ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ জেলায় অবৈধ নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়ের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচলানা করা হয়েছে। জেলাব্যাপী এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, শহরের পোস্ট অফিস, কলেজ মোড় ও শহীদ নাজমুল সরণিস্থ বইয়ের দোকানগুলোতে অবৈধ নোট ও গাইড বই এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় বেশ কিছু অবৈধ নোট ও গাইড বইও জব্দ করা হয়।
শনিবার দুপুরে জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজাহার আলী এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযান প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজাহার আলী জানান, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোস্তফা কামাল মহোদয়ের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন বইয়ের দোকানে অবৈধ নোটবই এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় দোকানগুলোতে প্রাপ্ত অবৈধ নোট বই জব্দ ও পরবর্তীতে কেউ যেন এধরণের নোট বই বিক্রি না করে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
তিনি জানান, সাতক্ষীরা জেলায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর। নোটবই বা গাইড বই মুখস্থ করার সংস্কৃতি প্রতিভাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। শিক্ষার্থীরা পরিনামে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগে। এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ লাভের এখনই উপযুক্ত সময়।
এদিকে কালিগঞ্জ থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়াজ কাউসার তুহিন জানান, কালিগঞ্জে সরকার নিষিদ্ধ গাইড নোটবই বিক্রি বন্ধ এবং হোটেল রেস্টুরেন্টের পরিবেশ ঠিক রাখার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক রাসেলের নেতৃত্বে উপজেলার ফুলতলা মোড় সংলগ্ন এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, নোট ও গাইড বই বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। সৃজনশীল বই বিক্রির সুযোগ থাকলেও অনুবাদ বা ব্যাখ্যা সম্বলিত বই বিক্রির অনুমতি নেই। অনুনমোদিত বই বিক্রির অভিযোগে থানা রোডে অবস্থিত আজিজিয়া লাইব্রেরীকে ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে পুস্তক বিক্রেতাদের সাথে বৈঠক করে তাদেরকে এব্যাপারে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও মিষ্টির দোকানে অভিযান চালানো হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মানসম্মত খাদ্য বিপনন নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পূর্বে সতর্ক করার পরও হোটেলের অপিরচ্ছন্নতা বজায় থাকায় উপজেলার ফুলতলা মোড় গোলচত্ত্বর এলাকায় অবস্থিত বিসমিল্লাহ হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুস সবুর লাল্টুকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এধরণের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। অভিযানকালে উপজেলা কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত উদ্দীন, উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর আব্দুস সোবহান উপস্থিত ছিলেন।
দেবহাটা থেকে আমাদের প্রতিনিধি আব্দুল ওহাব জানান, দেবহাটায় নিষিদ্ধ নোটবই মজুদ ও বিক্রির দায়ে মেহেদী হাসান মোহন নামের এক লাইব্রেরী মালিককে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি উপজেলার সখিপুর মোড়ের আধুনিক লাইব্রেরী নামক পুস্তক বিপনীর মালিক। শনিবার বেলা ১২টায় দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাজিয়া আফরীন অবৈধ নোট বইয়ের ব্যবহার, সরবরাহ ও ক্রয় বিক্রয় বন্ধে সখিপুর মোড়ের আধুনিক লাইব্রেরীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এসময় নোটবই নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৮০ অনুযায়ী লাইব্রেরী মালিককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি নোটবই ব্যবহার ও বিক্রি বন্থের জন্য সকলকে সতর্ক করেন তিনি। পরে নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন সখিপুর বাজারের রবীন্দ্র মিষ্টান্ন ভান্ডারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরীর অপরাধে রবীন্দ্র মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক সুশীল বিশ্বাসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
আমাদের তালা (সদর) প্রতিনিধি ইলিয়াস হোসেন জানান, তালায় শনিবার গাইড বই বিক্রি এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রির দায়ে মোবাইল কোর্টে ২জন দোকানদারকে জরিমানা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন, তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেন।
১৮ বছরের নিচে বয়েসের শিশুর কাছে সিগারেট বিক্রির দায়ে ২০০৫ সালে সংশোধনী আইন ধারা ১৩ এর ৬ মোতাবেক তালা বাজারের ব্যবসায়ী (দোকানদার) রামপদ পালের পুত্র পবিত্র পালকে ৫ হাজার টাকা এবং ১৯৮০ সালে নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন ধারা ৪ এর ১ মোতাবেক অরুনা বই ঘর এর ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন।
কলারোয়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি আরিফ মাহমুদ জানান, কলারোয়ায় নোট গাইড বন্ধের উপর অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত চলাকালে দুই লাইব্রেরীকে অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক কলারোয়া উপজেলায় নোট গাইড বন্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এসময় কলারোয়া বাজারের তৌহিদ লাইব্রেরীতে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণির সকল গাইড বই থাকায় প্রাথমিকভাবে তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে তার
দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে উপজেলার কাজিরহাট বাজারের তারিক লাইব্রেরীতে কিছু গাইড বই থাকায় তাকে সর্তক করাসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতা করেন কলারোয়া থানার এএসআই হুমায়ুন কবীর ও বেঞ্চসহকারী মাকসুদুর রহমান প্রমুখ।
সুন্দরবনাঞ্চল (শ্যামনগর) প্রতিনিধি রনজিৎ বর্মন জানান, শ্যামনগর উপজেলায় শনিবার নকিপুর বাজারে দুটি বই দোকানদারকে লাইব্রেরিতে নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৮০ অনুযায়ী মোবাইলকোটে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাই সিদ্দিকী। উপজেলা ভূমি সুত্রে প্রকাশ রোকন বুক ডিপো ও পল্লী মঙ্গল লাইব্রেরীর বই দোকানদারকে জরিমানা করা হয় এবং নোই বইগুলো জব্দ করা হয়। এ সময় নোট বই না রাখার ব্যাপারে জোরালো সতর্ক প্রদান করা হয়।