‘আমার করোনো হয়নি অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন চাকমা গত ২৬ মার্চ ফেসবুকে এই পোস্ট দেন। সুমন মারাই যান। ফুসফুসে টিউমারের অসুখে ভুগে আজ সোমবার সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলায় বাড়ি সুমন চাকমার। তাঁর বাবা সুপেন চাকমা একজন কৃষক। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। সুমনই বড় সন্তান। সুপেন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে সুমনের অসুস্থতা দেখা দেয়। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। চিকিৎসকেরা জানান, সুমনের ফুসফুসে ক্যানসার হয়েছে।
সুপেন চাকমা বলেন, ‘বক্ষব্যাধি হাসপাতালে তিন মাস ছিল। পরে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় ওকে আমি ইন্ডিয়া নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যানসার না, ফুসফুসে ছোট একটা টিউমার হয়েছে। থেরাপি দিয়ে দেয়। পরে দেশে ফিরে আসি। পরে আবারও চেক আপের জন্য ভারতে যায় সুমন। সেখানেও বলল, রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে। ২০১৯ সালের জুনে ফিরে আসে। পরে সুস্থ বোধ করায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, আবার পড়াশোনা শুরু করে।’
কিছুদিন ভালোই ছিল সুমন। এ বছরের শুরুর দিকে সুমনের অসুখটা আবারও বেড়ে যায়। চীন থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস ততদিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। মার্চ মাসের শুরুতে বাংলাদেশেও তার সংক্রমণ শুরু হয়। ওদিকে সুমনেরও তখন চিকিৎসা দরকার। কিন্তু বাবার অভিযোগ, কোথাও চিকিৎসা পাননি সুমন। দেশের বিভিন্ন নামকরা সরকারি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে এই সন্তানহারা বাবা বলেন, ‘কোনো জায়গায় আমি স্থান পাইনি।’ আগের রিপোর্টগুলোর কথা জানালেও কোনো হাসপাতালে তাঁর জায়গা হয়নি।
কোথাও ভর্তি হতে না পেরে সুমন গত ২৬ মার্চ ফেসবুকে অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
সুপেন চাকমা বলেন, ‘আমি ভাবলাম, ঢাকায় থাকলে তো বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে হবে। তাহলে ঢাকা থেকে বাড়িতে মরে গেলেও ভালো হবে।’ তিনি জানান, পরে বাড়ি নিয়ে যান। চট্টগ্রামের এক হোমিও চিকিৎসক ২৪ দিনের কিছু ওষুধ দেন। ওষুধ শেষ হয়ে যায়। যান চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি ওষুধ আনতে যেতে পারেননি। তবে আজ বেলা ১১টার দিকে ওষুধ আনতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সুমন সব ছেড়ে চলে যান।
বাবা জানান, সুমন পড়াশোনাতেও ভালো ছিল। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সে বিদেশে যেতে চেয়েছিল। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সুপেন চাকমা বলেন, ‘পরশু দিন বলল, বাবা আমাদের আত্মীয়স্বজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাব। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। দোয়া করবেন, পরপারে আমার ছেলে যেন ভালো থাকে।