ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ: বাংলাদেশ পুলিশের জনবল দ্বিগুণ করার দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে পুলিশে জনবলের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার। জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সেবা দিতে হলে আরও দুই লাখ ১২ হাজার জনবল প্রয়োজন।
এছাড়া পুলিশের বর্তমান জনবল কাঠামোর আওতায় জরুরি ভিত্তিতে ১৭টি অতিরিক্ত আইজিপির পদ এবং আটটি গ্রেড-১ পদ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি আছেন ১৭ জন। এর মধ্যে ১৫ জন গ্রেড-২ এবং দুইজনের পদমর্যাদা গ্রেড-১। পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব দাবি জানানো হয়।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়, পুলিশপ্রধানের জন্য নতুন পদ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে চিফ অব পুলিশ বা অন্য কোনো নাম হতে পারে। আইজিপি থাকবেন বেশ কয়েকজন (অন্তত ৫ জন)।
সম্মেলনে অংশ নেয়া পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
এসবের মধ্যে আছে পদোন্নতি, নারী পুলিশের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টার, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা, পুলিশ পরিবারের দুই সদস্যকে আজীবন রেশন সুবিধা প্রদান, বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন, মেডিকেল কোর গঠন, জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি।
এসবের মধ্যে কোনো কোনো বিষয় দ্রুত সমাধানের এবং কিছু বিষয় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পুলিশ পরিবারের দুই সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন প্রদান, মেডিকেল কোর গঠন, বিশেষ ভাতা দাবি, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্থাপন এবং নারী পুলিশের জন্য ট্রেনিং সেন্টার তৈরির দাবির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপির) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশীদ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম।
সম্মেলন সূত্র জানায়, সম্মেলনে নারীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য দেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম। অপর পুলিশ কর্মকর্তারাও তাদের বক্তব্যে পুলিশের নানা সমস্যা ও দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কনস্টেবল এবং এএসআই পদে অনেক জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সে অনুযায়ী উচ্চপর্যায়ে পদোন্নতি হয়নি। তাই ডিআইজি থেকে তদূর্ধ্ব পদে জনবল কম। এজন্য এসব পদে অধিকসংখ্যক হারে পদোন্নতি দিতে হবে। বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ সদস্যদের পদায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়, যেসব দেশে অধিক হারে বাংলদেশি লোকজন বসবাস করে, তাদের স্বার্থ দেখার মতো কেউ নেই।
বিশেষ করে শ্রমিক হিসেবে যারা দেশের বাইরে যায়, তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে দূতাবাসগুলো হিমশিম খায়। সেখানে বিভিন্ন পদে পুলিশের লোকজন নিয়োগ করা হলে তারা ভুক্তভোগী বাংলাদেশির ভিসা জটিলতা এবং আইনগত বিষয়সহ নানা বিষয়ে সহায়তা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর আমাদের দাবি ছিল পুলিশ স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্থাপন করা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই বছর অন্যতম দাবি ছিল দুই সদস্যের পারিবারিক রেশন সুবিধা প্রাপ্তি। গত বছর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়টি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
এটি এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখার পুলিশ অধিশাখায় ঝুলে আছে। সূত্রমতে, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার বা একাডেমিগুলোয় যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করেন, তাদের সবার জন্য বিশেষ ভাতা ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার এবং সেনা কর্মকর্তাদের যে প্রক্রিয়ায় ঋণ দেয়া হয়, সে প্রক্রিয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ঋণ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় আহত বা নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য এককালীন থোক বরাদ্দ বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।
সম্মেলন সূত্র আরও জানায়, পুলিশ মেডিকেল সার্ভিস বা মেডিকেল কোর গঠনের প্রস্তাবটি দীর্ঘদিনের। মেডিকেল থেকে পাস করে যে ক্যাডার কর্মকর্তারা পুলিশে যোগ দিচ্ছেন, তারা সরাসরি মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেবেন। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি মেডিকেল কোর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সেটি কেবল পুলিশের জন্য নয়, আনসার ও কারা-কর্তৃপক্ষের জন্যও হবে। তাই সোমবার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনে বলা হয়, পুলিশ ক্যাডারের জন্য আলাদা মেডিকেল কোর গঠন করতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।