ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং ইরানে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এর ধ্বংসাত্মক ও করুণ পরিণতির শিকার হবে। ইরানে উদ্বেগজনকভাবে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজার এবং ওয়াল স্ট্রিট স্টকের দ্রুত পতন হয়েছে আজ সোমবার। তবে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকেছেন। এর ফলে সাত বছরের মধ্যে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ এখন। বুধবার প্রথম দু’জন ব্যক্তি আক্রান্তের কথা জানায় ইরান।
সেখানে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩। মারা গেছেন আট জন। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত পবিত্র শহর কোম-এ। এ অবস্থায় ইরানের বিরুদ্ধে ভ্রমণ ও অভিবাসন বিষয়ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, তুরস্ক ও আফগানিস্তান। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এমন পরিস্থিতিতে ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরান বলেছেন, কিভাবে ইউরোপে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সর্বোত্তমভাবে লড়াই করা যায় তার উপায় খুঁজে পেতে শিগগিরই তিনি ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ইতালিতে তৃতীয় একজন এই ভাইরাসে মারা যাওয়ার পর তিনি এমন কথা বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ফ্রান্সে কোনো মহামারি নেই। কিন্তু সমস্যাসঙ্কুল অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের দরজায়, ইতালিতে। এ বিষয়ে আমরা গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি।
ওদিকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শহরগুলো অবরুদ্ধ করে দিয়েছে ইতালি। জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ভেনিস কার্নিভাল। এর উদ্দেশ্য ইউরোপে করোনার বিস্তার রোধ করা। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আরএআই’কে প্রধানমন্ত্রী গুসেপে কন্টে বলেছেন, এই বিস্ফোরক ঘটনায় আমি বিস্মিত। সামনের দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন সবাইকে। বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় সবই আমরা করবো। দেশটির লোম্বার্ডি এবং ভেনেটো অঞ্চলে কমপক্ষে এক ডজন শহরে সব মিলিয়ে মানুষ আছেন ৫০ হাজার। তাদেরকে কার্যত কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। ভেনেতো অঞ্চলের গভর্নর লুকা জাইয়া বলেছেন, যদি আমরা ধৈর্য্য না ধরি তাহলে এর অর্থ হবে আমাদের ধারণার চেয়েও ভয়াবহ।
ওদিকে দু’জন যাত্রীর দেহে জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর ইতালি থেকে আলপস-এর ওপর দিয়ে যাওয়া ট্রেন সার্ভিস প্রায় চার ঘন্টা স্থগিত করে রাখে অস্ট্রিয়া। ওই ট্রেনটি ইতালির ভেনিস থেকে প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল জার্মানির মিউনিখে। এর মধ্যে দু’জন যাত্রীকে পরীক্ষা করে নেগেটিভ পাওয়ার পর তা চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার বলেছেন, ইতালির সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা নিয়ে আজ সোমবার করোনা ভাইরাস বিষয়ক টাস্ক ফোর্স বৈঠকে বসবে।
তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিশনার পাওলো জেনিলোনি। তিনি বলেছেন, ইতালি কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তার প্রতি আস্থা আছে ব্রাসেলসের। ওদিকে দক্ষিণ কোরিয়াতে আরও ১৬১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আজ সোমবার রিপোর্ট করেছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সেখানে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৬৩। সেখানে এ ভাইরাসে সপ্তম একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে রোববার থেকে সেখানে সংক্রমণ নিয়ে লাল সতর্কতা বা রেড এলার্ট জারি করেছে সিউল। এর অধীনে স্কুল কলেজ অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা থেকে জোর করে বিরত রাখা হয়েছে।