ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল ভারী হচ্ছে। লাখ লাখ লোককে কোয়ারেন্টাইনে আটকা রাখা হয়েছে। এবার সেই ভাইরাসের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিলেন এক সাংবাদিক!
বিষয়টা অবাক হওয়ার মতো হলে ঘটনাটা মজারও বটে। আফ্রিকার দেশ মিসরের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে সেই সাক্ষাৎকার।- খবর আনন্দবাজারপত্রিকার
পরে সামাজিকমাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। মিসরের আল হায়াহ চ্যানেলে সম্প্রতি একটি শো শুরু করেছেন সাংবাদিক জাবের আল-কারমুতি। অনুষ্ঠানের নাম ‘হোয়াট ইজ দ্য টক অ্যাবাউট?’
প্রতি সপ্তাহের সোমবার সম্প্রচারিত হয় এই অনুষ্ঠান। এই সপ্তাহে করোনাভাইরাসের মতো দেখতে একটি মুখোশ পরে এক ব্যক্তি জাবেরের সঙ্গে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে ‘করোনাভাইরাস’ বলেন, তাকে নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে সামাজিকমাধ্যমে। তবে তার কারণে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
ভাইরাসের প্রকোপ থামানো যাবে কিনা জানতে চাইলে করোনা বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভাল করে বার বার হাত ধুইতে হবে।
সঙ্গে সিঁড়ির রেলিংয়ে মতো জায়গায় বেশি হাত না দিতেও পরামর্শ দিয়েছেন ‘করোনা’।
তার পরামর্শ হচ্ছে, হাঁচি, কাশির সময় মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতালিতে একদিনে ৩৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি এমন খবর দিয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারীটিতে একদিনে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৯ জনে। চীনের বাইরের কোনো দেশে এটাই সর্বাধিক মৃত্যু।
ভূমধ্যসাগরীয় দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৪ হাজার ৭৪৭ জন। ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
১৯৯২ সালে বার্সেলোনার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের নকশায় সহায়তাকারী ইতালির স্থপতি ভিট্টোরিও গ্রেগট্টিও মারা গেছেন এই ভাইরাসে। রোববার ৯২ বছর বয়সে তিনি মারা যান বলে ইতালির গণমাধ্যমের খবর বলছে।
মিলানে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে ইতালির গেনোয়াতে মেরাসসি স্টেডিয়ামের নকশাও ছিল তার করা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। চলাফেরায় বিধিনিষেধ, ভ্রমণ সতর্কতা, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার মধ্যে দেশে দেশে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। অনেক জাগায় আতঙ্কে নিত্যপণ্য কেনার ধুম লেগে গেছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক এই মহামারীকে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে জনস্বস্থ্যের জন্য সবচেয়ে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ ভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের ১৪১টি দেশ ও অঞ্চলে; আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে সেরেও উঠেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গতবছরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু হয়। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর বেশিরভাগ ঘটনা চীনেই ঘটেছে।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশটি নানা ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামলে ওঠার পর এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।