এম কামরুজ্জামান
সাতক্ষীরা জেলাকে কি পরিকল্পিতভাবে করোনা সংক্রামিত জেলা বানানো হলো ? এই জিজ্ঞাসা সাতক্ষীরার ২৩ লাখ মানুষের। শনিবার পর্যন্তও করোনা সংক্রমণমুক্ত একটি জেলা ছিল। রোববার যশোরের শার্শা উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত মাহমুদুর রহমান সমুন (৩২) নামের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। সুমন সাতক্ষীরা জেলা শহরের উত্তর কাটিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্ত্রী, ৮ বছর বয়েসের একটি ছেলে, বাবা, মাকে নিয়ে ওই ভাড়া বাড়িতেই তার বসবাস।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত মাহমুদুর রহমান সুমন নামের ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ি সাতক্ষীরায় হলেও তিনি যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন শার্শা উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত। তিনি ওই হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান। প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকেই তিনি অফিস করতেন। আর কর্মস্থল থেকেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।
রোববার সুমনসহ ২ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। তারা উভয় শার্শা উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। এনিয়ে সেখানে এ পর্যন্ত ৬ জন করোনা রোগি সনাক্ত হলো।
দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। আর বেনাপোল স্থলবন্দর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার অধীন। বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে প্রতিদিন শত শত পাসপোর্ট যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে এখনও প্রবেশ করছে। সঙ্গত কারণে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপর। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা ভারত থেকে আগত পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বও পালন করছেন।
পাশ্ববর্তী ভারত যেহেতু করোনা আক্রান্ত একটি দেশ সেহেতু ভারত থেকে আগত পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। বিধায় যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্থানীয়ভাবে থাকার ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও তেমনি।
তাহলে শার্শা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী মাহমুদুর রহমান সুমন কীভাবে সেখান থেকে বের হয়ে সাতক্ষীরাতে আসলেন ? প্রতিদিন কিভাবে তিনি করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে করোনামুক্ত জেলা সাতক্ষীরায় আসা-যাওয়া করেন ? সেই প্রশ্নই এখন দেখা দিয়েছে।
করোনা আক্রমনের শুরু থেকেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবীদসহ দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি মানুষ সাতক্ষীরাকে করোনামুক্ত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে তাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল সাতক্ষীরা করোনা মুক্ত ছিল। কিন্তু সেটি আর ধরে রাখা গেল না। যশোর থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে এসে সাতক্ষীরাকে করোনা সংক্রমিত করা নিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ আজ আতঙ্কগ্রস্ত।
জবাব খুঁজতে রবিবার সন্ধ্যায় কথা বলেছিলাম যশোরের সিভিল সার্জন (সাতক্ষীরা সাবেক সিভিল সার্জন) ডাক্তার আবু শাহীনের সঙ্গে। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মী মাহমুদুর রহমান সুমন এখন কোথায় ? তিনি আজ কি অফিস করেছেন ? সিভিল সার্জন ডাক্তার আবু শাহীন সাফ বললেন, আমার জানা নেই। খোঁজ রাখেন না।
আর শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. ইউসুফ আলী মুঠো ফোনে বললেন, ‘ল্যাব টেকনোলজিস্ট মাহমুদুর রহমানকে বার বার বলেছি কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য। কিন্তু সে শুনেনি। জানতাম মাঝেমধ্যে সাতক্ষীরা থেকে সে অফিস করতো’। তার সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে এ ধরনের কোন নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি’।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন. ‘পরিকল্পিতভাবে করোনামুক্ত সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা সংক্রমিত একটি জেলা বানানো হলো। বিষয়টি নিয়ে আমি যশোর জেলা প্রশাসক এবং যশোর সিভিল সার্জনের সাথে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু মাহমুদুর রহমান যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত এবং তার কর্মস্থল থেকেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বিধায় তার চিকিৎসা যশোর জেলাতেই হওয়া উচিত। তিনি কীভাবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত একটি জেলা থেকে করোনামুক্ত সাতক্ষীরাতে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন সেই জিজ্ঞাসা আমারও। এ ব্যাপারে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমি করোনা আক্রান্ত মাহমুদুর রহমানের খোঁজ-খবর রাখছি। যাতে মনোবল না হারায় সেজন্য তাকে সাহস যুগিয়েছি। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন’।
সাতক্ষীরার সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা ‘তাহলে কি পরিকল্পিতভাবে করোনামুক্ত সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা সংক্রমিত জেলা বানানো হলো ? যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেনো তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি সেটি খতিয়ে দেখা জরুরী। লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ভয়েস অব সাতক্ষীরা ডটকম