ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ কালিগঞ্জে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই মামলায় চিনতাইকৃত টাকার পরিমান নিয়ে বিকাশ এজেন্ট ও ছিনতাইকারী চক্রের হোতা সাদিকের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে। বিকাশ এজেন্টদের মামলায় ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয়েছে। অপরদিকে সাদিক বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাদিক এই জবানবন্দি প্রদান করে।
সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির নিকট আত্মীয় জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক বিকাশের টাকা ছিনতাই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে। এই মামলায় সাদিক আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে।
সাদিক তার জবানবন্দিতে জানান, তার নাম সৈয়দ সাদিকুর রহমান, বয়স ২৭ বছর, সে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলো। জবানবন্দিতে সে জানায়, অক্টোবরের ২২ তারিখের দিকে সে রাজনৈতিক কারণে শ্যামনগরে যায়। ওখানে মামুন এর সাথে তার দেখা হয়। মামুন তাকে পাশে ডেকে নিয়ে মিথুন নামের এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মামুন বলে যে, মিথুন বিকাশে চাকরি করে এবং মিথুন মামুনকে এক বোতল ফেন্সিডিল দেয়। মামুন খেয়ে সাদিককে একটু খেতে দেয়। তারপর মিথুন ওখান থেকে চলে যায়। মিথুনের ঘাড়ে একটা ব্যাগ থাকে। মামুন বলে যে, মিথুন সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন ব্যাগে করে বিকাশের টাকা নিয়ে আসে। এই টাকা কেড়ে নেওয়া যায় কি না-মামুন সাদিককে জিজ্ঞাস করে। সাদিক তখন মামুনকে সাতক্ষীরা এসে কথা বলতে বলে।
জবানবন্দিতে সাদিক আরো জানায়, মামুন দুই তিন দিন পর সাতক্ষীরায় আসে। আলিপুর বাজারের কাছে তারা একত্রিত হয়। এ সময় সাদিক, সাইফুল, দীপ, মামুন, আশিক, মোস্তফা এবং মোহন একত্রিত বসে তারা টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সাদিক জানায়, ‘মোস্তফা ভাই বলে যে, এঘটনার জন্য অস্ত্র দরকার। মোস্তফা ভাই দুইটা ৭.৬৫ অস্ত্র (পিস্তল) ব্যবস্থা করে দেয় দীপকে এবং বলে যে, আমার ভাগটা যেন বাসায় চলে আসে। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, ৩১-১০-১৯ তারিখ মিথুন সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ওর কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেয়া হবে।
সাদিক জবানবন্দিতে আরো জানায়, ৩১-১০-১৯ তারিখে দীপ ও সাইফুল পরিকল্পিতভাবে পথে পথে লোক রাখে। আলীপুর বাজারে মোহন ছিল। নলতায় নাঈম ও মেহেদি ছিল। কালিগঞ্জ বাজারে বাবু ও শামীম ছিল। দীপ আশিক ও সামি এক বাইকে লাল পালছার মোটরসাইকেলে দুইটা আগ্নেয়াস্ত্রসহ এবং মাস্ক পরে মিথুনকে আটকে টাকা নেয়ার জন্য অবস্থান নেয়। মিথুন বিকাশের টাকা নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে মামুনকে জানায়। মামুন সাতিককে ফোন দিয়ে জানায়। সাদিক সাইফুলকে জানায়। সাইফুল দীপকে জানিয়ে দেয় যে, মিথুন বের হয়ে গেছে। মিথুন কালিগঞ্জের পানিয়া নামক স্থানে পৌছালে দীপ, আশিক ও সামি বাইক নিয়ে মিথুনকে পথরুদ্ধ করে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে দুই তিন রাউন্ড গুলি করে তাদের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
সাদিক জানায়, সেখান থেকে আশাশুনির পথ হয়ে ধুলিহরে এসে দাঁড়ায়। ঘটনার সময় সাদিক পানিয়াতে ছিলো না। সে সাতক্ষীরাতে ছিলো বলে জবানবন্দিতে জানায়। তার জবানবন্দি অনুযায়ী তাদের কথোপকথনের জন্য তিনটা ফোন কেনা হয়। ফোনগুলোর একটি সাইফুলের কাছে, অন্যটি দীপের কাছে, অন্যটি বাবুর কাছে থাকে। ধুলিহরে দীপ সাদিক ও সাইফুলকে সন্ধ্যার পরে ডাকে। সাদিক ধুলিহরে যায়। তখন দীপ একা ছিল। ওখান থেকে দীপকে নিয়ে সাতক্ষীরা চলে আসে। সাতক্ষীরা আসার পর রাসেল ও বাবুর কাছে দীপ দুইটা অস্ত্র দেয়। সাদিক জানায়, ছিনতাই করা টাকা ছিল পনেরো লক্ষ টাকা। দীপ ও সাইফুল তাকে আট লক্ষ টাকা দেয়। মামুনকে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার এবং মোস্তফাকে তিন লক্ষ এবং সামিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দীপ ও সাইফুল দেয়। তারপর ৩/৪দিন পর সাদিক ঢাকাতে চলে যায়। পুলিশ তাকে চার লক্ষ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে।