ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। এর বিষাক্ত ছোবলে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৯ শতাধিক মানুষ। এর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার সাড়ে ৭ শতাধিক মানুষের।
করোনা প্রতিরোধে এসব বিষয় মেনে চলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আক্রান্ত দেশগুলোতে কমবেশি চলছে লকডাউন। এর প্রভাব পড়েছে ভারতেও। দেশটিতে চলছে দীর্ঘ লকডাউন।এই লকডাউনের মধ্যেই শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘটল চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় স্থানীয় শ্যামপুকুর থানায় ডিউটি অফিসারের সামনে হঠাৎ হাজির এক বৃদ্ধ। নিজেকে বংশীধর মল্লিক পরিচয় দিয়ে ওই বৃদ্ধ জানান, ছেলেকে খুন করে এসেছি! আত্মসমর্পণ করতে চাই।
অফিসার হতভম্ব। পরে সব শুনে বংশীধরের বাড়িতে গিয়ে উদ্ধার করা হয় তার ছেলে শীর্ষেন্দুর (৪৫) মরদেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, ১ই, শোভাবাজার লেনের বাসিন্দা, ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধ জানান, প্রতিদিন বিকালে ছেলে শীর্ষেন্দুকে নিয়ে বেড়াতে বের হন। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মৃগী রোগী। এদিনও তিনি বেরোনোর সময়ে ছেলেকে মাস্ক পরতে বলেন। কিন্তু ছেলে কিছুতেই তা পরতে রাজি হননি। বারবার বলেও রাজি না হওয়ায় তিনি ছেলের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে খুন করেছেন বলে দাবি করেন বৃদ্ধ। বংশীধরের কাছ থেকে ওই বর্ণনা শুনেই আর দেরি করেননি শ্যামপুকুর থানার অফিসারেরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখেন, ঘরের মাটিতে পড়ে রয়েছে শীর্ষেন্দুর মরদেহ আর বিছানায় শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। তিনি শীর্ষেন্দুর মা। সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ১৮ বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি। মায়ের সামনেই ছেলেকে বংশীধর খুন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর পরই পুলিশ শীর্ষেন্দুর মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ময়নাতদন্তের জন্য।
কিন্তু বংশীধর এভাবে হঠাৎ খুন করবেন কেন? পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় প্রাথমিকভাবে বংশীধর জানিয়েছেন, গত ১৮ বছর ধরে অসুস্থ স্ত্রী এবং অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে থাকতে থাকতে তিনি অতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর সেই তিক্ততা থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে তদন্তকারীরা তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
তদন্তকারী এক অফিসার জানান, বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বংশীধর কোনও মানসিক অবসাদের ইতিহাস এখনও পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, অসুস্থ স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্ভবত জুড়ে গিয়েছে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা। ছেলে মাস্ক না পরে বাইরে বের হলে যদি সংক্রমণ হয়, সেই চিন্তাও তাকে গ্রাস করেছিল বলে পুলিশের অনুমান। সূত্র: আনন্দবাজার