ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাবে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন আক্রান্ত রোগীরা। এ কারণে দেশে প্রতিবছর নতুন আক্রান্ত রোগীদের জন্য জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, কর্ম-পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন চালু জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে ‘আই এম অ্যান্ড আই উইল’ অর্থাৎ আমি আছি, আমি থাকব, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২০।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব বলছে প্রতিবছর দেশে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার মারা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৫ সালে দেশে প্রথম হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী নিবন্ধন চালু হয়। তারপরও সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নির্ণয় করা জরুরি। কারা কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত, সে সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন দরকার।
কারণ এখন পর্যন্ত সরকারের সেক্টর কর্মসূচিতে এই জনসংখ্যাভিত্তিক নিবন্ধন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চলমান ৫ বছর মেয়াদি মাল্টিসেক্টোরাল এনসিডি কন্ট্রোল প্ল্যানে ২০২২ সালের মধ্যে ১৯টি পুরনো সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন চালু করার উদ্যোগ নেয়ার পরও তা থেমে গেছে।
২০০৯ সালে ৫ বছর মেয়াদি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ সালে যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের খুবই সামান্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি প্রয়োজনীয় আপডেট করা হয়নি। জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও সঠিক কর্ম-পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারা দেশের রোগীরা ভিড় জমাচ্ছে। যারা অপারেশনের জন্য গড়ে এক মাস, কেমোথেরাপির জন্য ২ থেকে ৩ সপ্তাহ, বিকিরণ চিকিৎসার জন্য ৪ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
১৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগ চালু থাকলেও মাত্র ৯টিতে বিকিরণ চিকিৎসার যন্ত্র থাকলেও কারিগরি ত্রুটির ফলে সব মেশিন সক্রিয় থাকে না।
এছাড়া সহায়ক চিকিৎসক যেমন, শল্যবিদ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা সত্ত্বেও আন্তঃবিভাগ সমন্বয় ও রোগীদের আস্থার অভাবে ক্যান্সার রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না এই পর্যায়ের হাসপাতালগুলো।
অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি সেবা দান ব্যাহত করছে। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার ইউনিট চালু হলেও চিকিৎসাসেবা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উপদান হল প্রাথমিক প্রতিরোধ, সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। কিন্তু দেশে ক্যান্সারের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের পেছনে। ক্যান্সার নির্ণয় খাতে বরাদ্দ খুবই কম।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট হাসপাতালের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রাথমিক প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তথা যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যার যার জায়গা থেকে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি এ সমস্যা উত্তরণে সরকার, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল পুনর্গঠন ও কার্যকর জরুরি।
জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র প্রণয়ন বা হালনাগাদ ও এর আলোকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।