দোকানপাট খোলা রাখা যাবে ৪টা পর্যন্ত– হোটেলের ভেতর থেকে বিক্রি করা যাবে ইফতারসামগ্রী

ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোর্ট:   সামাজিক দূরত্ব মেনে মুখে মাস্ক পরে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পুলিশ সদস্যরা। সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিনিট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। গলির কাঁচাবাজার, দোকানপাটও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তা দেখে পুলিশ সদস্যরা কাউকে কিছু বলতে পারছিলেন না। কারণ সড়কে থাকা বেশির ভাগ মানুষ কিছু না কিছু প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে পরিস্থিতি মেনে চলার চেষ্টা করছে।

গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর বাড্ডাসহ আরো কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কে এই পরিস্থিতি চোখে পড়ে। জানতে চাইলে সড়কে দায়িত্বরত পুলিশের এএসআই খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। বিবেকবান মানুষ নির্দেশনা মেনে চলছে। তারা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে অহেতুক বের হচ্ছে না।’

এদিকে শুধু সড়কেই নয়, ইফতারসামগ্রী বিক্রির পাশাপাশি বাজারে নিত্যপণ্য বিক্রির বিষয়েও পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে চলেছে। লকডাউনের মধ্যে রোজার সময় রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় অবস্থিত নিত্যপণ্যের দোকানগুলো খোলা রাখার সময় দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এ সময় সামাজিক দূরত্ব মেনে শুধু প্রতিষ্ঠিত হোটেল-রেস্তোরাঁর ভেতরে ইফতারসামগ্রী বিক্রির অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আপাতত কেউ ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারির পসরা প্রদর্শন বা বেচাকেনা করতে পারবে না।

জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান  বলেন, ‘রোজার মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার নিত্যপণ্যের দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এর আগে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি যোগ করেন, ‘সম্মানিত নগরবাসীকে এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিতে হবে। তবে কাঁচাবাজার ও সুপারশপগুলো আগের মতোই সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান এবং জরুরি সেবাগুলো এই নির্দেশনার আওতায় পড়বে না।’

এদিকে বিধি-নিষেধের কারণে এবার রোজার প্রথম কয়েক দিন দোকানে ইফতারি বিক্রিরও সুযোগ ছিল না। সেখানেও এবার কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি সূত্র জানায়, ফুটপাতে কোনো ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা যাবে না। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁর ভেতরে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে নগরীর ‘প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁগুলো’ মঙ্গলবার থেকে ইফতারি তৈরি ও বিক্রি করতে পারবে। তবে কেউ ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারির পসরা সাজিয়ে প্রদর্শন বা বেচাকেনা করতে পারবে না।

‘প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁ’ বলতে ডিএমপি কী বোঝাতে চেয়েছে জানতে চাইলে উপকমিশনার মাসুদ বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁর স্থায়ী স্থাপনা আছে, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন, সেগুলোকে আমরা প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁ বলছি। অর্থাৎ অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকান বসিয়ে ইফতারি বিক্রি করা যাবে না।’ তবে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রেস্তোরাঁগুলো ইফতারি বিক্রির অনুমতি পেলেও কেউ সেখানে বসে খেতে পারবে না। ইফতারের সময় পর্যন্ত ইফতারি কেনা যাবে।

ডিএমপি সূত্র আরো জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার থেকে নতুন নির্দেশনা মেনে চলবে নিত্যপণ্যের দোকানগুলো। এখন থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টার পরিবর্তে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে স্বীকৃত কাঁচাবাজার ও সুপারশপগুলো আগের মতো প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান এবং জরুরি সার্ভিসগুলো এই নির্দেশের আওতায় আসবে না।

সরেজমিন : গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গলির মোড়ের সবজি, ফল ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রমজান শুরুর পর থেকে এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট খোলা রাখছেন দোকানিরা। ফুটপাতের দোকানিরাও ধীরে ধীরে দোকান বসানো শুরু করছেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মগবাজার এলাকার কয়েকটি গলিতে ঢুকতেই অনেক মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে। এরপর সেখান থেকে মেরুল বাড্ডার কয়েকটি গলিতে ঢুকে দেখা যায়, মানুষে গিজগিজ করছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শুরু থেকেই পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে তখন কিন্তু আমরা বেশ শক্ত অবস্থানে ছিলাম। সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছিল নাগরিকদের ঘরে থাকার। কিছু মানুষ আছে, যারা সেটি মানছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে চলেছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে রোজার মধ্যে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে।’

কাঁচাবাজারগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি বাজার কমিটির সঙ্গে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা মিটিং করছেন, কথা বলছেন। সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁরা নাগরিকদের বলছেন, যেন সতর্কতা মেনে তারা কেনাকাটা করে। যে দোকানে একটু বেশি ভিড়, সেটা এড়িয়ে যে দোকানটা ফাঁকা আছে সেখানে যেন যায়। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের রাস্তায় বের হওয়া ঠেকাতে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। পথে পথে চেকপোস্টে তল্লাশি চলছে। একই সঙ্গে অলিগলি ও রাস্তায় মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এর আগে গত ৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মুদি দোকান সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা, কাঁচাবাজার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা জারি করে ডিএমপি।কালের কণ্ঠ

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।