সাথে তার চুক্তি থাকার কথা বলে তাদেরকে প্রায়ই কারমরুলসহ অন্য মালিকরা তাদের অভয়ারণ্য এলাকায় যেতে উৎসাহ যোগায়।
এসব জেলে স্বীকার করেন যে তারা কোবাদক স্টেশন থেকে বনে প্রবেশের অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু বিধি মেনে সেখানকার কোন বনকর্মী তাদের নৌকা জাল দড়া পরীক্ষা যেমন করেনি তেমনী অভয়ারণ্য যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কথাও জানায়নি। তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কোবাদক স্টেশনের অফিসার বেলাল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে পশ্চিম বনবিভাগের কদমতলা স্টেশন অফিসার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে কামরুল কোম্পানীর নামে বিএলসি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় যেয়ে গর্হিত অপরাধ করেছেন। আগামীতে কারুল ইসলামসহ তার সহযোগী জেলেদের নাম কালো তালিকাভুক্ত করা থাকবে এবং তাদের নামে নুতন করে কোন বিএলসি দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, এর আগেও কামরুল কোম্পানীর বিরুদ্ধে সুন্দরবনে দস্যুদের লালন পালনের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ কামরুল কোম্পানীর জেলেরা যে এলাকায় মাছ কাঁকড়া শিকারে যায় সেখানে অন্য কাউকে প্রবেশে সতর্ক করা হয়। কিন্তু সতর্কতায় কোন কাজ না হলে পরবর্তীতে বনদস্যুদের ব্যবহার করে ঐসব জেলেদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ বনকর্মী জেলেদের সুন্দরবনের অভয়ারন্য এলাকায় প্রবেশের সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে। যে কারণে মাঝেমধ্যে নৌ-পুলিশ বা বনকর্মীদের অভিযানে দু’একটি চালান আটক হলেও চুক্তির ভিত্তিতে কিছু অসাধু বনরক্ষীর সহায়তায় কামরুলের মতো অনেক জেলে অভয়ারন্য এলাকায় যেয়ে মাছ কাঁকড়া শিকার করে।
এদিকে প্রতিবেদকের সাথে মুটোফোনে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম জানান, আমি আমার ব্যবসা আর একজনকে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আটককৃত জেলেরা কেন আমার নাম বলছে তা আমার বোধগম্য নয়।
Check Also
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন প্রবাজপুর শাহী মসজিদ: সংস্কার না হওয়ায় ধ্বংসের আশঙ্কা, ৫০বিঘা জমি বে-দখলে, পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে …