প্রেমের সুত্র ধরে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ধর্ষণ: পরে হত্যা : এর পর লাশ গাছে ঝুলানো : গোসল ছাড়াই দেন ফজরের আজান:: সেই মুয়াজ্জিন রিমান্ডে

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করে গাছে ঝুলানো সেই মুয়াজ্জিন আশিকুল ওরফে কাফেলকে (২০) গতকাল গ্রেফতারের পর অআজ রিমান্ড শুনানি হয়েছে। রবিবার (২৯ মার্চ) দুপুর তিনটার দিকে পৌর শহরের মহিলা কলেজ রোডস্থ আক্তারুজ্জামান কিন্ডারগার্টেনের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার (২৭ মার্চ) সকালে ঘটনার সহযোগী আসামি মাদরাসা শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান ইছামুদ্দিনকেও (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন (২৮ মার্চ) ইছামুদ্দিন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

পরিবার সুত্রে জানা যায়, নিহত তাকমিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মো. আশিকুল নামে এক মুয়াজ্জিনের সাথে। আশিকুল স্থানীয় আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মুয়াজ্জিন আশিকুলের সাথে প্রায় এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী আঠারোদানা গ্রামের দরিদ্র আব্দুল মতিনের এসএসসি পাস মেয়ে তাকমিনার সাথে আশিক ওরফে কফেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে আশিকুল ওরফে কফেল বহুবার মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হয়। সোমবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে তিনটার দিকে আশিকুল পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাকমিনাকে বাড়ি থেকে পারাভরট জামে মসজিদের পাশের রমজান আলীর ভিটায় নিয়ে আসে। এ সময় আশিকুল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং মাহফুজুর রহমান ওরফে ইছামুদ্দিন ও আরিফ পাহাড়া দেয়।

এ সময় মেয়েটি আশিকুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় এবং বলে আমাকে বিয়ে না করলে হুজুরকে বলে দেয়ার হুমকি দেয়। এতে আশিকুল ওরফে কাফেল ক্ষিপ্ত হয়ে পাহারারত দুই বন্ধুকে ডেকে তাকমিনাকে মাটিতে ফেলে মাহফুজ ও আরিফ তাকমিনার বুকে চেপে বসে ও আশিকুল মাথার পাগড়ি খুলে গলায় পেচিয়ে হত্যা করে। পরে টেনে হিচড়ে রিয়ে পাশের জাম গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এ সময় তাকমিনার পা মাটির সাথে লেগে ছিল।

ঘটনার পর আশিকুল ওজু-গোসল ছাড়াই ফজরের আজান দেয়। পরে মসজিদের ইমান সাহেব না আসায় আশিকুল নিজেই ফজরের নামাজ পড়ায়।

পরে ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকমিনার লাশ একটি জামগাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তাকমিনার লাশ গাছে ঝুলানো থাকলেও পা মাটিতে লেগে ছিল। পাশেই পড়েছিল তাকমিনার মোবাইল।

মুসল্লিরা লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলকে জানায়। পরে রিয়েল গফরগাঁও থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার।

আঠারদানা জামে মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল বলেন, মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ভোররাতে ফজরের নামাজের আজান দেয় মুয়াজ্জিন আশিকুল। ওই দিন ইমান সাহেব না থাকায় ফজরের নামাজের ইমামতিও করেন আশিকুল। এর পর থেকে মসজিদে গিয়ে মুয়াজ্জিন আশিকুলকে আর দেখা যায়নি।

তাকমিনার ছোট বোন সুমাইয়া বলেন, তাকমিনা রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে কখন উঠে চলে যায় আমি টের পাইনি। তবে, তাকমিনা গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। সেই মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।

তাকমিনার বাবা মতিন মিয়া বলেন, প্রেমের ফাদে ফেলে আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে আশিকুল ধর্ষণের পর হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি আশিকুলসহ তার সহযোগীদের ফাঁসি চাই।

গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রধান আসামি আশিকুল ওরফে কফেলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার কররা হয়েছে। আশিকুলকে সোমবার (৩০ মার্চ) আদালতে পাঠানো হবে। হত্যার আগে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

এর মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকমিনার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই দিন বিকালে তাকমিনার বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামী করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।