ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের অসীম সাধুর বাড়ির ভাড়াটিয়া ফারহানার আক্তার রতœাকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংএ হত্যার নেপথ্যের সকল ঘটনা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। হাসিবুর রহমান সবুজ কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার খাসমথুরাপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, হাসিবুর রহমান সবুজ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মালোত গ্রামের রোকনউদ্দিন সরদারের মেয়ে ফারহানা আক্তার রতœার তৃতীয় স্বামী। দ্বিতীয় স্বামী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চারাবটতলা এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে তালাক হয়ে যাওয়ার পর রতœা পাইকগাছা আদালতে নারী ও শিশু শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা চলাকালে কপিলমুনির মাহমুদকাটিতে রতœার বিউটি পার্লারে হাসিবুরের পরিচয় হয়। হাসিবুর নিজেকে মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে এক কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে পরিচয় দেয়। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও গত বছরের ৪ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। হাসিবুরের বাড়িতে রতœাকে মেনে না নেওয়ায় তারা তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের অসীম সাধুর বাড়িতে এক হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় ৮ নভেম্বর থেকে বসবাস শুরু করে। বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া লক্ষাধিক টাকা নিয়ে সাবেক স্বামী মিজানুর রহমান শেখ ব্যবসা করায় রতœার সহ্য হচ্ছিল না। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রতœা তার তৃতীয় স্বামী হাসিবুরকে বলে। এজন্য মিজানকে র্যাব দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া বা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলতো। এ নিয়ে রতœা ও সবুজের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে হাসিবুর রহমান সবুজ তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী মিজানুরের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য জনৈক কবীর হোসেন নামের এক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালককে নিয়ে তালা বাজার থেকে একটি প্লাস্টিক কর্ন্টেনারে করে তিন লিটার পেট্রোল নিয়ে আসে। অন্য এক দোকান থেকে নিয়ে আসে দু’টি প্লাস্টিক টিউব। এরপর থেকে অস্থির হয়ে ওঠে রতœা। সবুজ বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত একটার দিকে সবুজ ঘরে ফিরে আসে। তখন রতœা নিজের ঘরে পেট্রোল ছড়িয়ে সারা ঘর জ্বালিয়ে দিতে চায়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে টেবিলের উপরে থাকা দিয়াশলাই নিয়ে ঘরে আগুন দিয়ে বারান্দায় চলে যায় সবুজ। এতে রতœা ও ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যেতে শুরু করলে সবুজ দোতলায় উঠে গৃহকর্তাকে ডেকে আনে। সবুজ ঘটনার জন্য দায়ী নয় প্রমাণ করতে রতœাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রতœাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে নিয়ে ঘর করবে এমন আশ্বাস দিলে হাসপাতালের ডাক্তারদের ম্যানেজ করে সবুজ সাবেক স্বামীসহ চারজন ঘরে আগুন দিয়েছে এমন জবানবন্দি গ্রহণ করানোর চেষ্টা করে। এর আগে শ্বশুর রোকনউদ্দিনকে বুঝিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তালা থানায় মিজানুর রহমান শেখ, তার ভাই মোমিনুর রহমান শেখ, দোকান কর্মচারি হেলাল ও ভগ্নিপতি আব্দুল গফুরের নামে মামলা করায় সবুজ। ৪ মার্চ সকালে ঢাকা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রতœা মারা যায়। তদন্তকালে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী শেখ মোবারকপুরের ভাড়া বাসার সামনে থেকে সবুজকে গ্রেপ্তার করেন।
তবে গ্রেপ্তারকৃত হাসিবুর রহমান সবুজ সোমবার দুপুরে জেলগেটে সাংবাদিকদের বলেন, তাকে শুক্রবার সকাল ১১ টায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়। রতœা সাবেক স্বামী মিজানুরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতো। এটা সে সহ্য করতে পারতো না। একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে পাইপ ঢুকিয়ে তার মধ্য দিয়ে বাহির থেকে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে রতœাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল সে।
প্রেস ব্রিফিং এ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, আদালতে আবেদন করে হাসিবুর রহমান সবুজকে এ মামলায় গ্রেপ্তারের অনুমতি চাওয়া হয়। তবে এজাহারভুক্তরা নির্দোষ হওয়ায় তাদেরকে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …