মুহাম্মদ নূরে আলম : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ক্রমেই রাজধানী ঢাকা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবার কবলে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। গত ৮ মার্চ থেকে আজ ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাসে দেশে মোট ২১৮ জন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৪ জনই রাজধানী ঢাকার। গত এক মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত রোগীদের সিংহভাগই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। আর সারাদেশে করোনা রোগের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬০ জনের। গতকাল ৭ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীর ৪২টি এলাকায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এ সব এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস ক্রমেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর লাখ লাখ বাসিন্দা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হলো দক্ষিণ এশিয়া যেখানে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ (১.৮৪১ বিলিয়ন (বিশ্বব্যাংক, ২০১৮) বসবাস করে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে বাংলাদেশ- যেখানে করোনাভাইরাস খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এর মূল কারণ- দক্ষিণ এশিয়ায় দেশ বাংলাদেশ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহর। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ হবার কারণে এবং মানুষের ব্যক্তিগত ও আচরণগত সুস্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতা অনেক দুর্বল থাকায় পর্যাপ্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অনুপস্থিতে সহজেই এ ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতে নিম্ন লিখিত কারণে ঢাকার শহর ও সারাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ গুলো হলো: সীমিত শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও মানসম্মত পরীক্ষাগারের অপ্রতুলতা, চিকিৎসাকর্মী ও হাসপাতাল শয্যার স্বল্পতা, বিদেশ প্রত্যাগতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে না রাখা কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইলে যথার্থ মনিটরিং না করা, আইসোলেশন, আইসিইউ-ও ভেন্টিলেশনের অপ্রতুলতা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) সুরক্ষা পোশাক-এর অপ্রতুলতা ও করোনা চিকিৎসায় ভীতি, বিলম্বে লক ডাউন ঘোষণা করা, সচেতনার অভাব ও সংক্রমণকালে জনসমাগম এড়িয়ে না চলা, অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর, নগরায়ণ, ভাসমান ও বস্তি জনগোষ্ঠী, বাস্তুচ্যুত, শরণার্থী ও রোহিঙ্গা শিবিরে ঝুঁকি, অপ্রতুল প্রস্তুতিতে ঝুঁকিতে কারাবন্দি জনসংখ্যা, অপ্রতুল স্বাস্থ্য বরাদ্দ, স্বাস্থ্য ব্যয় ও দারিদ্য জনগোষ্ঠী ইত্যাদি।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ আছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শপিংমলসহ মার্কেটও বন্ধ। সংক্রমণের আশঙ্কায় মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ ৫ জন ও শুক্রবার জুমার নামাজে ১০ জনের বেশি নিয়ে জামাত করা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলটিতে বর্তমানে ৩৪% মানুষ নগরে বসবাস করা মানুষ। দিল্লি, মুম্বাই, ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি মেগাসিটির ৩টি। বাংলাদেশে ৩৭%, ভারতে ৩৪%, নেপালে ২০% এবং পাকিস্তানে ৩৭% মানুষ নগরে বসবাস করে। তবে উল্লেখ্য যে, এখানে নগর জনসংখ্যার ৩০.৫%-ই বস্তিবাসী যারা মূলত গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জড়িত। বস্তিতে শহরে জনসংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশে ৫৫%, ভারতে ২৪%, এবং পাকিস্তানে ৪৫.৫% বসবাস করে। বস্তির পরিবেশ, অপরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব লক্ষ্যনীয়। পরিষ্কার পানির অভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মিডিয়ায় প্রচারিত বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার যে প্রচারণা তা বাস্তবায়ন বস্তিতে যেন বিশেষ এক চ্যালেঞ্জ। দেশজুড়ে যদি করোনা ভাইরাসের গণসংক্রমণ হয় তাহলে অত্যন্ত ঝুঁকিতে থাকা এ সকল বস্তির নিম্নবিত্তের মানুষ যারা শহরে রয়েছেন কিংবা লক-ডাউনের মতো কর্মসূচিতে স্থান পরিবর্তন করেছেন তারাই হতে পারেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ২০১৮-এর তথ্যানুযায়ী, একক ভাবে ভারতে রয়েছে বিশ্বের ১৭.৯% (১.৩৫২ বিলিয়ন), পাকিস্তানে ২.৬% (২১২.২১৫ মিলিয়ন) এবং বাংলাদেশ ২.২% (১৬১.৩৫৬ মিলিয়ন) মানুষ। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট ২০১৯ এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৮.১ মিলিয়ন। তবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত জনসংখ্যা বিভাগের তথ্যানুযায়ী (২০১৭) প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাংলাদেশে ১২৬৫ জন, ভারতে ৪৫০, পাকিস্তানে ২৫৫.৬, নেপালে ২০৪, শ্রীলংকায় ৩৩২.৯ জন বসাবাস করে। এ ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে রয়েছে ১৫০ আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫.৫ জন। উল্লেখ্য যে, সমগ্র দেশের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম হলেও প্রদেশ/এলাকা/শহর ভিত্তিক বেশি জনঘনত্ব হওয়ার কারণে যেমন: ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যে সকল রাষ্ট্রে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থেকে যায় যদি না সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ও শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিরাজমান থাকে।
গত শনিবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬ জন। গতকাল রোববার পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত ৮৮ জনের মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৪২ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত কৌশল বা পর্যায় প্রথমতঃ সনাক্তকরণ, দ্বিতীয়তঃ পরীক্ষা করা, তৃতীয়তঃ চিকিৎসা করা, চতুর্থতঃ আইসোলেট করা এবং পঞ্চমতঃ সংস্পর্শে যাওয়াদের চিহ্নিত করা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একই সাথে- ‘টেস্ট, টেস্ট এন্ড টেস্ট’ বা পরীক্ষার উপর গুরুত্বদান করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত আশানুরূপ ভাবে তা করতে পারছে না। অপর্যাপ্ত পরীক্ষাগার ছাড়াও এ অঞ্চলে রয়েছে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত টেস্ট কিটের স্বল্পতা। বাংলাদেশে কেবল শুধু আইইডিসিআর থেকে টেস্ট করানোর সুযোগ রাখা হয়েছিল বিশেষায়িত মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার ছাড়া করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা সম্ভব নয় বলে। শুরু থেকেই আরও বিশেষায়িত হাসপাতালে বা ল্যাবে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা না রাখায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত (৩০ মার্চ ২০২০) টেস্ট করা হয়েছে মাত্র ১৩৩৮ জনের যাদের মধ্যে নিশ্চিত ৪৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। বর্তমানে পরীক্ষার পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলেও পরীক্ষার জন্য যান্ত্রিক উপকরণের পাশাপাশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন সঠিক ফলাফল নিশ্চিতকরণের জন্য। আক্রান্ত কিংবা আক্রান্ত নয় তা জানাটা বেশ জরুরি। স্ক্রিনিং করতে না আসার কারণগুলোর মধ্যে ভয় যেন একটি। মানুষ এখানে রোগে ভুগলেও চিকিৎসকের কাছে সহজে যেতে যায় না, এমনকি ওষুধও খায় না। ফলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারের স্বল্পতার পাশাপাশি চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ায়ও স্ক্রিনিং না হতে পারে। অধিকন্তু, বাংলাদেশে শনাক্তকরণের প্রথম দিকেই উপযুক্ত কিট ছিল না বা নেই বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ সঙ্গে আলাপকালে, তিনি গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানী ঢাকা অধিক ঘনবসতিপূর্ণ হওযায় রোগটির দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ বারবার দেশবাসীকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে নির্দেশনা দিলেও নগরবাসীর অনেকেই নির্দেশনা মানছেন না। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে তারা রাস্তাঘাটে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, অত্যাবশ্যক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে বের হওযার পরামর্শ দিলেও তা মানছেন না। এ হিসেবে এ মুহূর্তে ঢাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে খুবই ধীর গতিতে হলেও বর্তমানে সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে। তিনি জানান, সারাদেশে পাঁচটি ক্লাস্টার (নির্দিষ্ট একটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া) নারায়ণগঞ্জ ১টি, মাদারীপুরে ১টি, গাইবান্ধায় ১টি ও রাজধানীতে ২টি ক্লাস্টারে সংক্রমণ ঘটেছে। রাজধানীতে মিরপুরের টোলারবাগ ও বাসাবোতে সামাজিকভাবে সংক্রমণ ঘটেছে। এক্ষেত্রে রাজধানীতেই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অবশ্য ইতোমধ্যেই টোলারবাগ ও বাসাবোতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার পাশাপাশি ওই এলাকা লকডাউন করে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তির ভূমিকা বেশি। এক্ষেত্রে সরকার সংক্রমণরোধে যত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপই গ্রহণ করুক না কেন ব্যক্তির সচেতনতাই অন্যকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে সীমিত পরিসরে হলেও সামাজিক সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণরোধে অনেকেই সতর্কতামূলক নির্দেশনা মেনে চলছেন না। এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, আক্রান্ত রোগীদের দুইভাবে হাসপাতালে ও বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে হোমকেয়ার গাইডলাইন অনুযায়ী মৃদু লক্ষণ ও উপসর্গ (সামান্য জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি) থাকা রোগীদের বাসায় রেখে চিকিৎসা করা হয়। তাদের একটি নির্দিষ্ট ঘরে আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা করা হয়। এদের ক্ষেত্রে শুধু তারাই নন, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিদিন ফোন করে সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাওয়া হয়।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এভাবে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাড়ি থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে কারও শ্বাসকষ্টসহ অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে বাস্তুচ্যুত, শরণার্থী ও রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েকটি দেশেই রয়েছে বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী জনগোষ্ঠী। তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ক্যাম্পগুলো নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক যদিও এখনও সেখানে কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যেন এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। ফলে এখানে রয়েছে উচ্চ ঝুঁকি।
দক্ষিণ এশিয়ার কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি জনবহুল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি (প্রায় নব্বই হাজার) রয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে অধিক বন্দির অবস্থান ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে এ কারাবন্দিরা। জানা যায়, দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে নাকি স্থাপন রয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। কারাগারগুলোতে নিম্নমানের ভেন্টিলেশন ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। এক্ষেত্রে কোনো কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে তা হবে বেশ আশংকাজনক।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশেই জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। সবচেয়ে বেশি অপ্রতুল বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৭ সালের এক তথ্যানুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রতি হাজারে চিকিৎসক রয়েছে ০.৩ জনেরও কম। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চিকিৎসক রয়েছে মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রতি হাজারে ১ জন। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি ১০০০ মানুষের জন্য ডাক্তার রয়েছে ০.৮ যেখানে বাংলাদেশে ০.৫ জন। আর প্রতি ১০০০ মানুষের জন্য নার্স- মিডওয়াইফ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ১.৭ যেখানে বাংলাদেশে ০.৩ এবং ভারতে ২.১ জন। এ চিত্র স্পষ্টতই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বল দিককে প্রতিফলিত করে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি ১০০০ মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যা রয়েছে মাত্র ০.৭ যেখানে বাংলাদেশে ০.৮, ভারতে ০.৭, পাকিস্তানে ০.৬ আর নেপালে ০.৩। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, ইউরোপে ৮০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ জার্মানির আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২৮,০০০ আর ৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ইতালিতে এ মহামারীর পূর্বে ছিল মাত্র ৫০০০। ইউরোপের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুহারকে হাসপাতালের সামর্থ্য ও সংক্রামিতদের বয়সের মানদণ্ডে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে।
আইসোলেশন, আইসিইউ-ও ভেন্টিলেশনের অপ্রতুলতা: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ঢাকায় ১০০৫০টি সহ সমগ্র দেশে ১৪৫৬৫ টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জানা যায়, ঢাকার বাইরে করোনা আক্রান্তদের জন্য কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সাপোর্টের প্রয়োজন পড়ে। দেশে ক্রিটিক্যাল রোগীদের এই সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পাঁচটি হাসপাতালে মাত্র ২৯টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে। ঢাকার বাইরে করোনা আক্রান্তদের জন্য কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর আইসোলেশন ও আইসিইউ প্রয়োজন। এর মধ্যে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন পড়ে। আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখেরও ওপরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ১২৮৫টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ২১১টি। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা খুবই কম। তবে দেশে যে আইসিইউ বেড রয়েছে সেগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া যাবে না। কারণ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে কোনো আইসিইউতে ঢোকানো হলে সেখানে থাকা অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন। করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আর যেসব মানুষের কোমরর্বিডিটি আছে বা ইমিনিউটি কম, তারা এ রোগে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাকিস্তান ও ভারতে সংক্রমণ বাড়লেও বাংলাদেশে যেন তা স্থিতাবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে জনমনে ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে প্রশ্ন রয়েছে। কম পরীক্ষা করাকেই দায়ী করা হচ্ছে। সেটা বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অত্যন্ত ঘন জনবসতি, দুর্বল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা (রোগ নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা-উপকরণের অভাব, বিশ্বাসযোগ্যতায় ঘাটতি, প্রশিক্ষিত প্রয়োজনীয় লোকবলের স্বল্পতা, কোয়ারেন্টিনে রাখার স্থানের অভাব), স্বাস্থ্যখাতে অর্থাভাব, বাস্তুচ্যুত/শরণার্থী, দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বিশ্বের অন্য অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগরবাসী নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রেখে পরিবারের সদস্য ও সর্বোপরি সমাজকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। গতকাল ৭ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমিত এলাকা ৪২টি ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৪ জন। গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর করোনা শনাক্ত স্থানগুলো হলো- হাজারীবাগ-১, উর্দু রোডে-১, বুয়েট এলাকা-১, লালবাগ-৪, ইসলামপুর-২, লক্ষ্মীবাজার-১, নারিন্দা-১, সোয়ারীঘাট-৩, ওয়ারী-৮, কোতোয়ালি-১, বংশাল-১, যাত্রাবাড়ী-৪, আদাবর-১, মোহাম্মদপুর-৫, বসিলা-১, ধানমন্ডি-৩, জিগাতলা-১, সেন্ট্রাল রোড-১, গ্রিনরোড-১, শাহবাগ-১, পুরানা পল্টন-২, ইস্কাটন-১, বেইলি রোড-১, মগবাজার-১, বাসাবো-৯, রামপুরা-১, বাড্ডা-১, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা-২, নিকুঞ্জ-১ ও আশকোনা-১। এ ছাড়া উত্তরা-৩, গুলশান-১, মহাখালী-১, কাজীপাড়া-১, মিরপুর-১০ নম্বর- ২, মিরপুর-১১ নম্বর-২, মিরপুর-১৩ নম্বর-১, মিরপুর-১ নম্বর-১, শাহ আলীবাগ-২, টোলারবাগ-১, উত্তর টোলারবাগ-৬, পিরেরবাগ-১ জায়গাগুলোতে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।নিয়
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …