নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর বিকাশের টাকা ছিনতাই ও নারীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে ঐ ভিডিওকে টাকা ইনকামের মেশিন বানানোর মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শিমু কমপক্ষে ৮ জনের নাম প্রকাশ করেছে। এই ৮ জনের মধ্যে জয়যাত্রা টেলিভিশনের আকাশ, অন্তর মাল্টিমিডিয়ার তুহিন, সংগ্রাম টাওয়ারের তুহিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনি, সাদিকের পাতানো চাচা মিলন, দীপ ও রুমনের নাম রয়েছে। শিমু এই মামলার বাদি ছাড়াও আরো ৩/৪ জনের সাথে সে মেলামেশা করে গোপন ডিভাইসে ভিডিও করে তা সাদিকের কাছে এনে দিয়েছে।
যদিও সূত্র মতে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি এই চক্রের পাল্লায় পড়ে অর্থ সম্পদ খুইয়েছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছিলেন শিমু ছাড়াও আরো ৬ জন নারীকে সাদিকের ব্যবহারের কথা। তবে, প্রতারণার টোপ হিসেবে ব্যবহারকৃত নারীর সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। সেই নারীরা সনাক্ত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শিমু জানায়, তার বয়স ১৭ বছর। সৈয়দ সাদিকুর রহমানের সাথে তার ১বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ে। সাদিকের সাথে তার ভাই বোনের সম্পর্ক তৈরি হয়। ভাল সম্পর্কের কারণে মাঝে মাঝে শিমু সাদিকের কাছ থেকে টাকা নিতো। তার মা এই বছর রোজার ঈদের আগে অসুস্থ্য হয়ে যায়। তখন সে সাদিকের কাছে টাকা চায়। সাদিক তাকে টাকা ইনকাম করতে বলে। জবানবন্দিতে শিমু জানায়, তার মা অসুস্থ্য ছিল। তাকে সুস্থ্য করার জন্য সে সাদিকের প্রস্তাবে রাজি হয়। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে তার মায়ের ক্ষতি করবে বলে জানায়। তখন শিমু এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে। সাদিক তার পাশে বসিয়ে বিভিন্ন লোকের নাম্বারে শিমুর ফোন দিয়ে কল দিত। শিমু কথা বলতো, যা সাদিক শিখিয়ে দিত। শিমু ওইসব লোকগুলোকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। তাদের সাথে দেখা করার কথা বলতো। এভাবে সে এই মামলার বাদিকে ফোন দেয়। তার সাথে খুলনার রোডের পেছনে তার নিজের বাসায় দেখা করে।
সাদিক শিমুর হাতে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়ে দিয়েছিল। সেটাতে ভিডিও রেকর্ড হতো। জবানবন্দিতে শিমু আরো জানায়, সম্ভবত এটা রোজার আগের মাসের ঘটনা। সে ঐ জনপ্রতিনিধির বাসায় গিয়েছিলো। সাদিক তাকে বলেছিল, উক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ভিডিও হয়। তাকে ভিডিও করতে হবে। জনপ্রতিনিধির বাসায় যাওয়ার পর শিমু ডিভাইসটা খুলে ভিডিও করার মতো স্থানে রেখে দেয়। তারপর জনপ্রতিনিধির ইচ্ছাতে সাদিকের দ্বারা সে বাধ্য হয়ে তার ও জনপ্রতিনিধির মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তারপর ডিভাইস এনে সে সাদিককে দিয়ে দেয়। আরও ৩/৪ জন লোকের সাথে সাদিকের দ্বারা বাধ্য হয়ে সে এমন করেছে বলে জানায়। শিমু নাম জানে না তাদের। সাদিক তাদের নাম জানে।
জবানবন্দিতে শিমু আরো জানায়, পরে সে জানতে পারে, এই ভিডিও ব্যবহার করে জয়যাত্রা টেলিভিশনের আকাশ, অন্তর মাল্টিমিডিয়ার তুহিন, সংগ্রাম টাওয়ারের তুহিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনি, সাদিকের পাতানো চাচা মিলন, দ্বীপ ও রুমন চাঁদাবাজি করতো। শিমু সাদিকের কাছ থেকে এসব জানতে পারে। তাছাড়া সাদিকের বাসায় যাতায়াতের সুযোগে উক্ত লোকগুলোর মধ্যে আলোচনা থেকে সে চাঁদাবাজির কথা জানতে পারে।
উল্লেখ্য, জনপ্রতিনিধির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার টিয়ারখালি গ্রামের মো. আলমাস হোসেনের ছেলে আকাশ ইসলাম বর্তমানে শহরের সুলতানপুর গ্রামের রাশিদুজ্জামান রাশির বাড়ির ভাড়াটিয়া ও শহরের মুনজিতপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ মোখলেছুর রহমানের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানসহ অজ্ঞাত ৫/৬জন আসামি সুমাইয়া আক্তার শিমুর মাধ্যমে ব্লাকমেইল করে মেলামেশার ভিডিও নিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে। দরকষাকষির এক পর্যায়ে বিগত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা শহরের নিজ বাড়িতে বসে আসামিদের নগদ ৪ লাখ টাকা প্রদান করে উক্ত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে না দেয়ার জন্য। এরপর ৪লাখ টাকা গ্রহণ শেষে আসামিরা বাকি ১১ লাখ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। পাশাপাশি হুমকিও দেয়। টাকা না দিলে ইন্টারনেটে উক্ত ভিডিও ছেড়ে দিয়ে সামাজিকভাবে বাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমকি দেয়। এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা জেলার শিল্পপতি, চেয়ারম্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে বিভিন্ন সময়ে সু-কৌশলে ব্লাক মেইল করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, একজন বিশেষ ব্যক্তির পক্ষে কাজ করতেও অনেককে বাধ্য করা হয়েছে এসব ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে। তারা ওই ব্যক্তির ক্ষমতাকে একচ্ছত্র করতে সাদিকের কথামত কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন ভিডিও ফাঁসের ভয়ে।