জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ আখ্যা দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার অফিস ঘেরাও, ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের প্রাচীনতম পত্রিকা দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে পত্রিকাটির প্রধান কার্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। এসময় পত্রিকার কম্পিউটারসহ প্রকাশনার সমস্ত যন্ত্রাংশ অচল করে দেয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হামলাকারীরা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে পত্রিকাটির অফিসের বার্তাকক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে ব্যাপক ভাংচুর করে। তাণ্ডব চলাকালে সংবাদকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে অসহায়ের মতো অবস্থান করেন। তারা পত্রিকাটির সম্পাদকের কক্ষ, বার্তাকক্ষ, চীফ রিপোর্টারের কক্ষ, সম্পাদনাসহকারী, সহ-সম্পাদকের কক্ষসহ প্রতিটি কক্ষে তাণ্ডব চালায়। ভাংচুরের পর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকে জোরপূর্বক অফিস থেকে ধরে বাইরে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে পুলিশ তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ এই সম্পাদক হাতিরঝিল থানা হেফাজতে ছিলেন বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। পত্রিকা অফিসে প্রকাশ্যে বর্বর হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টা থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে দৈনিক সংগ্রাম মগবাজারে কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এর আগে বিকাল থেকে ৫০/৬০ জন যুবক মগবাজার ওয়ারলেস রেল গেট সংলগ্ন সংগ্রাম অফিস ঘেরাও করে হুমকিমূলক স্লোগান দেয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির নামে সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল-মামুনের নেতৃত্বে এ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পত্রিকার সাংবাদিকরা যখন প্রতিদিনের মতো সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য কর্মব্যস্ত ঠিক তখনই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গেট ভেঙে অতর্কিতে তারা অফিসে প্রবেশ করে। এসময় সংবাদ কর্মীরা ভয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে রড-লাঠি ছিল। অফিসে ঢুকে প্রথমেই তারা সম্পাদককে খুঁজতে থাকে। এরপর তারা রড-লাঠি দিয়ে একে একে সব কয়টি কক্ষে ভাংচুর চালায়।  হামলাকারীরা ৫৮টি কম্পিউটার, ৩টি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, পত্রিকার সার্ভার, প্রিন্টার, দরজা-জানালা আসবাবপত্র ভাংচুর করে। পত্রিকা অফিসের ভেতরে তারা প্রায় একঘণ্টা ধরে এ তা-ব চালায়। এছাড়া কক্ষগুলোতে থাকা চেয়ার-টেবিল, টেলিভিশন, এ্যালুমেনিয়ামের দরজা-জানালায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় কয়েকজন হামলাকারী সম্পাদক আবুল আসাদকে টেনে হেঁচড়ে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত তার কক্ষ থেকে অফিসের বাইরে নিয়ে যায়। তার সাথে থাকা সহকারী মো. কামরুজ্জামানকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। হামলাকারীরা প্রবাীণ এই সম্পাদককে বিভিন্ন মিডিয়ার সামনেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তাকে জোরপূর্বক নানা ধরনের বক্তব্য দিতে বাধ্য করে তারা।

হামলার পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল দাবি করেন, পত্রিকাটি দেশের শহীদদের অবমাননা করে খবর ছাপিয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে।  এ ব্যাপারে দৈনিক সংগ্রামের প্রধান প্রতিবেদক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী জানান, প্রকাশিত কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তারা নিয়ম মোতাবেক প্রতিবাদ দিতে পারেন। কিন্তু তা না করে পত্রিকা অফিসে জোরপূর্বক ঢুকে হামলা ভাংচুর ও আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। এটা অন্যান্য গণমাধ্যমের জন্যও হুমকি। তিনি বলেন, যে খবরটির ব্যাপারে হামলাকারীরা আপত্তি জানিয়েছেন সেই ধরনের খবর গত ৫ বছর ধরেই ছাপা হচ্ছে। এর আগে তারা কখনো প্রতিবাদ করেনি, পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি।

 

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের শতাধিক কর্মী সংগ্রাম কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। তারা কাউকে পত্রিকা কার্যায়ে প্রবেশ বা বের হতে দেয়নি। পরে এক পর্যায়ে বড়মগবাজারের আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে যায় তারা। তারা ভবনের বার্তা কক্ষ, সম্পাদনা কক্ষ, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের কম্পিউটার, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাংচুর ও তছনছ করে’। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, আমরা খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের টিম পাঠিয়েছি। হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশীদ জানান, ‘কারা ভাংচুর করছে সেটা নিয়ে পরে কথা বলব।’

——-০———

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ   সম্পাদককে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে’।একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে শহীদ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দৈনিক সংগ্রামের অফিস ভাংচুর ও লুটপাট ও সাংবাদিকদের মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পত্রিকা কার্যালয়ের ভেতরে ভাঙচুর করে।পরে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে মারপিট করে তারা   পুলিশে তুলে দেয় । এছাড়া পত্রিকার কার্যালয়ে তালাও দেন তারা।

শুক্রবার বিকাল থেকে সংগঠনটি মগবাজারে অবস্থিত দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। এসময় পত্রিকাটির কয়েকটি কপি আগুনে পোড়ানো হয়। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিক্ষুব্ধরা দৈনিকটির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ বলার মাধ্যমে তারা দেশের শহীদদের অবমাননা করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। আমরা চাই সরকারিভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হোক। আমরা পত্রিকার মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।’

পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমরা আহ্বান জানিয়েছি, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পত্রিকাটি বন্ধ ও এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।

এদিকে হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘খবর পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’

ঢাবিতে দৈনিক সংগ্রাম পোড়ালো ছাত্রলীগ: কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে খবর প্রকাশের প্রতিবাদে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা পুড়িয়েছে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে দৈনিক সংগ্রাম।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রানা হামিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দীন, সাবেক পরিবেশ বিষয়ক উপসম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিব, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ, ঢাবি ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজী প্রমুখ।

দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদককে পুলিশের কাছে তুলে দেয় বিক্ষোভকারীরা
দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদককে পুলিশের কাছে তুলে দেয় বিক্ষোভকারীরা

ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিব বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লাকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দৈনিক সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। যাকে কসাই উপাধি দেওয়া হয়েছে সেরকম একজন মানুষকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে আমরা মনে করি এই পত্রিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, প্রশাসন যেন এ পত্রিকার সম্পাদক, রিপোর্টারসহ যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

হাতিরঝিল থানার এসআই সুব্রত দেবনাথ বলেন, ‘কারা যেন সংগ্রাম পত্রিকা অফিসে ভাংচুর করেছে। এ বিষয়টি জানার জন্য পত্রিকাটির

Check Also

আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরের সামনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।