আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট সাতক্ষীরা : পাশ্ববর্তী জেলা সমূহে করোনা ভাইরাসের বিস্তার লাভ করায় সাতক্ষীরার পার্শ্ববর্তী জেলার সীমান্ত এবং আন্তঃউপজেলা সমূহের যোগাযগো বন্ধ করে দয়ে হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশি দেশ ভারতে সংক্রম ভাইরাসটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় জেলা অঘোষিত লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে ভারত থেকে কয়েকশ বাংলাদেশী প্রবেশ করায় করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পয়েছে।
গত দু’দিনে জেলাতে ৯১ জনের নমূনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। বাকি ৮৩ জনের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে জেলা বাসি।
করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোমানা খাতুন (৩৮) নামের এক নারী ভর্তি রয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের ওলিউর রহমানের স্ত্রী। এ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন দুই জন।
এদিকে, সাতক্ষীরায় বিদেশ ফেরত আরো নতুন ৪২ জনসহ মোট ৩ হাজার ১৫৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ছাড় পত্র দেয়া হয়েছে আরো ১ হাজার ১৩৮ জনকে। অপরদিকে, নারায়নগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরার দেবহাটায় আসা চারটি পরিবারকে লক ডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়,সাতক্ষীরা জেলার সাথে জলার সাথে পার্শ্ববর্তী জেলার সকল সীমান্ত এবং আন্তঃউপজেলা সীমান্ত জরুরী সেবা ব্যতীত (যেমনঃ রোগীবাহী গাড়ি, ঔষধ পণ্যবাহী গাড়ী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মালামালবাহী গাড়ী) সকল প্রকার যানবাহন ও জনচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে
সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্ব মানুষকে নিজ বাড়িতে রাখতে সচেতনতামূলক অভিযান পাশাপাশি মাইকিং করা হয় এবং শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নিত্যিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
সাতটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭টি টিমসহ জেলা সদরে পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে ৪টি টিম নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
সাতক্ষীরা শহরে এবং প্রতিটি উপজেলায় রাস্তায় রাস্তায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মেশিনের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটানো অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ১০০০ লিটারের ২টি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
গত ৬ এপ্রিল,২০২০ তারিখে ভারত থেকে থেকে আসার জন্য ১৩ জনকে সাতক্ষীরা যুব ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সার্বক্ষণিক তাদের খোজখবর নিচ্ছেন।
প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৪২৫ মেঃ টন চাল এবং ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৩৭,২০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ জন সদস্যের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ লিটার তৈল এবং একটি সাবানের প্যাকেজ সমাজ কল্যাণ তহবিল হতে বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় ৫০০ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলায় বিতরণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার মাস্ক ক্রয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০৪০০ মাস্ক মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ডাক্তার, মেডিকেল স্টাফ এবং নার্সদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে এম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৫০ টি পিপিই মজুত রয়েছে। এবং সিভিল সার্জন, সাতক্ষীরা ১০০০ পিপিই প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে বিতরণ করেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার এর সহযোগিতায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন জেলা এবং উপজেলাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতন থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, নিজে নিরাপদ থাকুন, নিজ পরিবারকেও নিরাপদ রাখুন।
জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪০টি মামলায় ৩৬৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৯ টি মামলায় ১২৭০০ টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ৩টিমামলায় ১৫০০ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ১টি মামলায় ২০০ টাকা, তালা উপজেলায় ১ টি মামলায় ৫০০ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১১ টি মামলায় ৭১০০ টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫ টি মামলায় ১৪০০ টাকা।
মসজিদে নামাজ ও জামায়াতের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সাতক্ষীরাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন সময়ে বাস- মালিক সমিতির শ্রমিকদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে ১৭৯ জনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।পর্যায়ক্রমে সকল পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসক জেলার জনপ্রতিনিধি মাননীয় সংসদ সদস্যবর্গের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জেলার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলোচনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক কর্মসূচী বাস্তবাযন করে চলেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান,সাতক্ষীরা জেলাকে করোনার ঝুকি কমাতে সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আইন না মানায় আপরাধীদের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলাও করা হয়েছে।
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …