ক্রাইমবার্তা রিপোট:যশোর: যশোরে অ্যালকোহল পানে অসুস্থ আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২ জন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২জন, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১জন ও হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেয়ার পথে ১জন মারা যান। নিহতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি কালিতলার আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন (৩৫), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ক্ষিতিবদিয়া গ্রামের শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন (৩৯) ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে সাহেব আলী (৬৫) ও মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মনা হালদারের ছেলে তপন হালদার (৪০)। এই নিয়ে গত তিন দিনে যশোরে অ্যালকোহল পান করে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ জনে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ ৩ জন হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন সদর উপশহরের আব্দুল মুজিদের ছেলে মামুন (৩৯) সদরের চুড়ামনকাটির খিতিবদিয়া গ্রামের মৃত আবু বক্কারের ছেলে আব্দুল মান্নান (৫৫) ও মণিরামপুরের মহনপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে রুবেল (২৮)।
হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভর্তি রেজিস্ট্রার তথ্যানুযায়ী, অ্যালকোহল পানে অসুস্থ শাহিনকে শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রাত ২টা ১২ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বেলা ১২ টা ২৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিলন হোসেন জানান, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ইনামুল হোসেনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক তাকে খুলনায় রেফার্ড করেন। পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে আনার পথে দুপুর তিনটার দিকে ইনামুলের মৃত্যু হয়। হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত কর্মচারি আসলাম হোসেন জানান, অ্যালকোহল পানে অসুস্থ আবু তালেবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৭টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে মণিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে অ্যালকোহল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তপন হালদার। এরপর তিনি চিনাটোলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় অবস্থার অবনতি হলে তাকে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মারা যান। এরআগে শুক্রবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মহনপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মোমিনকে (৪৮) মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান ওই গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে মুক্তার হোসেন (৪৭)। পরিবারের লোকজন পুলিশী ঝামেলা এড়াতে তড়িঘড়ি করে তাদের দাফন শেষ করেন। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গল হোমিও এন্ড হারবাল থেকে মৃত তিনজনসহ রুবেল অ্যালকোহল কিনে পান করে। পরে তারা ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যালকোহল পানে অসুস্থ হয়ে গত তিন দিনে আরও মারা গেছে যশোর শহরের গরিবশাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু (৪৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬)। যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার নান্টু মিয়া (৩৫), সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর মান্দারতলা এলাকার ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০) ও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান(৪৫)। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পপতিবার মনি বাবু ও সাবুর একসাথে অ্যালকোহল পান করেছিলেন। এছাড়া আক্তারুজ্জামান, ইনামুল সরদার, আব্দুল মান্নান ও হযরত আলী একই সাথে অ্যালকোহল পান করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.আরিফ আহমেদ জানান, অ্যালকোহল পানে বিষক্রিয়ায় তারা মারা গেছেন। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন তাদের অবস্থাও গুরুতর।
মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মুক্তার ও মোমিনের মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই হারুন অর রশিদ জানান, অ্যালকোহল পানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শাহিন, সাহেব আলী। মুক্তারের লাশ মর্গে রয়েছে। সাহেব আলীর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতরের যশোরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাহা উদ্দিন জানান, তাদের মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে মাড়োয়াড়ি মন্দির এলাকার মদ বিক্রেতা হাসানকে আটক করা হয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তার দোকানে অভিযান চালিয়ে অ্যালকোহলের স্যাম্পুল উদ্ধার করা হয়। এগুলো পরীক্ষা করা হবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, অ্যালকোহল পানে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছি। অ্যালকোহল বিক্রেতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।