ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ভালোবাসার মানুষটির প্রতি প্রেমের রাগ অনুরাগ নিয়ে চন্ডীদাস রজকানির, লায়লী মজনু, দেবদাস পার্বতীসহ বিভিন্ন উপাখ্যান তৈরি হয়েছে। কবি চন্ডী দাস প্রিয়ার ‘অর্ধ’ তিলে তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রবল আকর্ষণ। এটাকে প্রেম বলি আর ভালোবাসা, যা-ই, তা হৃদয়ঘটিত। তাই তো তিনি লিখিছেন-
‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া
অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া
সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া’
মনের মানুষের কাছে হৃদয়ের কথা বলার ব্যাকুলতা জন্ম-জন্মান্তরের। নির্দিষ্ট কোনো দিন বা ক্ষণের জন্য অপেক্ষার নয় ভালোবাসার অনুভূতি। ঝর্ণাধারার মতোই প্রবাহমান তার ধারা। প্রেমিককূলে যুগ যুগ ধরে তাই চলে আসছে। তবে হালে ভালোবাসা জানান দিতে পৃথিবীজুড়ে ঘটা করে একটি দিবস পালন করা হচ্ছে। সেই দিনটিই আজ। আজ ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে’। প্রিয়ার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ারই দিন আজ।
প্রীতি-বন্ধন, প্রেম আর কৃতজ্ঞতা-শ্রদ্ধায় গড়া আমাদের জীবন। এগুলোর গ্রন্থিত রূপটির নামÑ‘ভালবাসা’। পিতামাতার প্রতি সন্তানের, সন্তানের প্রতি পিতামাতার, ভাইবোনের পারস্পরিক, ¯্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কিংবা সৃষ্টির প্রতি ¯্রষ্টার অথবা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রিয়-প্রিয়ার; এই যে হরেক রকমের বিনিসূতোর বন্ধন সেটার শাব্দিক প্রকাশের নাম ভালোবাসা! দিনটি সব বয়সের সবার হলেও প্রধানত তারুণ্যেরই জয়জয়কার। ভালোবাসা দিবস প্রবর্তনের গোড়া থেকেই বিশ্বব্যাপী দিনটিতে তরুণ প্রজন্মকেই বেশি মাতামাতি করতে দেখা যায়। তাইতো চিরজনমের তরে বাহু ডোরে বাধা পড়া কিংবা হৃদয়বেদীতে যার জন্য থরে থরে সাজানো প্রেমের অর্ঘ্য; মুগ্ধতা আর ভালোবাসার চিরকালের নায়িকা যিনি, সেই বনলতা সেন অথবা মোনালিসা কিংবা মানসীকে নিয়ে বসন্তের উতলা হাওয়ায় আজ কেউ কেউ উড়িয়ে দেবেন স্বপ্নীল ডানা। রক্তরাঙা একটি গোলাপ চোখের সামনে তুলে ধরে বলবেনÑ‘তোমায় ভালোবাসি’।
ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছেÑসেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের একটি ঘটনা। ওই ধর্মযাজক একই সঙ্গে চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমানদের স¤্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। স¤্রাটের ধারণা হলোÑপুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি যুবকদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কী নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায় ? এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। চার্চে মোমবাতির আলোয় হচ্ছে তাদের স্বপ্নপূরণ। ধরা পড়লেন একদিন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে পোরা হলো। দেশজুড়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে যুবকশ্রেণির মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান।
ফুলশুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারারক্ষীর এক অন্ধ যুবতী মেয়েও ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাতে যেতেন। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হলো হƒদয়ের বন্ধন। ধর্মযাজক নিয়ম ভেঙে প্রেম করেন। তারপর আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। যুবক-যুবতীদের সহানুভূতি আর ভ্যালেন্টাইনের নিজেরও প্রেম-বিয়ের এ খবর যায় স¤্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড দিলেন। সেটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই ১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে নবোঢ়াকে তিনি চিঠি লিখলেন। যার হƒদয়ের কথা শেষ হয়েছিল এভাবেÑ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’।
অত:পর এ ভালোবাসার স্বীকৃতি আদায়ে পরবর্তী দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এ দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। গ্রিক ও রোমান উপকথার মতোই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে যে গল্প-কাহিনীই থাক, আজ যে তা ছড়িয়ে পড়েছে ভুবনজুড়ে। এদেশে হালে উদযাপিত হলেও সেই ষোড়শ শতক থেকে তা পাশ্চাত্যে পালিত হয়ে আসছে। এদিন কেবল প্রেম বিনিময় নয়, তরুণ-তরুণীদের মাঝে গোপনে বিয়েও ঘটে। আজ জেলার বিভিন্ন উদ্যান, গার্ডেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুডের দোকান, লং ড্রাইভে যাওয়া অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলে প্রণয়ের নিবেদন।
চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস, প্রেমবার্তা, আংটি, প্রিয় পোশাক, বই অথবা রক্তগোলাপ উপহার হিসেবে দেয়া-নেয়া হয় এ দিন তরুণ-তরুণীদের মাঝে। অনেকে রাখিবন্ধনও করে। শুধু তরুণশ্রেণি নয়, পিতা-মাতা-সন্তানের ভালোবাসাও এ দিবসকে উদ্ভাসিত করে।
ভালবাসা দিবসে দামি দোকানে কাচের শোকেসে সাজিয়ে রাখা মূল্যবান হীরা জহরত থেকে শুরু করে বাগানের সদ্য প্রস্ফূটিত গোলাপটিও হতে পারে ভালোবাসা দিবসের উপহার। তবে সবচেয়ে কাব্যিক এবং মর্যাদাপূর্ণ উপহার হচ্ছে রঙিন খামে চিঠি অথবা বাগানের সদ্য প্রস্ফূটিত ফুল। আর সে ফুল যদি হয় বাগানের তাজা গোলাপ তাহলে তো কথাই নেই।
গোলাপ ¯্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। ফুলের রানী গোলাপ, কত রঙের গোলাপই আছে এই পৃথিবীতে। কতই না রঙের বাহার প্রকৃতির এই অনাবিল সৌন্দর্যময় সৃষ্টির প্রতিটি রঙেই থাকে ভালোবাসার কথা। লাল, হলুদ, গোলাপি, কমলা, বেগুনি, সাদা, কালো, পিচ এবং আরও কত রং। প্রতিটি রঙের আলাদা আলাদা অর্থ থাকলেও মূল সুর ‘ভালোবাসি’। এ যেনো ভালোবাসার সাতরং। ভালোবাসার উপহার হিসেবে একগুচ্ছ গোলাপের গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর উর্ধ্বে। এ তো নিছক ফুলই নয়, এ যে প্রেরক এবং প্রাপকের মধ্যে যোগাযোগের মেলবন্ধন, হৃদয়ের গভীরের উষ্ণ বার্তা বহনকারী মাধ্যম প্রথম ভালোবাসা জানাতে, হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গৌরব ফিরিয়ে আনতে, গভীর ভালোবাসাকে আরও গভীরে পৌছে দিতে, কাউকে ভালোবাসা মিশ্রিত শ্রদ্ধা জানাতে, শত্রুর মন জয় করতে, বন্ধুর আনন্দের অংশীদার হতে, শোকার্তকে সহানুভূতিপূর্ণ ভালোবাসা জানাতে একগুচ্ছ গোলাপই যথেষ্ট।
আমরা আশা করি আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর অফুরন্ত ভালোবাসায় ভরে উঠুক এবারের ভালোবাসা দিবসটি।
চারিদিকে আজ মাদকের মরণ ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আজ বিশ্ব শান্তি নাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের জন্য আমাদের প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র নেই, কিন্তু ভালোবাসার জন্য আমাদের আছে বিশাল হৃদয়। সেই হৃদয় দিয়ে আজ বিশ্বকে ভালোবাসবো আমরা-এই হোক আগামীর শপথ। সচ্চিদানন্দ দে সদয়
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …