প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাস্থ্যবিভাগ নিয়ে সাংবাদিক সাখাওয়াত উল্যাহর খোলা চিঠি

মাননীয়,
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

বিষয়: খোলা চিঠি।
সূত্র ও মূল বিষয়: দেশের এই ক্লান্তে লগ্নে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ডিএমএফ পাশ চিকিৎসকদের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে অন্ত:ভূক্ত করে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানো এবং ‘শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ সার্থক করে তুলতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ইউনিয়ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দশ হাজার শুন্য পদে উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ প্রসঙ্গে।
মহাত্মন,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কিছু বিষয় আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য আজকে এ খোলা চিঠি লিখছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেলের ১৪ টি বিষয়ের উপর তিন বছরের তাত্ত্বিক এবং ১ বছরের ইন্টার্নশিপসহ মোট চার বছরের ডিএমএফ পাশ করার পর সরকারের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন দিয়েছেন। দেশে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে এবং ডিএমএফ চিকিৎসকদের বেকারত্ব দূরকরতে বিশেষ করে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমি মো: সাখাওয়াত উল্যাহ সহ-সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত, সাতক্ষীরা মহোদয় সমীপে আমার নিবেদন-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বাংলাদেশের কয়েক হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে যেখানে চিকিৎসা সেবা দেন বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ডিপ্লোমা চিকিসকগণ যাদের পদবী ‘উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’। সাতক্ষীরাতে ৭৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি কেন্দ্রে ‘উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ শুন্য রয়েছে। আমার জানামতে, এমনকি দেশে প্রায় ১০ হাজার পদ শুন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ সরকার অজ্ঞাত কারণে এ পদে নিয়োগ দিচ্ছে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার নিজস্ব একটি প্রকল্পের নাম ‘কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প’। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং তৃণমূলের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আপনি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প গ্রহণ করে কল্পে প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে আপনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সারা দেশে ১০ হাজার ৭২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয় এবং ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়। সরকার পরিবর্তন হলে মাঝখানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকে। ২০০৯ সাল থেকে আবার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়। ২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় ৩ হাজার ১৩৮টি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৬১টি। ২০২২ সালের মধ্যে সারা দেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সংক্রান্ত সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কিন্তু এত মহাযজ্ঞের পরও প্রশ্ন একটি থেকেই যায়-এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দিচ্ছে কারা? বাস্তবতা হচ্ছে, কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্পে সেবা দিচ্ছে এইচএসসি বা সমমান পাস মানবিক, কমার্স, কারিগরি, ইত্যাদি যে কোনো বিভাগের ব্যক্তিগণ। তাদের নাম দেয়া হয়েছে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার; যাদের মাত্র ৩ মাসের একটি প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভাবলে গা শিউরে ওঠে-সারাজীবন কারিগরি বা মানবিক বিষয়ে পড়ে মাত্র ৩ মাসের একটি সাধারণ কোর্স সম্পন্ন করেই সে পেয়ে যাচ্ছে ড্রাগ দেয়া ও লেখার অনুমতি। এর ফলে জনমনে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আজ প্রশ্ন উঠেছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে এই মেগা প্রকল্পটি অতিদ্রুতই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যদি এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারে, তবে সত্যিকারের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যাত্রা শুরু করেছিল, তার বাস্তবায়ন কোনোদিনই সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় এ মেগা প্রকল্পটির সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সময়ের দাবি। তাই দেশের প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ডিএমএফ পাস একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া একান্ত জরুরী বলে মনে করছি। এখানে সত্যিকারের ডাক্তারদেরই নিয়োগ দেয়া দরকার। না হলে কোনোদিনই প্রকল্পটি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশে ডাক্তারদের তো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না; কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দিলে তারা কিভাবে যাবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, বিকল্প সমাধান হতে পারে ডিপোমা চিকিৎসকরা; যাদের মেডিকেলের ১৪টি বিষয়ের ওপর ৩ বছরের তাত্ত্বিক এবং ১ বছরের ইন্টার্নশিপসহ মোট ৪ বছরে ডিএমএফ (উগঋ) ডিগ্রি রয়েছে। এছাড়া ডিগ্রি শেষে তাদের বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বৈধ চিকিৎসক হিসেবে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস, বিডিএস এবং ডিএমএফদেরই দেয়া হয়। এছাড়া তারা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ঝঅঈগঙ) হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় দীর্ঘকাল থেকে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে আসছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিত্র আমাদের সবারই জানা।
এখানে বড় বড় ডাক্তার নিয়মিত খুঁজে পাওয়া না গেলেও এই ডিপোমা চিকিৎসকরাই যে গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছেন, এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় নজরে আসে।
অথচ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই সেক্টরে বেকারত্বের হার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি ডিপোমা চিকিৎসক বেকারত্বের দু:সহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। অথচ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দশ হাজারের ও বেশি পদ শুন্য রয়েছে।
এ অবস্থায় ডিপোমা চিকিৎসকদের এ প্রকল্পে ব্যবহার করলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। যদি এ প্রকল্পটিতে ডিপোমা চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে তারা জনগণের দোরগোড়ায় প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারবে বলে মনে করি। বিশেষ করে দেশে বর্তমান করোনা ভাইরাস চলছে এ ভাইরাস মোকাবেলায় ডিএমএফ পাস করা ব্যাক্তিদের কাজে লাগালে স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
ডিএমএফ পাস করে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর তারা নিয়োগ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বহু চেষ্টা তদবীরও করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোন এক অজ্ঞাত কারণে যেমন কর্ণপাত করেননি, তেমনি আপনার কাছেও দাবীর বিষয়টি পৌছায়নি বলে আমার বিশ্বাস। আপনি একজন মানব দরদী ন্যায় বিচারক, মানবিক নেত্রী হিসেবে দেশের স্বার্থে এ বিষয়গুলো আপনার কাছে উপস্থাপিত হলে এতদিনে একটা সমাধান হতো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি ব্যক্তিগতভাবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাতক্ষীরার গর্ব সংসদ সদস্য ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক সাহেবের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি জানান, ম্যাটস থেকে চার বছরের ডিএমএফ পাস ছেলেমেয়েরা ঔষধ ও রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। তাদের নিয়োগ দিলে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হতো। তিনি আরও বলেন টিভিতে এক টকশোতে তিনি এবিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় কেন যে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না-তা বুঝতে পারছি না।
এমতাবস্থায়, আমার দাবী দেশের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শূন্য পদ সমূহে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সিএইচসিপির সাথে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ডিএমএফ এর উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক নিয়োগ দিলে সবার জন্য মঙ্গল হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমার দাবী এ প্রকল্পে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নিয়োগ করে স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে এবং ‘শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ এ স্লোগান টি আরও বেগবান করতে মর্জি হয়।
বিনীত নিবেদক-
মো. সাখাওয়াত উল্যাহ
সহ-সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত
সাতক্ষীরা।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।