সাতক্ষীরায় হাত ধোয়ার জীবাণুনাশক মাস্ক-গ্লোভসের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ: এরপরও সংকট

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা:    কলারোয়ায় মোবারক নামে (ছদ্মনাম) এক ক্রেতা সোমবার বিকেলে অনটাইম হ্যান্ডগ্লোভস কিনেছেন ১০০পিস ৩০০টাকা অর্থাৎ প্রতিপিস ৩ টাকা করে। সন্ধ্যার পর তিনি আবারো কিনতে গেলে সেই গ্লোভস নেয়া হয় পিস ৫ টাকা করে। আর মঙ্গলবার সকালে সেটা আবার কিনতে গেলে দাম নেয়া হয় পিস ১৫ টাকা করে। এভাবে বেশিরভাগ দোকানে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লোভস এর দাম গত ৩/৪ দিনে কয়েকগুন বৃদ্ধিতে বিক্রি হচ্ছে। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ বেশিরভাগ দোকানে নেই বলছেন বিক্রেতারা। যৎসামান্য যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অনেক বেশি নিচ্ছে। একই অবস্থা হ্যাক্সিসলের ক্ষেত্রেও।
হাসপাতাল রোড ও চৌরাস্তা মোড়ের বেশ কয়েকটি ঔষধ, কসমেটিক্স ও কাপড়ের দোকানে মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ ক্রেতারা। এদিকে, মঙ্গলবার অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার হোসেন কলারোয়া বাজারের বিভিন্ন ঔষধের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযোগ সত্যতা পেয়ে ৩টি দোকানের মালিককে ৩হাজার জরিমানা আদায় করেন তিনি। ভূক্তভোগিরা জানান, অনটাইম মাস্ক অতিসম্প্রতি/কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫/৭ টাকা। সোমবার বিকেলে কিনেছি ১৫ টাকায়। কলারোয়া বাজারের অনেক কাপড়ের
দোকানে/গার্মেন্টস, ঔষুধ ও কসমেটিকসের দোকান এরূপ মূলবৃদ্ধির শিকার হয়েছেন ক্রেতারা।
তারা আরো জানান, ২/৪দিন আগেও যে মাস্ক বিক্রি হয়েছে ২৫টাকায় সেটা নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা, ৩৫ টাকার মাস্ক হয়েছে ৮০টাকা, ৪০-৪৫ টাকার মাস্ক নেয়া হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। এভাবে বিভিন্ন পদের ও প্রকৃতির মাস্ক অধিক দামে বিক্রি করছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক ক্রেতা এগুলো প্রয়োজনের বেশি কিনছেন। ফলে এ সংকট তৈরি হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে সার্জিক্যাল মাস্ক প্রতিটি ২০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা করেও বিক্রি করা হচ্ছে। আর একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক আগে প্রতিটি দুই থেকে পাঁচ টাকা বিক্রি হতো। যা এখন ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। মাস্কের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিক্রেতা বলেন, আগে একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্কের ৫০টির এক প্যাকেটের পাইকারি দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর তা পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। তাও পাওয়া যায় না।

সূত্রে জানা গেছে, বাজারে সাবানের কোন ঘাটতি নেই। তবে হ্যান্ডওয়াশ নেই বলছেন বিক্রেতারা। একই রূপ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যাক্সিসল বা জীবানুনাশকের ক্ষেত্রে। যৎসামান্য যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও আগের চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে।
কয়েকটি দোকানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, ওই সকল দোকানে কিংবা তাদের গোডাউনে হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সিসল আছে। কিন্তু মালিকপক্ষ বলেছেন, নেই অথবা কাল-পরশু আসবে/পাওয়া যাবে।

বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ কম থাকা ও অধিক দামে ক্রয় করার কারণে বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে যেমন দামে কিনছেন তার থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করছেন বলে তাদের দাবি। এ জাতীয় বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অনৈতিক, অমানবিক ও অবিবেচক পদক্ষেপ রুখতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, সত্যতা নিশ্চিত হতে হলে অভিযানে যাওয়ার আগে সাধারণ কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে আগে ক্রয় করাতে হবে। নতুবা আপনাদের কাছে দাম কম বলবে অথবা নেই বলবে। সূত্র জানায়, ঘাতকভাইরাস করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকার যখন হাত ধোয়া-মাস্ক ব্যবহারসহ নানান সচেতনতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তখন কলারোয়ায় বেড়েছে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ, হেক্সিসল বিক্রি। সেই সাথে বেড়েছে এগুলোর দামও। তবে বাজার থেকে হঠাৎ করেই যেন ‘উধাও’ হয়ে গেছে মাস্ক, হেক্সিসল, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণু রোধে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য। বিভিন্ন ওষুধের দোকান, কসমেটিক্স দোকান, কাপড়ের দোকান ও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এসব পণ্যের কোনো একটি পাওয়া গেলেও আরেকটি নেই। কেউ বলছেন কাল/পরশু আসেন। আবার যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। করোনা ভাইরাসে সতর্কতা অবলম্বনে মানুষ ছুটছেন এসব পণ্য কিনতে। তবে এগুলোর সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট মূলত কতিপয় সুযোগসন্ধানী বিক্রেতাতের কারণেই-দাবি ক্রেতাদের।
জানা গেছে, সাবান পানি দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশনার ফলে জীবাণু রোধে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কলারোয়া বাজারের চৌরাস্তা মোড়ের একটি ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, হঠাৎ করে এত চাহিদা বাড়লে আমরা কীভাবে দেব? আমাদের কাছে হেক্সিসল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল। শেষ হয়ে গেছে। কাল-পরশু আসবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।