সাখাওয়াত উল্যাহ: বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবদের সরকারি ত্রাণ বা রিলিফে অন্ত:ভুক্ত এখন সময়ের দাবি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশে আড়াই লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে। এসকল মসজিদে ৯ লক্ষাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন, খতীব ও খাদেম কর্মরত রয়েছেন। এসব মসজিদ রাজধানী ঢাকা থেকে নিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের প্রতিটি মুসলমান কোন না কোন মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আদি কাল থেকেই এদেশে মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মহল্লাভিত্তিক সমাজ কাঠামো।
এদেশের সতের কোটি মুসলমানের ঘুম ভাঙে ভোরে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আযানের সুমধুর সুরে। আবার সেই আযানের সুরে সুরেই অস্তমিত হয় সূর্য। মসজিদের সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের মানুষের হৃদয়ের সম্পর্ক। সকাল বেলা মুসলিম শিশুরা মসজিদের মক্তবে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা হাসিল করে। এদেশের সতের কোটি মুসলমানের ধর্মীয়-সামাজিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মসজিদ, মক্তব, আযান, কোরআন শিক্ষা ইত্যাদি।
দেশের আড়াই লক্ষ মসজিদের সম্মানিত ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ সমাজের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। ইমাম ও খতীবগণ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতির পাশা পাশি জুমআর খুুতবায় ইসলামের সৌন্দর্য মুসল্লিদের সামনে তুলে ধরেন। অবশ্য ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ মসজিদের দায়িত্বকে তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও ইবাদতের অংশ মনে করেন। তারা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে মিশে থাকেন। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরে সর্বশ্রেণির মানুষের সাথে থাকে তাদের সুসম্পর্ক। ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ তাদের মসজিদ ভিত্তিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতীয় ও সামাজিক বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রাখেন। তারা সমাজের মানুষকে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত জীবন গঠনের মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। প্রতি শুক্রবারে জুমআর খুতবার পূর্বে যে বয়ান পেশ করেন তা প্রতিটি মুসলমানই গুরুত্বের সাথে শ্রবণ করেন।
ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের পাশাপাশি ইমাম ও খতীবগণ সমাজের সকল প্রকার অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ, ধৈর্য ও পরমতসহিষ্ণুতা সম্পর্কে তারা বয়ান করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক, যৌতুক, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাভিচার, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনারমত সমাজ বিধ্বংসী ব্যাধিগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন। এইচআইভি এইডস, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মত জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে তাদের প্রশংসনীয় ও সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয় ডেঙ্গু জ্বর, করোনাভাইরাস সম্পর্কে গণসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি মসজিদে জুমার নামাজের পূর্বে ইমাম ও খতীবগণ বক্তব্য রেখেছেন। এছাড়া সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ যে কোন নির্দেশনা অতী সহজে ইমাম ও খতীবগণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। অথচ সমাজ ও রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর যুগ যুগ ধরে শুধু অবহেলিত ও বঞ্চিত হচ্ছে।
আমরা জানি একজন ইমাম বা খতিব এর বেতন মাসিক দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।মুয়াজ্জিনের বেতন এক থেকে দুই হাজার টাকা।অনেক মসজিদে টাকাই দেয়া হয়না। অথচ দৈনিক ৫ ওয়াক্তে এসব ব্যক্তিগন নির্দিষ্ঠ সময়ে বিরামহীনভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আমরা একবারও ভাবিনা কিভাবে তাদের সংশার চলে!
তাছাড়া অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবদের বেতন দেয়া হয় স্থানীয় অনুদান থেকে। দেশের বর্তমান পরিস্হিতিতে সে অনুদান এখন প্রায় বন্ধ। যে কারনে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন দেশের হাজার হাজার ইমাম মুয়াজ্জিন ওখতিবগণ।
এ অবস্থায় সম্মানীত অথচ আর্থিক অসচ্চল এসব ব্যক্তিদের সরকারি ত্রাণ বা রেশন দিয়ে সহযোগিতার দাবি উঠেছে।
সাতক্ষীরা থানা মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান সম্প্রতি জুমার খোতবায় এ সম্পর্কে জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এছাড়া জাতীয় ইমাম সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি মাও: আব্দুর রশিদ এক বিবৃতিতে জানান, ইমাম মুয়াজ্জিন খতাব ও খাদেমগন যেহেতু কারো কাছে চাইতে পারে না সেহেতু যারা সল্প বেতনে চাকরি করে তাদেরকে সরকারি সাহার্যের অন্ত:ভুক্তির দাবি জানান। লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …