মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া এখন কোন র্পযায়ে

ক্রাইমর্বাতা অনলাইন ডেস্ক:  মানবতাবিরোধী অপরাধমানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত, আইনি প্রক্রিয়া ও বিচার কার্যক্রম থেমে নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন ৩২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মূলত স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্পপরিচিত আসামিদের মামলার কার্যক্রম এখন চলছে।

শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তিরা বলছেন, শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের সাজা কার্যকরের পর অন্য মামলার গতি কিছুটা কমেছে। বিচারের গতি বাড়াতে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল সচল করা দরকার।

স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ যাত্রা শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। বিচারকাজ গতিশীল করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ গঠিত হয় ট্রাইব্যুনাল-২। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত  বলেন, এখন যাঁদের বিচার চলছে, সে সময় তাঁরা তৃণমূলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে কারণে এ বিচার নিয়ে স্থানীয় জনগণের আগ্রহ আছে। তাঁর মতে, ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা পূরণে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল সচল করা দরকার। একটি ট্রাইব্যুনাল স্বাভাবিকভাবে বছরে দুটি বা তিনটি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন।

পলাতক আসামিদের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে পুলিশ চাইলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছাড়া তদন্ত সংস্থা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। ট্রাইব্যুনাল আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান নেই। এই সুযোগে আসামিরা সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয়েছে।

নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২০টির বেশি আপিল

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। ২০টির বেশি আপিল এখন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের আপিল এখন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যশোরের সাখাওয়াত হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মো. মোবারক হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ও ওবায়দুল হক তাহের, কিশোরগঞ্জের আইনজীবী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ও মোসলেম প্রধান, জামালপুরের মো. সামসুল হক ওরফে বদর ভাই, এস এম ইউসুফ আলীসহ অন্যদের আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া জাপার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বারের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আসছে। কার্যতালিকা অনুসারে এসবের শুনানি হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ: এখন ৩২ মামলা বিচারাধীন। বড় অপরাধীদের সাজা কার্যকরের পর অন্য মামলার গতি কমেছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা মামলাগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের করা আপিলের ওপর আগামী ১৪ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এটি হবে আপিল বিভাগে আসা নবম মামলার রায়। আর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের ওপর গত ৩১ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় এখন প্রকাশের অপেক্ষায়।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যে গতিতে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই মন্থর হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল সচল করে জামায়াতে ইসলামী, পাকিস্তানি হাইকমান্ডসহ অন্যান্য ঘাতক সংগঠনের বিচার দ্রুত শুরু করা। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দ্রুত শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনালের ভেতর একটি আপিল বেঞ্চ গঠন করা দরকার।প্রথম আলো

Check Also

সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ১০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সীমান্তে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১০ বোতল ভারতীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।