ওপেন কর নইলে তোর গোপন ভিডিও ফাশ করবো: সহপাঠির কান্ড: অতপর–

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ২৩ বছর বয়সী তরুণী চাকরি করেন ঢাকার অভিজাত পাড়ার একটি শো-রুমে। যেখানে তার আরো ডজনখানেক নারী ও পুরুষ সহকর্মী রয়েছেন। গত ১১ই জানুয়ারি তার ফেসবুকের মেসেঞ্জারে একটি ভিডিও লিংক আসে। একটি ফেইক আইডি থেকে পাঠানো ওই লিংকটি তাকে ওপেন করতে বলা হয়।  ভিডিওটি তার কর্মস্থলের ড্রেসিং রুম থেকে ধারণ করা এব্‌ং সেটিতে তার পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য রয়েছে। এরই মধ্যে যে আইডি থেকে তাকে ভিডিওটি পাঠানো হয়েছে সেই আইডি থেকে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভিডিও কলে এসে তার শরীর দেখাতে হবে। তা না হলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে ওই নারী প্রথমদিকে সাড়া দিলেও পরবর্তীতে ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও ক্রাইম ডিভিশনে অভিযোগ করেন।

পরে সাইবার ক্রাইম ডিভিশন অভিযান চালিয়ে সিরাজুল ইসলাম সজিব (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। সে ভোলার চরফ্যাশন আমিনাবাদের মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সীর ছেলে।

সাইবার ক্রাইম ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, সজিব অভিযোগকারীর সাবেক সহকর্মী। তারা দুজনেই আড়ংয়ের বনানী শাখায় কাজ করতেন। একই সঙ্গে কাজ করার সময়ই সজিব আড়ংয়ের ওই শাখার কর্মচারী ড্রেসিং রুম (পোশাক পরিবর্তন কক্ষ) থেকে গোপনে ভিডিও ধারণ করেছে। শুধু এই তরুণী নয় অন্তত তার ১০ জন নারী সহকর্মীর পোশাক পরিবর্তনের অন্তত ত্রিশটির অধিক ভিডিও ধারণ করেছে। যা দিয়ে পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। কখনও সে ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করেছে, আবার কখনও ভিডিও কলে শরীর প্রদর্শনসহ নানা বিকৃত দাবি করেছে। সে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এসব করেছে। যদিও সবার সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করার আগেই সে ধরা পড়েছে। ২৫শে জানুয়ারি ঢাকার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে সজিবকে আটক করা হয়েছে। পরে ওই দিনই বনানী থানায় সাইবার আইনের কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানাগেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিব আড়ংয়ের কর্মচারী ড্রেসিং রুম থেকে ভিডিও ধারণের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, আড়ংয়ে চাকরিকালীন সময়ে সে চতুর্থ তলার কর্মচারীদের পোশাক পরিবর্তন রুমের বাইরের সানসেট এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে গোপনে এসব ভিডিও ধারণ করেছে। আড়ংয়ের সহকর্মী ছাড়া আরও এক নারীর ভিডিও ধারণ করেছিলো। ওই নারীকে ব্ল্যাকমেইলিং করতে গিয়ে সে গত বছর আড়ং থেকে তার চাকরি হারিয়েছিলো। চাকরি হারানোর পরও সে থেমে থাকেনি। তার কাছে থাকা ভিডিও দিয়ে তার সহকর্মীদের ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করেছিলো। ১১ই জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে ওই সহকর্মীকে তার সিরাজুল ইসলাম সজিব নামের ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে এসএমএস পাঠিয়ে বলে, সৈকত নামের আইডি থেকে পাঠানো একটি লিংক ওপেন করতে। পরে তার সহকর্মী ভিডিও দেখে চমকে যান। এরপর সজিব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে। আর তার কথামত কাজ না করলে তার কাছে থাকা ভিডিওটি ভাইরাল করা হবে বলে হুমকি দেয়। পরে তিনি ১৬ই জানুয়ারি বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।

ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও ক্রাইম ডিভিশনের সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোর্তিময় গোপ বলেন, প্রতারক সজিব প্রথমত তার নারী সহকর্মীদের বিনা অনুমতিতে ভিডিও ধারণ করে অপরাধ করেছে। দ্বিতীয়ত সে ওই ভিডিও  ফেসবুকে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইলিং করেছে। এর আগে সে তার এক বান্ধবীর কিছু ভিডিও ধারণ করেছিলো। মেয়েটার সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে ওই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করেছিলো। পরে মেয়েটি এ বিষয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করেছিলো। পরে প্রতিষ্ঠান করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সজিবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলো। যে আইডি থেকে সজিব ওই ভিডিওগুলো পাঠিয়েছিলো ওই আইডিটি তার মোবাইলে লগইন ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আমাদের কাছে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে আরও কয়েকজন সহকর্মীকে সে ভিডিও পাঠিয়েছিলো তারা সাড়া দেননি। গতকাল আদালতে সে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও ক্রাইম ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সারা দেশে সাইবার অপরাধের দায়ে মামলা হয়েছে ৬৩৮টি, যা ২০১৬ সালে আরও বেড়ে হয়েছে ৯২৩টি। একইভাবে ২০১৭ সালে ১ হাজার ৫৮টি, ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৩৬টি ও ২০১৯ সালে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৬টি। এরমধ্যে  ২০১৮ সালে  ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়েছে ১৬০টি ও ২০১৯ সালে ৮৪৬টি। ২০১৫ সালে পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ২৩২টি, ২০১৬ সালে ২০৬টি, ২০১৭ সালে ২৮০টি,  ২০১৮ সালে ৩৭৩টি ও ২০১৯ সালে ৫৪০টি। আইসিটি অ্যাক্টে ২০১৫ সালে মামলা হয়েছে ৩৬৫টি। একইভাবে ২০১৬ সালে ৬৭৩টি, ২০১৭ সালে ৭৪৮টি, ২০১৮ সালে ৫২২টি ও ২০১৯ সালে হয়েছে ১২টি মামলা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০১৫ সালে মামলা হয়েছে ৪১টি। ২০১৬ সালে ৪৪টি, ২০১৭ সালে ৩০টি, ২০১৮ সালে ৮১টি ও ২০১৯ সালে ৫৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। ডিএমপির সাইবার ডিভিশন সূত্র বলছে, দিন দিন সাইবার অপরাধের প্রবণতা বেড়েই চলছে। প্রতিবছরই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে মামলা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। যা ২০১৮ সালে হয়েছে ৭ শতাংশ আর ২০১৯ সালে সেটি গিয়ে দাড়িয়েছে ২৮ শতাংশে।
এদিকে গত বছরে ডিএমপির সাইবার ডিভিশনে ২ হাজার ৯৩২ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৩ জন পুরুষ ও ১৩৭৯ জন নারী রয়েছেন। শতকরা হিসেবে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইডি হ্যাকের শিকার হয়েছেন, ১ হাজার ১১২ জন। যার মধ্যে ৬০৬ পুরুষ ও ৫০৬ জন নারী রয়েছেন। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার শিকার হয়েছেন ৩৪৯ জন। যার মধ্যে ২৭০ জন পুরুষ ও ৭৯ জন নারী। সেক্সটেনশনের শিকার হয়েছেন ২১৮ জন। এর মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ ও ১৭৩ জন নারী। ফেইক আইডি দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে ৫১৩ জনকে। এই প্রতারণায় শিকার হয়েছেন  ১৯৫ জন পুরুষ ও ৩১৮ জন নারী। একই বছরে ৩৭ জন ইমেইল হ্যাকের শিকার হয়েছে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করেছেন। আর ৩২৩ জন পুরুষ ও ২৯১ জন নারী মিলিয়ে অন্যান্য হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৬১৪ জন

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।