ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ৪৬ দিনের মাথায় এসে প্রাণসংহারি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৫৮টি জেলায়। তবে বুধবার পর্যন্ত দেশের ছয়টি জেলায় রোগটি শনাক্ত হয়নি। জেলাগুলোকে ভাগ্যবান হিসেবেই মনে করছেন সবাই।
আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে বুধবার রতে সর্বশেষ সংশোধিত তালিকায় ছয়টি জেলা করোনামুক্ত বলে জানা গেছে। যদিও দুপুরে জানানো হয়েছিল, নয়টি জেলা করোনামুক্ত।
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে যে ছয়টি জেলায় এখনো করোনা সংক্রমিত হয়নি সেগুলো হলো ভোলা, নাটোর সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।
ইতিমধ্যে চারটি বিভাগের সবগুলো জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছে। সেই চারটি বিভাগ হলো, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ৮৫ জনের এই পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বমোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন। যা মোট করোনা আক্রান্তের ০.৭৪ ভাগ। তবে রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলাতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
যথাযথভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলায় এই জেলায় সংক্রমণ এখনো ছড়ায়নি বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘দেশের করোনার উপস্থিতির শুরু থেকেই হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে জোর দিয়েছিলাম। বিশেষ করে অন্য এলাকা বা বিদেশফেরতদের খুবই সতর্কতার সাথে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
এছাড়াও করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সরাসরি দাফন না করে সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ডিসি বলেন, ‘সন্দেহভাজন মৃত ব্যক্তিদের রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তারপর দাফন করেছি।’ আর এই প্রক্রিয়াগুলো যথার্থভাবে মেনে চলায় এখনো পর্যন্ত নাটোর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা নেই বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পূর্বের পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯১ জনকে। এখন পর্যন্ত খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। যা মোট করোনা আক্রান্তের ০.৭১ ভাগ। তবে এই বিভাগের সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ জেলায় এখনো করোনা সংক্রমিত হয়নি।
বরিশালের ভোলা এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায়ও করোনা আক্রান্ত মেলেনি।
এখনো ছয় জেলায় আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘দুপুরে যে তথ্যটি আমরা জানাই সেটা সাধারণত রাত ১১টার তথ্য। তখন পর্যন্ত ৫৫টি জেলা আক্রান্ত ছিল। এখন স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। তবে বেড়ে যাওয়ার কারণটি হলো প্রথমে বিদেশফেরত আক্রান্ত করেছে তারপর আক্রান্ত জেলা থেকে নতুন জেলায় প্রবেশ করায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ আন্তঃজেলা মুভমেন্ট একারণেই আক্রান্ত বাড়ছে।’
ঢাকার বাইরে এখনো প্রাতিষ্ঠানিক নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার ব্যবস্থা না হওয়ায় শনাক্ত হয়নি বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএসএমএমইউর প্রফেসর অব কার্ডিওলজি, হেড-হার্ট ফেইলিওর অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সারাদেশে পরীক্ষা নিশ্চিত না করা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না যে ওই এলাকায় আক্রান্ত নেই। যে কতগুলো জেলা এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত হয়নি এর বেশিরভাগ জেলাতেই এখনো পরীক্ষা করার সুবিধাও তৈরি হয়নি। ফলে ওই এলাকাগুলোতে করোনা রোগী না পাওয়া একটা অন্যতম কারণ হতে পারে।’
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার কথা জানা যায়। এরপর ১৮ মার্চ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ এবং২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো সীমিত আকারে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে বলেও জানা যায়। আর ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানো হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঢাকার ভেতরে ১০টি প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকার বাইরে ১১টি প্রতিষ্ঠানে নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা হলেও এখনো বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগ করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। ফলে করোনা পরীক্ষার ফাঁক থেকেই এই জেলাগুলো আক্রান্ত হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে।