নারায়ণগঞ্জে হার্ট এ্যাটাকে মারা যাওয়া নারীর দেহে করোনা ভাইরাজ ছিল :আইইডিসিআর : আক্রান্ত সন্দেহে ১ জন আইসোলেশনে, চিকিৎসকসহ ১০ জন কোয়ারেন্টিনে

ক্রাইমবার্পতা রিপোট:    নারায়ণগঞ্জের বন্দরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) রাতে জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে আক্রান্ত নারীর বাড়িসহ ওই এলাকার একশ পরিবারকে লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন।লকডাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে।

লকডাউন অভিযানে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ছাড়াও সেখানে ছিলেন বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার, জেলা করোনা ফোকাল পার্সন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের, র‌্যাব-১১ সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার জানান, গত ২৯ মার্চ (রোববার) বন্দর উপজেলার সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায় ৫০ বছর বয়সী এক নারী শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হলে স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হলে স্বজনরা তা না মেনে ওই দিনই বাড়িতে ফেরত নিয়ে যান।পরদিন (৩০ মার্চ) ওই নারী আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠায়।

এর মধ্যে স্বজনরা লাশ নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর আগে ওই নারীর হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে স্বজনরা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ভেবে ওই নারীর দুই ছেলে এবং মেয়ের জামাতাসহ অন্যান্য নিকটাত্মীয়-স্বজন স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আইইডিসিআর এর পরীক্ষায় ওই নারীর করোনা ভাইরাস পজেটিভ বলে শনাক্ত হলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাত দশটা থেকেই সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন লকডাউনের প্রস্ততি নিতে থাকেন। পুরো এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে ঘরের ভেতরে থাকতে এবং বের না হতে সতর্ক করে দেয়া হয়। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে পরিবার ও এলাকাবাসী শুরু থেকে জানলেও বিষয়টি গোপন রেখে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করে ফেলেছে। বন্দর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, নিহত নারীর বাড়িসহ আশেপাশের একাংশ পরিবারকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের এই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায় প্রবেশের তিনটি রাস্তার দুইটি পথ সরু হওয়ায় টিনের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। মূল সড়কের পাশে আক্রান্ত বাড়ির প্রবেশের গলির মুখে পাঁচজন পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়ার জন্য মোতায়ন করা হয়েছে।

যে দুটি সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানেও দুজন করে পুলিশ নিয়মিত পাহারায় থাকবে। এছাড়া স্থানীয় পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশের পাশপাশি তারাও নজরদারি করবেন, যাতে ওই একশ পরিবারের কোনো সদস্য বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন।

এছাড়া লকডাউনের আওতায় রাখা পরিবারগুলোর সদস্যদের কাছে ইউএনও, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং ওসিসহ সবার মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। যাতে অন্য কারো শরীরে করোনা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক জানাতে পারেন। এর পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারকে চাল ডালসহ যে কোনো সামগ্রী প্রয়োজন হলে ফোন করে জানালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সরবরাহ করা হবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।