আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: নোবেল করোনা ভাইরাসের কারণে সাতক্ষীরার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। সীমিত পরিমাণের ত্রাণ বিতরণে ক্ষোভ বেড়েছে জনমানে। সংকটকালীন সময়ে কর্মহীন এসব মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ বিপর্যয়, ধানের পরিবর্তে চিংড়ি চাষ, কল-কারখানা গড়ে না উঠা, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে মন্দাভাব ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় জেলায় বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। নতুন করে করোনা ভাইরাসের প্রভাব জেলা বাসির কাছে যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয় দাড়ালো। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ রা হয়েছে তা জেলা বাসীর দুটি খানার সমতুল্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলাটিতে মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ ১৭ হাজার ১৫৮ জন। নিয়মানুযায়ী দেমে প্রতি বছরে জনসংখ্যা ৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। সেই হিসাব মতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সাতক্ষীরাতে লোক সংখ্যা দাড়াবে ২৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫ জন।
তালা উপজেলার খলিষখালি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যনুযায় ইউনিয়নটিতে ৩১ হাজার ৮৮৬ জন লোক বাস করে। তাদের হিসাব মতে ৫শটি পরিবার রয়েছে ইউনিয়নটিতে। পরিসংখ্যান বলছে একটি পরিবারে যদি ৫জন সদস্য ধরা হয় তা হলে ইউনিয়নটিতে ৬ হাজার ৩৭৭টি পরিবার থাকার কথা। যদি চার জন করে ধরা হয় তাহলে ইউনিয়নটিতে ৭ হাজার ৯৭১টি পরিবার থাকার কথা। যদি তিন জন করে পরিবারের সংখ্যা হিসাব করা হয় তা হলে পরিবার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ হাজার ৬২৮টি।
বেশির ভাগ পরিসংখ্যান সূত্রনাযায়ী একটি পরিবারে ৫ জনকরে সদস্য ধরলে জেলাতে পরিবার সংখ্যা দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৩১টি। যদি ২৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫ জন বর্তমান লোক হয় তাহলে ৫ জনের একটি পরিবার ধরা হলে পরিবার সংখ্যা হবে ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬০৩টি। জনসংখ্য(সুত্র:পকেট বুক-২০১৬)।
খাদ্য পরিস্থিতি ২০১৮-১৯ অনুযায়ী জেলাতে ১৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৫৩ বন লোক সংখ্যা কৃষক পরিবারের সাথে জড়িত। তাদের পরিবার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি। মৎস,চাকুরী,শ্রমিকসহ অন্যান্য পেষায জড়িত রয়েছে ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৪০৫জন। যাদের পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লক্ষ ৪ হাজার ৮৮১ জন। সর্বমোট সাতক্ষীরা জেলাতে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৩১টি পরিবার রয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০টি,প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি,ক্ষুদ্র চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৯৫৭টি,মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪টি। খাদ্য বিভাগের হিসাব মতে একজন ব্যক্তির দৈনিক ৪৪২ গ্রাম চাউল (দানা শস্য) প্রয়োজন। সেই হিসাবে দৈনিক জেলাতে চাইলের প্রয়োজন ১২৩৫.৪২ মে:টন। যা মাসের হিসাবে দাড়ায় ৩৭৭৪.৩৪ মে:টন। বছর হিসেবে দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৯২ মে:টন। সেই হিসাবে জেলা প্রশাসন রবিবার পর্যন্ত যে খাদ্য বিতরণ করেছে তার পরিমাণ হলো ৮৫০ মে:টন। যা জেলা বাসির এক দিনের খাদ্যের পরিমানের চেয়ে কম। জেলা বাসির এক বেলা খানার পরিমাণ হলো ৪১১.৪০ মে:টন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় এপর্যন্ত জেলাতে ৮৫০ মে:টন চাইল ও ৩৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করোনায় ত্রাণ সহয়তা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১৩৬ মে:টন চাইল ও ৬ লক্ষ ৪ হাজার ৫শ টাকা, কলারোয়াতে ৯২ মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা,তালাতে ১০৫মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা, আশাশুনিতে ৯৭ মে:টন চাইল ও ৪লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা,দেবহাটাতে ৬৬ মে:টন চাইল ও ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা, কালিগঞ্জে ৯৬ মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫শ টাকা,শ্যামনগরে ১০৮ মে:টন চাইল ও ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা,সাতক্ষীরা পৌরসভাতে ১০৮ মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৯৭হাজার টাকা এবং কলারোয়াতে ৩৩ মে:টন চাইল ও ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে দৈনিক চাউলের প্রয়োজন ১২৩৬ মে:টন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অবস্থা এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি কিংবা আগামী বছরেও হারটি কমবে না। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে।
করোনা মোকাবেলায় সাতক্ষীরা বাসীর জন্য কিছু করণীয়র কথা বলেছে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে ,প্রথমে জেলার জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় করা। এর পর ইউনিয়ন ও পৌরসভার মাধ্যমে পরিবার সংখ্যা, জীবন যাত্রার মান,জায়গা জমির পরিমাণ এমনকি মোবাইল নম্বর পর্যন্ত তালিকা করে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা। এর পর পর্যায় ক্রমে সরকারের ত্রাণ সামগ্রী তাদেও কাছে পেীছিয়ে দেয়া।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,সরকারের দেয়া ত্রাণ সামগ্রী পৌছানোর যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বরাদ্ধ আসা মাত্রয় সেগুলো বিলি বন্টন করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা প্রশাসকের ঈদ বোনাস, জেলা ও উপজেলা প্রশানের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ, জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রববাসী ভাইবোনেরাও সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছেন।