ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত শনিবার এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃতের শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ বিদ্যমান ছিলো। এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে রোগী আসলে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না? আসলে আইইডিসিআর কোন স্বীকৃত নীতিমাল অনুসরণ করছে না। এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরÕর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু ভ্ইারাসটি নতুন। সেজন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও কোন নীতিমালা আমাদেরকে দেয়নি। তাহলে কিভাবে করছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে বিভিন্ন গবেষণাপত্র ঘেটে আমরা স্থির করেছি এই করোনা ভাইরাস ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত একজন মৃত ব্যক্তির শরীরে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে । সেই হিসেবে বলা চলে ৬ ঘণ্টা পর মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস নিস্ক্রীয় হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন সন্দেহজনক ব্যক্তির মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করতে অনেক সময় ১০ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে হয়তো মৃত ব্যক্তি সংক্রমণে মারা গেলেও তা ধরা নাও পড়তে পারে। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত ৫৮ বছর বয়সি ঐ ব্যক্তিকে সোমবার রাতে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। মৃত্যুর আগে তার করোনা হয়েছে কিনা তা জানা সম্ভব ছিল যদি কুয়েত মৈত্রীর নেয়া নমুনা আমলে নেয়া হতো। আইইডিসিআর তা আমলে না নিয়ে মঙ্গলবার সকালে নমুনা সংগ্রহ করতে যায়। এর আগে সিলেটে মারা যাওয়া তিন জনের নমুনা সংগ্রহও করা হয় বহু বিলম্বে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভীষণ ছোঁয়াচে এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো, টেস্ট, টেস্ট ও টেস্ট। প্রত্যেক সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করতে হবে। যদি সে কোভিড পজেটিভ হয়, তাহলে তার লক্ষণ দেখা দেয়ার দুই দিন আগ পর্যন্ত তিনি কার কার সঙ্গে ছিলেন সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে কী হচ্ছে? আইইডিসিআর বলছে, দেশে করোনা রোগী এ পর্যন্ত ৫১ জন। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে এই রোগ সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতি। বিশ্বব্যাপি যেখানে এই রোগে মৃত্যু হার ৪.৪ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে ১০ শতাংশেরও বেশি। কারণ ৫১ জন আক্রান্তের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। দেশে শুরু থেকে শুধুমাত্র আইইডিসিআরই রোগের পরীক্ষা করেছে। এখন সীমিত পরিসরে ঢাকার বাইরে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে।
অথচ করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো লক্ষণহীন জীবাণুবাহী লোকজন।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউ) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক মানবজমিনকে বলেন, একটি মৃতদেহে করোনা ভাইরাস ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত জানা তথ্যমতে, এটা মানবদেহের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়। জীবিত মানুষ ছাড়া এই ভাইরাস সার্ভাইভ করতে পারে না। এটা জীবিত মানুষ ছাড়া অন্য কোথাও যেমন, কাপড়, টেবিলে ইত্যাদিতে পড়ে থাকলে এবং মানবদেহে যদি প্রবেশ করতে বা সংস্পর্শে না আসতে পারে তাহলে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এই ভাইরাস নিঃশেষ হয়ে যায়। মানব দেহে আমরা যেটা পরীক্ষা করি হোক সে জীবিত অতবা মৃত (ব্যক্তি) সেটা করোনা ভাইরাসকে সনাক্ত করি না। আমরা এন্টিবডি পরীক্ষা করি। অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হলে আমাদের শরীরের যে এন্টিবডি সেটার মাত্রাটাকে আমরা মেজার (পরিমাপ) করি। ভাইরাসটি আমাদের শরীরে যখন প্রবেশ করে তখন আমাদের কোষ ঝিল্লির মাধ্যমে এটা ফুসফুসে চলে যায়। এছাড়া অনেক সময় এটা আমাদের শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতরে যে সাদা রক্তকনিকা আছে সেগুলো এই এন্টিবডির সঙ্গে যুদ্ধ করতে যায়। কোভিড ভাইরাসটি যখন সংক্রমিত হয় তখন এটার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসে আমাদের শরীরের যে প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বেত কনিকা থাকে তারা। এটাকেই আমরা ব্যক্তির মৃত্যুর পরে পরীক্ষা করে দেখি যে তার শরীরে এন্টবডিটা বেড়ে গিয়েছিলো কি না এবং সে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলো কি না! তাহলে মৃতের শরীরের মধ্যে এই ভাইরাস ছয় ঘন্টা পরে নিতে নিতেই সেটা মরে যাবে। কারণ এটা সক্রিয় থাকার জন্য একটি মানুষের শরীর দরকার। নাক, মুখ- চোখ দিয়ে মানুষের শরীরে এটা ঢুকতে না পারলে ছয় ঘন্টা পরে এটা নিজে নিজেই মরে যাবে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত জানা তথ্যমতে, একটি মৃত লাশের শরীরের বাইরে থাকা ভাইরাস মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে। এজন্য লাশ দাফনের জন্য ছয় ঘণ্টা বিলম্ব করা ভালো। দাফন হয়ে গেলে তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে আমরা যখন পরীক্ষা করি তখন এটার অস্থিত্ব প্রমাণ করবে মৃতের এন্টিবডি দিয়ে। রক্তের মধ্যে তার এন্টিবডি কেমন ছিলো। এটা দিয়ে আমরা বলতে পারবো সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলো কি না? একজন মৃত ব্যক্তির শরীরে কতো ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করা দরকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইভাবে বলা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নমুনা সংগ্রহ করা যাবে ততো ভালোভাবে এটা প্রমাণ করা যাবে। আর যদি শরীরের এন্টিবডি সেলগুলো ভেঙ্গে বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এটা প্রমান করা যাবে না। কাজেই মৃত ব্যক্তির নমুনা সঠিক সময়মত সংগ্রহ করাটা জরুরি। যত বিলম্ব করবে এটার সঠিক সনাক্তকরণ সম্ভব নাও হতে পারে।