ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সামরিক সহায়তা না নেয়ার কথা জানানোর পর অবস্থান পরিবর্তন করেছে ভারত। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি মোকাবিলায় এ দেশগুলোতে ভারতের সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম মোতায়েনের তাৎক্ষণিক কোনো পরিকল্পনা (ইমমেডিয়েট প্লানস) নেই ভারত সরকারের। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো শুক্রবার বলেছেন, ‘যদি অুনরোধ আসে’ শুধু তখনই ভারতীয় সেনাবাহিনীর র্যাপিড রেসপন্স মেডিকেল টিম (আরআরটি) মোতায়েন করা হবে। অনলাইন হিন্দুতে প্রকাশিত ‘নো মুভ টু ডিপ্লয় আর্মি মেডিকেল টিমস টু নেইবারিং কান্ট্রিজ স্যানস রিকুয়েস্ট: গভর্নমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার ও দিনাকর পেরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সামরিক মেডিকেল টিম মোতায়েনে ভারতের প্রস্তুতির রিপোর্টকে ‘বিভ্রান্তিকর’ আখ্যায়িত করে বলেন, করোনা মোকাবিলায় র্যাপিড রেসপন্স টিম মোতায়েনের আবেদনে আমরা তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়েছি। এই টিমে আছেন ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকস। উদহারণ হিসেবে এক্ষেত্রে মালদ্বীপ ও কুয়েতের কথা বলেন তিনি।
অন্য বন্ধুপ্রতীম দেশ যদি অনুরোধ করে তাহলে অল্প সময়ের নোটিশে আমরা এসব টিম পাঠাতে প্রস্তুত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলেছেন, এসব দেশ থেকে যদি অনুরোধ আসে, এ জন্য আমরা আমাদের টিমকে স্ট্যান্ডবাই রেখেছি। তবে এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ভারতের সামরিক সহায়তা নেয়ার যেকোনো পরিকল্পনা জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সিনিয়র কর্মকর্তারা। এরপরেই ভারত তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। শুক্রবার সৌদি আরবের আরব নিউজ আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জাভিদ ফয়সালকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করে। এতে জাভিদ ফয়সাল বলেন, কাবুল থেকে এমন সহায়তার জন্য (ভারতের কাছে) কখনোই কোনো অনুরোধ করা হয় নি। দিল্লি থেকেও এমন কোনো সাজেশন পাওয়া যায় নি। এসব রিপোর্ট ভুয়া এবং ভুল ধারণা। ওদিকে বুধবার ঢাকার একটি পত্রিকাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, বিদেশী কোনো মেডিকেল টিম প্রয়োজন নেই। মোমেন বলেছেন, আমাদের এমন সহায়তা প্রয়োজন নেই। আমরাই তো বিভিন্ন দেশে টিম পাঠাই। এক্ষেত্রে তিনি মালদ্বীপ, ভুটান, কুয়েত ও চীনে বাংলাদেশের সহযোগিতার ইঙ্গিত দেন।
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কামাল গুনারতেœ ভারতীয় সামরিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বুধবার রাজধানী কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অধীনে যে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবিবলায় আমাদের নিজেদের সেনারা দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন।
কিন্তু গত ৩রা এপ্রিল ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রেস নোট দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে নৌবাহিনীর ৬টি জাহাজকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানে মোতায়েন করার জন্য ৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত বা স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে’। এরপর ১৫ই এপ্রিল তথ্য আপডেট করা হয়। তাতে সেনাবাহিনীর সূত্র কুয়েতের মতো ‘ফ্রেন্ডলি ফরেন কান্ট্রিজ’-এর জন্য ভারতীয় সহায়তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। কুয়েতে যেসব মানুষ করোনায় আক্রান্ত তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ভারতীয় কর্মী। মালদ্বীপে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি আরআরটি টিম পাঠানো হয়েছে। এতে রয়েছেন ৫ জন ডাক্তার ও প্যারামেডিকস। মালদ্বীপ সরকার কোভিড সমস্যায় যে সুরক্ষামুলক পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে সহযোগিতা করতে তাদেরকে পরামর্শমুলক ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নেপালকে ১১.৩ লাখ রুপি মূল্যের ওষুধ সরবরাহ করছে সেনাবাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বার বার বলেছে, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও আফগানিস্তানে মোতায়েনের জন্য তাদের মেডিকেল টিম স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই এমন রিপোর্ট করা হয়। কিন্তু কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সূত্রগুলো এখন পরিষ্কার করছে যে, এটা ছিল প্রতিবেশীদের জন্য তাদের শুধুমাত্র প্রস্তুতি। এ নিয়ে ওইসব দেশের সঙ্গে আলোচনা হয় নি।