আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা: ২৫ এপ্রিল বিকাল র্পযন্ত সাতক্ষীরা জেলাতে কোন ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়নি। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আইইডিসিআর খুলনা থেকে পাঠানো আজ ৩৩টি রিপোটের ফলাফল তাদের কাছে এসে পৌছিয়েছে।
ফলে সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ২৮৭ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৪১ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। এছাড়া নতুন করে আরো ১৭টি নমূনা সংগ্রহ করে করোনা টেস্টের জন্য আইইডিসিআর খুলনাতে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরায় বিদেশ ফেরত মোট ২ হাজার ৫৪৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে আরো ৩ হাজার ৫২৮ জনকে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আসোলেশনে রয়েছে ২ জন এবং যুবউন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে আরো ৭ জন।
এদিকে দেশের ৬০টি জেলায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। এখনো করোনা মুক্ত রয়েছে চারটি জেলা। আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। করোনামুক্ত জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও ঝিনাইদহ ।
অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের ৪টি জেলা বর্তমানে করোনামুক্ত রয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে হারুন অর রশিদ সুমন (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৫ এপ্রিল) ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হারুন অর রশিদ কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঁমারগাতী গ্রামের ছবেদ সরদারের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রব জানান, নারায়ণগঞ্জে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতেন হারুন অর রশিদ সুমন। গত ৫দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে দুই প্রতিবেশীর সাথে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়ি আসেন। তাদেরকে কামারগাঁতি রওজা শরীফ কমপ্লেক্স ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টেনে রাখা হয়। হারুন অর রশিদের জ¦র থাকলেও বিষয়টি গোপন রাখে তারা। হঠাৎ বেশী অসুস্থ হওয়ায় শুক্রবার রাতে তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে হারুন অর রশিদের মৃত্যু হয়।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমান বলেন, ওই যুবক তথ্য গোপন করায় চিকিৎসকরা ম্যানেনজাইটিস রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। মৃত্যুর পরেই প্রকৃত তথ্য জানা গেছে। ততক্ষণে তার রক্ত পরীক্ষার সুযোগ ছিল না। এখন তার পরিবারের সবার স্যাম্পল নিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত যুবকের কাছে বারবার তার সাম্প্রতিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করলেও সে ও তার আত্মীয়স্বজন মিথ্যা তথ্য দেয়। মৃত্যুর পর তার আত্মীয় স্বজন বলছে সে সম্প্রতি ঢাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে। তথ্য গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সঠিক তথ্য দিলে তাকে আমরা করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে পারতাম। এখন বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তার নিকটাত্মীয়দের নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, কামারগাঁতি রওজা শরীফ ও পাশর্^বর্তী ৬ টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে লাল পতাকা ও ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। নিহতের পরিবারের সকলের স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকলকে কঠোরভাবে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মৃত্যু কী কারণে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এজন্য আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তির চিকিৎসায় ০৩ টি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছে, ৮ টি ভেন্টিলেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে, ২০ অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ২০ টি নেবুলাইজার প্রস্তুত রয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে ১০০ টি বিছানা প্রস্তুত রয়েছে।