ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলার নিম্ন আয়ের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ পড়েছে বিপাকে। মানুষ বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় এসব মানুষের আয় আরও কমে গেছে। এসব মানুষ পেটের দায়ে রাস্তায় বের হলেও পুলিশ তাড়িয়ে দিচ্ছে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে জেলাতে প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষাধীক মানুষ সরকারী,বেসরকারীসহ বিভিন্ন চাকুরিতে নিয়োজিত। মাস শেষে তারা বেতন উত্তলন করেন। বাকিরা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এসব পেষার মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ নিন্ম আয়ের। এদের মধ্যে আবার ৫ লক্ষ মানুষ দিন আনা দিন খাওয়া। এক দিন কাজ না করলে যাদেও সংসার চলে না তাদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে।
জেলার বিভিন্ন সড়কে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রিকশা, ভ্যান, হ্যালোবাইক, অটোরিকশা, ঘোড়ার গাড়ি ও মালবাহী গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ওই আয় দিয়ে তাদের প্রতিদনের বাজার করতে হয়। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। ফলে পরিবার নিয়ে এসব নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা বাঁচার তাগিদে গাড়ি নিয়ে বের হলে পুলিশের আতঙ্কে থাকেন। তার পরও তারা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন পেটের তাগিদে। চারু’দিন ধরে রাস্তায় মানুষ না থাকায় আরও বিপাকে পড়েছেন তারা। এদিকে পুলিশ বলছে, করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এসব নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘরে রাখতে তাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে।
ভ্যানচালক সালাম মিয়া বলেন, পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে বসে আছি। কোনো যাত্রী নেই। আগে ছয় থেকে সাতশ’ টাকা রোজগার করতাম। এখন করোনা আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। আমার মতো আরও অনেকে ভ্যানচালক বসে আছে সারাদিন ধরে। ১০০ টাকা রোজগার করতে পারিনি। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। সরকার যদি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে কিছুটা রক্ষা পাব পরিবার নিয়ে।
খলিষখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফর বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। তারা এসব নিম্ন আয়ের মানুষের নামের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি যেয়ে সাহায্য পৌছিয়ে দিচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১১শ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।করোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে ঘরে ফেরাতে ও বাড়িতে অবস্থানকারী দুস্থ মানুষের মাঝে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দুপুরে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সাতক্ষীরা শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন। এসময় তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি করোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের আহবান জানান।
এসময় স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামানসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ খেটে খাওয়া ও দুস্থ মানুষের মাঝে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক লিটার তেল, এক কেজি লবণ ও একটি করে সাবান বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে জেলাব্যাপী ১১শ মানুষের মাঝে এই খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এদিকে করোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাধারণ জ¦র সর্দি কাশির জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বিএমএ ভবনে ইনফ্লুয়েঞ্জা কর্নার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই সাথে করোনো রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাসহ একটি ফ্লোর প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে করোনো মোকাবেলায় অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. আজিজুর রজমান, জেলা স্বাচিপের সভাপতি ডা. মোখলেছুর রহমান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী হাবিবুর রহমান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত, মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজী আরিফ আহমেদ, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির কর্মকর্তা কামরুজ্জামান রাসেল ও চায়না বাংলা হাসপাতালের এমডি আনিছুর রহমান। সভার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সকলের প্রতি করোনো মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান।
এ আতঙ্কের মধ্যেও বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তাহলে পরিস্থিতি মোকাবিলা আরো সহজ হবে।
https://web.facebook.com/100012369548896/videos/891990497889927/?t=2