ক্রাইমবার্তা রিপোটঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বারবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও চাল, তেলসহ ত্রাণ চুরি থামছেই না। প্রধানমন্ত্রী প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে তার জন্য হুঁশিয়ারি দেন, কিন্তু ত্রাণ চোরদের ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। এই চুরিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যাওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারাও বেশ ক্ষুব্ধ। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। এ যেন চুরির উৎসব শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবারও সিরাজগঞ্জে দিনভর পৃথক চারটি অভিযানে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা ৬০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়। এসব ঘটনায় একজন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের গাড়ীদহ ও নান্দিনা এবং খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দ্রকোনা এলাকায় এসব অভিযান চালানো হয়। এ সময় হাসিনুরের ছেলে রাজুকে আটক করা হয়। পরে একই গ্রামের আকবর আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১১ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে তাকেও আটক করা হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাগবাটি ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য আছিয়া খাতুনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৬ বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিন বিকেলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ১৮ বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের কোগাড়িয়া গ্রাম থেকে চালগুলো উদ্ধারের সময় দুজনকে আটক করা হয়। ওই দুজন হলেন- খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দরের চালের ডিলার জাহিদুল ইসলাম ও উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলাম।
একই দিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ২৮ বস্তা ত্রাণের চালসহ দুই ইজিবাইক চালককে আটক করে পুলিশ। বিকেলে পাচারের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে নবীগঞ্জে যুবলীগ নেতা নোমান হোসেনের গোডাউন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে মজুদ রাখা বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য উদ্ধার করা হয়। এ সময় অবৈধ ভারতীয় সিগারেটও জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা নোমান হোসেনের ছোট ভাইসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। পণ্যগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার আলীগঞ্জ বাজারের গোডাউন থেকে টিসিবি ৭৩ বস্তা চিনি, ১৯৬ বোতল সয়াবিন তেল, চিনি পরিবর্তন করা ৬ বস্তা ও চিনির ৯টি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়।
একইভাবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৫০ বস্তা চাল, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে টিসিবির ৭৬ বস্তা চিনি ও ১৯৬ বোতল সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এতে জড়িত ব্যক্তিকে আটকও করা হয়।
ইতোমধ্যে চাল চুরির অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে চার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও পাঁচ ইউপি সদস্যকে (মেম্বার)। সাময়িক বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যানরা হলেন- পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের মো. কোরবান আলী, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসীর ইউনিয়নের মো. আব্দুস সালাম, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের মো. আলাউদ্দিন পল্টু, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আন্দারমানিক ইউনিয়নের কাজী শহিদুল ইসলাম। সাময়িক বরখাস্তকৃত ইউপি সদস্যরা হলেন- কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুল মান্নান মোল্লা, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেকান্দার মিয়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহেল মিয়া, ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মুহাম্মদ ওমর এবং একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জুয়েল মিয়া।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন প্রায় ২০টি উপজেলায় চাল চুরির অন্তত ২২টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনপ্রতিনিধিসহ কমপক্ষে ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।
চাল চুরির হিড়িক
মানুষ ত্রাণের আশায় সারাদিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় ফিরছে খালি হাত
করোনা মহাদুর্যোগের মধ্যেও সারাদেশে চাল চুরির হিড়িক পড়েছে। ক্ষুধার্ত অসহায় গরীব মানুষ ত্রাণের আশায় সারাদিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফিরছে। লকডাউনে বিপাকে পড়া হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার সারাদেশে ত্রাণের চাল বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারের বরাদ্দ দেয়া চাল ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু অসাধু নেতার যোগসাজসে চুরির অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশেও বন্ধ হচ্ছেনা চাল চুরি। গতকালও বগুড়া এবং নেত্রকোণায় ত্রাণের চাল আটক করেছে পুলিশ। গত ১০দিনে সারাদেশে প্রায় ৩ হাজার বস্তা ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাল চুরির দায়ে ইতোমধ্যে ডিলার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতার জেল জরিমানারও খবর পাওয়া গেছে। আবার অনেকেই রয়েছেন পলাতক।
ত্রাণের চাল চুরির ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলসহ রাজনৈতিক অঙ্গণে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাণ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলবে তারা যেই হোক তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, করোনাভাইরাসের চলমান এই দুর্যোগে অসহায় মানুষের ত্রাণ যারা আত্মসাৎ করে তাদের মানুষ বলা যায় না; এরা মানুষরূপী জানোয়ার। তিনি এদের প্রতি ঘৃনা জানিয়ে সব জেলা প্রশাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি বা কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এই ত্রাণ আত্মসাতের তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি ত্রাণ গরীবরা পাচ্ছে না, ত্রাণের চাল ক্ষমতাসীনদের ঘরে চলে যাচ্ছে।
২০দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্ণেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, জাতির এই ক্রান্তিকালে যারা গরীবের হক মেরে খায় তারা দেশ ও মানবতার শত্রু। তাদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড দেয়া উচিত। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, চাল চোরদের কোন দলীয় পরিচয় নেই। যে দলেরই হোক তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, ত্রাণ নিয়ে কোন অনিয়মের অভিযোগ এখনো পাইনি। দেশব্যাপী দরিদ্র এমনকি মধ্যবিত্তদের ঘরেও খাবার ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে নিম্নআয়, কর্মহীন এমনকি মধ্যবিত্তদের মাঝেও তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৬৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল এবং ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ দেয়ায় কোন প্রকার অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
আমাদের সারাদেশের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, সরকারি চাল লোপাট করতে গিয়ে নাটোর, জয়পুরহাট ও যশোর কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও রয়েছেন। এছাড়া গাইবান্ধাতে সরকারের ১০ টাকা কেজি দরের বিক্রি করার জন্য দেয়া চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল নিয়ে মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওয়াজেদ হোসেন এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের মামলা করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নাটোর, রংপুরসহ সারাদেশে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
নরসিংদীর রায়পুরায় গত ৯ এপ্রিল রাতে ত্রাণের ৩’শ কেজি চাল বিক্রির দায়ে মিস্টার নামে এক ব্যবসায়ীর ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ব্যবসায়ী মিস্টার মিয়া উপজেলার মরজাল বাজারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চালের অনুমোদিত ডিলার ছিলেন। গত ৮ এপ্রিল নাটোরের সিংড়ায় চালসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও এক চাল ব্যবসায়ীকে আটক করে উপজেলা প্রশাসন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। একই দিনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছায় ৬৫ বস্তা চাল জব্দ করে পুলিশ। এসময় ডিলারের ছেলেসহ তিনজনকে আটক করা হয়। ৭ই এপ্রিল মঙ্গলবার যশোরে ৮০ বস্তা চাল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। শহরতলীর শানতলায় একটি গুদামে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে সরকারি চাল চুরির অভিযোগে রাকিব হাসান শাওন ও হাসিবুল হাসান নামে দুই যুবককে আটক করা হয়। একই দিনে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ১৩ বস্তা চালসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন শাহ ও একজন ইউপি সহ তিনজনকে আটক করে উপজেলা প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় মামলা করা হয়েছে। ওই দিন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুরে অভিযান চালিয়ে সাত বস্তা চাল জব্দ করে র্যাব। চাল চুরির অভিযোগে আটক করা হয় গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সাইদুর ও তার শ্যালক আনোয়ার হোসেনকে। ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে ১০০ বস্তা চাল আত্মসাতের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ৭ই এপ্রিল জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। ঘটনাটি ঘটে গাবতলী উপজেলার মহিষাবানে।
দন্ডপ্রাপ্ত মো. ওয়াজেদ হোসেন মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ডিলার। একইভাবে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে ২৮৮ বস্তা চাল চুরির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হক গাজীকে এক মাসের বিনাশ্রমকারাদন্ড দেন। ৬ই এপ্রিল সোমবার ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মনিরের বাড়ি থেকে ৫০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে মনির পলাতক রয়েছে। ৪ঠা এপ্রিল শনিবার যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় সরকারি গুদাম থেকে চুরি হওয়া ৫৫৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন। পৌর এলাকার বিজয়রামপুরের ভাই ভাই রাইস মিলের গুদাম থেকে এই চাল উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে মণিরামপুর থানার উপপরিদর্শক তপন কুমার সিংহ সাংবাদিকদের জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ট্রাকে করে চাল পাচারের খবর পেয়ে এই চাল উদ্ধার করা হয়। সরকারি চাল মজুদ করায় চালকলের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আটক ও চাল পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দ করা হয়। ৩রা শুক্রবার এপ্রিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি বাজারের একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ১৮ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করে পুলিশ।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আবু সাইদ জানান, এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে জড়িত ডিলার তারিকুল ইসলাম তারেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। একইদিনে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নে ভিজিএফ চাল চুরির অভিযোগে চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টুকে আটক করে পুলিশ। চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টুর এলাকায় বরাদ্দকৃত ৪৪ মেট্রিকটন চালের মধ্যে সাড়ে ২৭ মেট্রিকটন চাল বিতরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান। একইভাবে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়ন পরিষদে ১৩ বস্তাা চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম রুপমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় একই ইউপি মহিলা সদস্য শাহনা বেগমকে মারধর করেছে চেয়ারম্যানের স্বজনরা। ২রা এপ্রিল বৃহস্পতিবার নওগাঁর রাণীনগর এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ৩৩৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। কালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম আয়াত আলী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুনের নেতৃত্বে থানা পুলিশের সহায়তায় ওই চাল উদ্ধার করা হয়। একইদিনে ময়মনসিংহের ত্রিশালে উদ্ধার করা হয় ১৬ বস্তা চাল। উপজেলা প্রশাসন ডিলার আবু খালেকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই চাল উদ্ধার করে।
যশোর ব্যুরো জানায়, করোনা সংকটে গরীবদের মাঝে সরকারি ত্রাণ সাহায়্য বিতরণ চলছে প্রায় প্রতিদিনই। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও ব্যাপকহারে ত্রাণ সাহায্য দিচ্ছেন। এ নিয়ে জেলার কোথাও কোন অভিযোগ ও অনিয়মের কোন খবর পাওয়া যায়নি। যশোরে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সরকারি চাল চুরির একটি ঘটনা প্রশাসন তদন্ত করে দেখছে। ঘটনাটি হলো গত মঙ্গলবার বিকালে সদর উপজেলার সানতলা এলাকার একটি গুদাম থেকে কালোবাজার বিক্রি করা খাদ্য অধিদপ্তরের চার মেট্টিক টন (চার হাজার কেজি) চাল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। চাল সরকারি। তবে কোন প্রকল্পের না ত্রাণের তা তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন। এদিকে, গত ১০দিন আগে যশোরের মনিরামপুরে কাবিখার ৫৫৫ বস্তা বিক্রি করা চাল বিজয়রামপুরে ভাইভাই রাইস মিল এন্ড চাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি তদন্তে ৩সদস্যের কমিটি গঠণ করা হয়েছে। ওটি কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির চাল এটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দের পরিমাণ অতি নগন্য। এছাড়া প্রশাসনের উদ্যোগে সীমিত পরিমাণে খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনা প্রতিরোধে অঘোষিত লকডাউনে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে। এর মধ্যে সিমিত কিছু ত্রাণ বিতরন চলছে। সরকারি পর্যায়ে ১০ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল বিতরন ছাড়াও টিসিবি’র মাধ্যমে চিনি, ভোজ্য তেল ও পেয়াঁজ বিক্রি চলছে। তবে এসব পণ্য কিনতে দুর্ভোগ আরো সীমাহীন। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণের চাল ও নগদ টাকা তা যেমনি অপ্রতুল, তেমনি তা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে পৌঁছতে সময়ও লাগছে যথেষ্ট। তবে কিছু স্থানীয় জন প্রতিনিধি তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও ত্রান বিতরন করছেন। বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম গত কয়েকদিন ধরে সদর উপজেলার বিভিন্নস্থানে ত্রাণ বিতরন করছেন।
বগুড়া ব্যুরো জানায় সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বারংবার হুঁশিয়ারি সত্বেও চালচুরি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দুপুরে বগুড়ার শিবগঞ্জ থানা পুলিশের এক অভিযানে ধরা পড়েছে ১২০ বস্তা ১০ টাকা কেজির চাল। পুলিশ সুত্র জানায়, উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের বাড়িতে বিপুল পরিমানে ত্রাণের চাল মজুদ আছে মর্মে খবর আসে পুলিশের কাছে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১২০ বস্তা চাল উদ্ধার ও বাড়ির মালিক মোস্তাফিজারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মোস্তাফিজ পুলিশকে বলেছে চাউলগুলো তার চাচাতো ভাই সাজু এনে রেখেছে। এগুলো সে শিবগনজের এক ফেয়ার প্রাইস ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। এই ঘটনা ছাড়াও সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পৃথক আরো ৪টি বড় চাল আত্মসাতের ঘটনায় একজন ডিলারের জেল আারেকজন ডিলারের ডিলারশিপ বাতিলের ঘটনা ঘটেছে।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, জেলায় অভিযান চালিয়ে সরকারি ওএমএস-এর ৫ বস্তা চালসহ কালোবাজারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, গত ৯ এপ্রিল জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদরের চর নীলক্ষিয়াপাড়া লক্ষীপুর নামকস্থানে ওএমএস চাউল কালোবাজারে পাচারকালে জনগনের সহযোগিতায় চর পুলিয়ামারী ব্যাপারীপাড়ার পশর আলীকে আটক করা হয়। পরে সেখানে ৫ বস্তা ওএমএস এর চাল উদ্ধার করে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৩নং দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফিরোজ মোল্লার বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বরাবর এ লিখিত অভিযোগ করেছেন দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাত জন সদস্য (মেম্বর)।
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন চন্ডিপুর গ্রামে হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০টাকা কেজি দরে কার্ডধারী হতদরিদ্রদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করার কথা থাকলেও ডিলার কার্ডবিহীন ২৯বস্তা চাল অন্যত্র বস্তাপ্রতি ৫শ টাকা করে বিক্রি করে দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে রামগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ও এনএসআই কর্মকর্তারা ফতেহপুর গ্রামের দর্জি বাড়ীসহ তিনটি বাড়ী থেকে ৭বস্তা চাল উদ্ধার করে।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ তালুকদারের ভাতিজা ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওমর তালুকদার জেলেদের নামে বরাদ্দ কৃত চাল চুরি করার দায়ে তাকে গ্রেফতার করেছেন লালমোহন থানা পুলিশ। লালমোহন থানার ওসি তদন্ত বশির উদ্দিন জানান গতকাল ভোরে তাকে তার এলাকা থেকে আটক করে লালমোহন থানা পুলিশ। চাল উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ বস্তা। লালমোহন থানায় তার নামে মামলা হয়েছে এবং তাকে পরে ভোলা কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার সংবাদদাতা জানান, দরিদ্রদের দশ টাকা কেজি মূল্যের চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বড় ভাই আব্দুস কুদ্দুস সরকারের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আটক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত শুক্রবার রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার কবিরাজকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি তদন্ত করছে।