আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: সাধারণ মানুষের অনীহার কারণে জেলায় গ্রাম গঞ্জের মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠছে।
সুলতানপুর বড়বাজারের মাছের বাজার, গ্রামের হাটবাজার এমনকি মসজিদ গুলোতে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা মানছে না। ফলে দিনের পর দিন জেলাটিতে করোনা ভাইরাসের আশঙ্কা বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলশ প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও সাধারণ মানুষ যেনতা মানছে না।
জেলার বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন, তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বা এ ভাইরাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাকে নিরাপদ বলে মনে করা হলেও তা না রেখেই শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে আড়ত গুলোর সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
সেখানকার লোকজন ও ব্যবসায়িদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এ প্রতিবেদক তাদেও উপর নাখোশ আচরণের মুখোমুখি হয়েছেন।
যদিও সরকার নিয়মিতভাবে মানুষকে সতর্ক থাকার ও সর্বদা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলে আসছে। তারা সরকারের এ নির্দেশনা না মেনে তাদেরকে যেনতেনভাবে ঘোরাফেরা ও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। ২৩ এপ্রিল সকালে সুলতানপুর বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে। একই অবস্থা ছিল সকালে কাঁচা মালের পাইকারী বাজার।
লোক সমাগম এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সরকারের কড়া নির্দেশনা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদের এলাকার রাস্তা, ঘাটা,অলি ও গলিগুলোতে সময় কাটাচ্ছেন। কোথাও নির্দেশনা মানলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
এদিকে চিকিৎসকরা বারবার বলে আসছেন যে জনসমাগম এড়ানো সম্ভব না হলে এটি ‘অনেকের মৃত্যুর’ কারণ হবে।
বুধবার ও বৃহষ্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের বাগানবাড়ি,মুন্সিপাড়া,বাটকেখালি,মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা,সুলতানপূর,ইটাগাছা,কামালনগর,খড়িবিলা,পলাশপোল,মধুমালারডাঙ্গি কুকরালিসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জনসমাগমের চিত্র উঠে এসেছে। অনেক এলাকাতে যেন ঈদ উৎসব চলছে। রাস্তা ঘাটে জন¯্রােত বলে দেয় যেন আমেজের কোন ঘাটতি নেই। দীর্ঘ দিন পর গ্রামের সকলের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ যেন অফুরান্ত নেয়ামত ভাবছে কেউ কেউ। কয়েকটা বাড়িতে এ ছুটিতে বিয়ে সাধির কাজ ও সেরে ফেলেছে। এমন অবস্থা জেলার প্রত্যন্ত এলাকা গুলোতে।
একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী আব্দুল আহাদ জানান, আমরা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতে থাকছে না। ফলে ঝুকি বাঁড়ছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন,তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তবে সাধারণ মানুষ আইন মাতে চাচ্ছে না।
এদিকে জেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে রমজানকে সামনের রেখে এবং করোনার প্রভাবে চাল,ডাল,চিনি,সেমাই,তেল, মাছ,মাংশ,সবজি, মসলাসহ নিত্যপণ্যেও দাম বেড়েছে । কয়েকটি সবজির দাম আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে।
মসজিদ গুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে অনেকে। শহরের ৭নং ওয়ার্ডেও খড়িবিলা আহলে হাদীস মসজিদে মুসল্লিদের আগের নিয়মেই নামাজ পড়তে দেখা গেল। পায়ে পা লাগিয়ে কাতার বদ্ধ না হয়ে নামাজ আদায় করলে তাদের ধারনা নামাজ হবে না। এমনকি রোগ ব্যাধি দেয়ার মালিক আল্লাহ। মসজিদে আসলেও দিবে না এসে ঘরে বসে থাকলেও করোনার মত ভাইরাস আক্রমন করতে পারে বলে কয়েকজন মুসল্লি জানান।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, জানান মসজিদগুলোতে নামাজে অংশ নেয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক স্থানে জনগণ মানছে না। এজন্য দরকার জনগণের সহযোগিতা।
সাতক্ষীরা পৌরমেয়ার তাজকিন আহম্মেদ চিশতি জানান, জনসচেতনা সৃষ্টি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লিফলেট,হ্যান্ডবিল,ব্যানার ঝুলান এমনকি শহরে মাইকিং করা হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু মানুষ সচেতন কম।
কয়েকজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সাথে কথা হয়,তারা বলেন, বাড়ি থাকলে খাবকি। সরকারের দেয়া খাবার কেউ পাচ্ছে আর কেউ পাচ্ছেনা। তাও আবার সীমিত। তাই পেটের দায়ে তারা কাজ করতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। আর সন্ধার দিকে কাজ ঠিক করতে মোড়ে যেতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলছে তাই তাদেরকে বাড়িতে রাখার কাজটি খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে এবং কোনো কারণ ছাড়াই তারা বাসা থেকে বের হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাধারণ মানুষের বুঝা উচিত তাদেরকে বাড়িতে থাকার জন্যই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। যদিও আমরা সাধারণ মানুষকে বিষয়টি বোঝানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছি, তবুও তারা নির্দেশনা যথাযথভাবে মানছে না ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,মাহে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সহ নিবিড় বাজার মনিটরিংয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টিম গঠন এবং মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতা যুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বাজার এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ কে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।