ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকেই দলটির পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনিত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাতে সংগঠনটির সূত্র জানায়। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি এলাকায় দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা শেষ করেছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ভেতরে বা বাইরে এ সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা না আসলেও নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে নিয়েই, এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন।
এদিকে, মিয়া গোলাম পরওয়ারই সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন, জামায়াতের দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাসেও এমন খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরায় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান যে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এই প্রস্তাবে সেক্রেটারি হিসেবে গোলাম পরওয়ারের নাম উল্লেখ রয়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্রের দাবি, শূরা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই সেক্রেটারি নিয়োগ করার গঠনতান্ত্রিক (ধারা-২৭, ২১ তম সংশোধনী) নিয়ম থাকায় বিষয়টি গোপন রাখার শর্ত রেখে পৃথক-পৃথকভাবে প্রস্তাব পাঠান আমির।
জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দায়িত্বশীল জানান, শনিবার রাত আটটা নাগাদ পরিষ্কার হয়েছে নায়েবে আমির গোলাম পরওয়ারই হচ্ছেন জামায়াতের পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল। দলটির নেতারা বলছেন, নতুন নির্বাচিত আমিরের মতো নতুন সেক্রেটারি জেনারেলও একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম, যার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার কোনও অভিযোগ নেই।
যদিও মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য দলটির চার শীর্ষনেতার ফাঁসি হয়েছে এবং একজন মারা গেছেন ৯০ বছরের দণ্ডভোগ করা অবস্থায়।
দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এসব আলোচনায় মিয়া গোলাম পরওয়ারকেই সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনের পরামর্শ আসে। আলোচনায় পরওয়ারের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে ছিলেন অধিকাংশ সদস্য। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে আরও কয়েকদিন সময় নেবে জামায়াত। কী কারণে সময় নেওয়া হবে, এর কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি সূত্র।
মন্তব্য জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও মিয়া গোলাম পরওয়ার মোবাইল রিসিভ করেনি। জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের কোনও সূত্রই উদ্ধৃত হতে সম্মত হননি।
সূত্র আরও জানায়, পরামর্শের ভিত্তিতেই আমির সেক্রেটারি হিসাবে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে বেছে নিয়েছেন। এই পরামর্শে সাংগঠনিক ঐক্যমত আছে। তবে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানের অনুসারী অংশটি নাখোশ অবস্থায় রয়েছে।
জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল জানান, সিনিয়রিটির দিক থেকে নায়েবে আমির পদবির পর সেক্রেটারি জেনারেল হলেও গঠনতান্ত্রিক কোনও বাধা নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার নায়েবে আমিরের আগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, খুলনা মহানগর আমির, খুলনা মহানগরী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের (কাপ) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্পর্কে দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, দলে তিনি পরিচ্ছন্ন এবং রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নেতা। সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনেরও অভিজ্ঞতা আছে। একইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরে যে অংশটি ‘ব্যালেন্স’ থাকার পক্ষে, মিয়া গোলাম পরওয়ার তাদের অন্যতম।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর জামায়াতের নতুন আমির হিসেবে সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এ মাসের ৫ তারিখ তিনি আমির হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে ‘সেক্রেটারি জেনারেল’ পদে মনোনীত ব্যক্তিকে শপথ পড়াবেন দলটির আমির।