ছুটি, তবু ছুটি নয়। ক্লাস চলছে পুরোদমে। ঘড়ি ধরে সময় মেনে ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষকেরা। মন দিয়ে নোট নিচ্ছেন, পড়া বুঝে নিচ্ছেন পড়ুয়ারাও। ফলে লকডাউনেও সিলেবাস শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা মিলছে। পুরো ব্যবস্থাটাই হচ্ছে অনলাইনে। এভাবেই পড়াশুনা চলছে সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় জনজীবন হয়ে গেছে স্থবির। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে এর প্রভাব এসে পড়েছে শিক্ষাজীবনেও। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ২০ মার্চ থেকে এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছে অনলাইন ভিত্তিক পড়াশুনা।
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রত্যেক শ্রেণির সেকশনভিত্তিক অনলাইনে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে প্যানেল আর লগইন করার বিশেষ কোড। এই কোড ব্যবহার করে তারা যাবতীয় সুবিধা নিচ্ছে।
যেখানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছেন এ কার্যক্রমে তার সহায়তা দেয়ার জন্য। পুরো কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণও রয়েছেন। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীর সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। এইভাবে চৌকষ শিক্ষকেরা অনলাইনে ভিডিও ক্লাস নিয়ে তা শিক্ষার্থীদের দোড়গোরায় পৌঁছে দিচ্ছে। শিক্ষকেরা ছাত্র ছাত্রীদের পাঠের সহায়তার জন্য লেকচার শীট তৈরী করছে যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। ইতোমধ্যে শিক্ষকেরা ওয়েব সাইটে বিভিন্ন বিষয়ের ৭৫৪টি লেকচার শীট জমা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি ছাত্রের মোবাইল ফোন, মেইল এড্রেস এই সফটওয়্যারে সংরক্ষিত আছে। এর ফলে শিক্ষকেরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিচ্ছেন। ছাত্র ছাত্রীরাও তাদের যে কোন সমস্যা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানাচ্ছে এবং শিক্ষকেরা তার তাৎক্ষণিক সমাধান দিচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থী নয় তাদের অভিবাবকগণও এই অ্যাপ ব্যবহার করে যে কোন পরামর্শ দিতে পারেন। এমনকি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যাবে কবে কোন ছাত্রের জন্মদিন। সেই দিনে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়ে থাকে। ফলে বাড়িতে বসেই শিক্ষার্থীরা স্কুলের স্বাদ পাচ্ছে।
অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় এক দিকে যেমন ছাত্রছাত্রীরা খুশি, তেমনই সন্তুষ্ট অভিভাবকেরাও। তারা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওই স্কুলের পরিচালক আলাউদ্দীন ফারুকী প্রিন্স বলেন, ‘করোনা-ত্রাসের জেরে স্কুল বন্ধ। কবে ফের খুলবে তার ঠিক নেই। এই অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে পড়াশোনা বন্ধ না থাকে, তার জন্য তাদের কথা ভেবেই অনলাইনে পড়াশোনা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে আবার আমাদের শিক্ষকম-লীদেরও ব্যতিক্রম কর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক অভিভাবক আমাদের এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যা আমাদের আরো এরকম বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। আমরা আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে তারা এগিয়ে যাবে।’ স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, বাড়িতে থেকে পড়াশুনার মধ্যে থাকলে সময় ভাল কাটছে। সবসময় করোনা-আতঙ্কও তাড়া করছে না। পড়ুয়ারাও পড়াশোনার মধ্যে থাকছে।
ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সায়েমা সানজীদা বলেন, আচমকা স্কুল ছুটি হওয়ায় সিলেবাস শেষ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। এইসময়ে মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারলাম অনলাইনে আমাদের পড়াশুনা চালু থাকবে। মনটা খুশি হয়ে গেল। এছাড়া এই দীর্ঘ সময়টকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় যে বিষয়েও জানাচ্ছেন। স্যারেরা মোবাইলে খোঁজ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বেশ আছি।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সাতক্ষীরাতে সর্বপ্রথম আইএসও সনদ লাভ করে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …