ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীতে থাকা ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, যারা ’৭১ সালে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরোনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল, সেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যাবে, শুধু সেটুকু প্রকাশ করা হবে। কোনো তালিকা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে প্রকাশ করা হবে না। অন্যায়ভাবে কেউ তালিকাভুক্ত হবে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে রেকর্ড রুমের পুরনো নথি চাওয়া হয়েছে। তাদের কোনো তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়নি। শুধু রেকর্ড রুমে থাকা নথি পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে যেসব রেকর্ড পাওয়া যাবে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আহ্বান জানান মন্ত্রী। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ’৭১ সালে যত গেজেট হয়েছিল, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ১৯৭১ সালে একটি তথাকথিত উপনির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সে তালিকা চাওয়া হয়েছে। কমিশন এখনো সেটি সরবরাহ করতে পারেনি।
রাজাকারের তালিকা:
এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জাতি যদি প্রত্যাশা করে এবং সরকার যদি মনে করে, তবে এ তালিকা গেজেট করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে এই তালিকার সম্পর্ক নেই। ট্রাইব্যুনাল আছেন। যদি কেউ বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন, তবে মামলা হবে। এ তালিকা করা হয়েছে, কারণ ’৭১ সালে কার কী ভূমিকা ছিল, জাতির তা জানা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১০-১২ হাজারের বেশি হবে না। আগামী ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার অধিকার বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারো ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাকে দেশের মানুষ রায় দিয়েছিল। অনেকেই তা পাঠ (স্বাধীনতার ঘোষণা) করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও বিভিন্ন জনসভায় পাঠ করেছি। তাই বলে কেউ দাবি করতে পারে না যে, তিনি ঘোষক। ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধু-ই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ডাকেই বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।