জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
আজ থেকে ১ বছর আগে ২৭ এপ্রিল ২০১৯ জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা থেকে। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে মঞ্চে বসার জন্য থাকা সবগুলো চেয়ারে বসার জন্য লোক পেতে বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আজ হাজার হাজার মানুষ এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে দলের নাম ঘোষনার অপেক্ষায় আছে। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে আমরা যা বলেছিলাম তাঁর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নিন্মরুপঃ
• আজ আমরা উপস্থিত হয়েছি, জাতীয় মুক্তি ও গণ- আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত একদল আশাবাদী মানুষের উদ্যোগ, ভাবনা ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে। যারা এই কাফেলায় শরিক হতে চান, তাদেরকে সংগঠিত করার কাজ আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।
• মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সকলের গর্বিত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। শত শত বছরের আন্দোলন, সংগ্রাম, বিদ্রোহ এবং অনমনীয় প্রতিরোধের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বৈষম্য ও দুঃশাসনর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা আবার স্বাধীনতা ফিরে পাই। নতুন রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি ও সামষ্টিক অভিপ্রায় হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, এই তিনটি মূলনীতিকে গ্রহণ করা হয়েছিল। ঘোষিত এই তিন নীতির প্রতি সমর্থন, বিশ্বাস ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের পর কখনোই এই প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। আজ পর্যন্ত যারাই বাংলাদেশ শাসন করেছেন তাদের প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের এই মৌলিক প্রতিশ্রুতিকে অবজ্ঞা করেছে।
• ইতিহাসের এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে সেই দেশের নবীন ও তরুণদের ঘুরে দাঁড়াতে হয়। ব্যক্তি ও সংকির্ণ দলীয় স্বার্থোন্মত্ত স্বৈরাচারকে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া জাতির সামনে অন্য কোন পথ খোলা থাকে না। আত্মোপলব্ধি থেকে কেউ না কেউ এগিয়ে এসে পথ হারানো জাতীকে দিশা দেন, নতুন রাজনীতির দরজা খুলেন। তাই আমরাও বিশ্বাস করি, প্রচলিত ও পরিচিত ধারার কেউ নয়, বাংলাদেশকে আজ নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে একদল নতুন মানুষকে। তরুণ, সৃজনশীল, দুঃসাহসী একদল দুর্দমনীয় মানুষ।
• উপনিবেশিক শাসনামলেও দু’বার গভীর সংকটকালে জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিল মুসলিম লীগ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তেমন এক ক্রান্তিকালে অভ্যুদয় ঘটেছিল বিএনপি’র।
• প্রায় চার যুগ পরে আজ আবার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, তেমন আরেক বাক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। একাত্তরে যে আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়ার দায় বোধ করছি আমরা।
• আমরা মনে করি আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ উপস্থিত :
ক. বাংলাদেশের রাজনীতির পুনর্বিন্যাস
খ. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠন।
• এ জন্য নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ, উদ্যমী নেতৃত্ব ও গতিশীল সংগঠনের অভিষেক জরুরী। আমরা বিশ্বাস করি, ১৬ কোটি মানুষের অধিকারহীন এই অসহনীয় বন্দিত্ব ঘুচিয়ে, স্বাধীন সত্তায় বিকশিত সৃষ্টিশীল বাংলাদেশ গড়তে এখন প্রয়োজন অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।
• আমরা কোন ধর্মভিত্তিক দল ও ধর্মীয় রাজনীতি করবো না। আমরা যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছি তা হবে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য, উন্মুক্ত একটি প্লাটফর্ম।
• আমরা আমাদের গর্বিত ইতিহাস ও সংস্কৃতিক প্রাচুর্যকে ধারণ করে পৃথিবীর দিকে মুক্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে চাই। আমাদের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎসস্থল, ইসলামের উদার ঐতিহ্য, সাম্যের দর্শন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কর্তব্য। আমরা নৈতিক গুণাবলী, আত্মিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধ তাড়িত অধিকারের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় ব্রতী।
• কোন মতাদর্শিক তত্বের আদলে আদর্শ-রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের চিন্তা, মত ও পথের আমরা অনুসারী নই। আমরা মনেকরি জাতীয় জীবনের এত গভীর সঙ্কট সত্ত্বেও বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী ও ধারা মতাদর্শিক বিভাজন, বিভক্তি ও সংকীর্ণতার কারণে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।
• জাতীয় ঐক্য কখনোই কোন দল ও দলীয় আদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করে সূচিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন সকলের অস্তিত্ব, সমস্বার্থ ও মর্যাদা সুরক্ষায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সার্বজনীন মূলনীতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মূলনীতি: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ আমাদের জাতীয় ঐক্যের পাটাতন।
• যারা আমাদের সাথে সরাসরি যুক্ত হবেন কিংবা চিন্তা ও কর্মপন্থায় ঐক্যমত পোষণ করবেন, তাদের সকলকে নিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করব। আলোচনা, পর্যালোচনা করে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি, লক্ষ্য ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করব।
২৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগ্রহী বাংলাদেশী নাগরিকদের সাড়া আসতে শুরু করে। আমরা সীমিত সামর্থ্যের মধ্য দিয়েই সকলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি এবং সংগঠিত করার চেষ্টা করি। এই ১ বছরে দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা সফর করেছি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমন্ত্রণে ব্রিটেন সফর করেছি। এসব সফরে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার, ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সেখানকার রাজনীতি সচেতন বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলেছি, মত বিনিময় করেছি। জানতে চেয়েছি কেমন বাংলাদেশ তাঁরা চান। দেশ নিয়ে তাঁদের আকাঙ্ক্ষাগুলো কি। বাংলাদেশে এভাবে তৃণমূলের মানুষদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এর আগে কোন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নাই।
এই ১ বছরে আমাদেরকে হাজার হাজার মানুষ যেমন স্বাগত জানিয়েছেন এবং আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তেমনিভাবে অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, নানা অপবাদ, রটনা ও ট্রল করে হতাশ করার চেষ্টাও করেছেন। অনেকের ধারণা আমরা বোধহয় তাঁদের বিরোধিতায় স্তব্ধ হয়ে যাব, পালিয়ে যাব। না, বন্ধুগণ! We are here to stay. আমরা আছি। তবে, আমরা উভয় ধরণের মানুষদের কাছ থেকে শিখেছি, এখনো শিখছি। বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের সাথে পরামর্শ ও চিন্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা নতুন দলের নাম, কর্মসুচী, গঠনতন্ত্র ও ইশতেহার প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি। শীগ্রয়ই সেসব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব আমরা। ইনশাআল্লাহ।