আশাশুনিতে ধর্মান্তরিত টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা আসামীদের সঙ্গে ভুরিভোজ করলেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই ইনসপেক্টর রফিকুল ইসলাম

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  যাত্রাদলের নায়িকা ধর্মান্তরিত টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষনের পর তার শরীরে কোরাসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর পরিদর্শক   রফিকুল ইসলাম শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেছেন।

অভিযোগ, তদন্ত শেষে তদন্তকারি কর্মকর্তা ও তার টিমের সদস্যরা  আসামীদের সঙ্গে ভুরিভোজ করেছেন। ফলে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া  প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

মামলার আসামীরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গহর গাজীর ছেলে সাইফুল¬াহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের ওমর আলী সরদারের ছেলে রিপন সরদার(৩০), এছহাক সরদারের ছেলে আবু মুছা (৩০), একই উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম ওরফে ডাকাত ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), আছিরদ্দিনের ছেলে লাভলু গাজী (৩৫), খালেক সরদারের ছেলে মহসিন সরদার (২৪), শহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) চেউটিয়া গ্রামের লতিফ সরদারের ছেলে তারামনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আাসামী কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের আবুল হোসেনের ছেলে চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)।

আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল সরদারের ছেলে শহীদুল সরদারের দায়েরকৃত মামলা থেকে জানা যায়, সাড়ে নয় বছর আগে যাত্রাদলের নায়িকা হিসেবে সাতক্ষীরার আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামের সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে গান করতে আসা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে(২৫) ফুসলিয়ে নিয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াাজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে তাকে বিয়ে করেন একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত বহু বিবাহের নায়ক সাইফুল¬াহ। বর্তমানে তাদের মরিয়ম নামে পৌনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে।

খাজরা ইউপি’র সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তমেনাসহ একের পর এক পাঁচজনকে বিয়ের কথা গোপন রেখে তাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল¬ার বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিবাদ করায় সাইফুল¬াহ টুম্পাকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় জোরালো কোন প্রতিবাদ না করেই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে থাকে টুম্পা। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ৯ জুন দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্বামীর বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১৪/১৫ জন টুম্পার উপর ঝাপিয়ে পড়ে গনধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও কাথা জড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ জুন টুম্পাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন টুম্পা মারা যায়। নিজেরা বাঁচতে আসামীরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে টুম্পা খাতুনের লাশ পিরোজপুরে দাফন করে। মামলার বাদি নিজেকে নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই বলে উলে¬খ করেন। চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৯(২)/৯(৩)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক মামলাটি রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আক্তারুল ইসলাম সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল বাদি চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। ২৮ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক হোসনে আরা আক্তার সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিনে মুক্তি পান। এ ঘটনায় টুম্পার বাবা, মা, ভাই ও বোন সাতক্ষীরা আদালতে এসে একবার আসামীদের পক্ষে এফিডেফিড ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন। পরে বাদি পক্ষে এফিডেফিড দিয়ে টুম্পার বাবা ও মা আদালতকে অবহিত করেন যে, শাহানেওয়াজ ডালিমসহ কয়েকজন আসামীরা তাদেরকে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে সংবাদ সম্মেলন ও আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে। ২০১৮ সালের তিন সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। গত বছরের ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার বিচারক হোসনে আরা আক্তার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১১জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনকে (পিবিআই) পূণঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুর একটার দিকে পিবিআই এর পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, সহকারি উপপরিদর্শক রসিভ হোসেনসহ কয়েকজন দু’টি প্রাইভেটকারে পিরোজপুর গ্রামে আসেন। তারা কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন। যান মামলার বাদি শহীদুলের বাড়িতে। পরে বিকেল তিনটার দিকে পিরোজপুর কপোতাক্ষ নদের ধারে যে হ্যাচারিতে টুম্পাকে পুড়িয়ে মারা হয় সেখানে বসে আসামী শাহানেওয়াজ ডালিম, সাইফুল¬াহসহ কয়েকজন আসামীর সঙ্গে ভুরিভোজ করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা যদি আসামীদের সঙ্গে ভুরিবোজ করেন ও তাদের টাকায় প্রাইভেট কারে এসে তদন্ত করতে আসেন তাহলে মামলার ভবিষ্যৎ কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? কোন সাক্ষীর বুকের পাটা আসে যে ডালিম চেয়ারম্যানের মত আসামীদের বিপক্ষে সাক্ষী দেবে ?

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম প্রাইভেটকারে আসা, আসামীদের সঙ্গে একসাথে ভুরিভোজ করার কথা স্বীকার করেই বলেন, তাতে মামলার তদন্ত ব্যহত হবে না। মামলার এজাহারভুক্ত দু’সাক্ষী ও বাদিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনে বাদি ও সকল সাক্ষীদের নিরাপদ স্থানে বা তার অফিসে ডেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।