ক্রাইমবার্তা রিপোট: প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশির বাস মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্য ৭০-৭৫ ভাগ বৈধ। তারা বেশ ভালই ছিলেন। অনেকে ইউরোপ-আমেরিকা বা পশ্চিমা দুনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মতই পরিবার নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তাদের সাজানো সংসারই তছনছ করে দিয়েছে তার স্বপ্নও। এখন অনেকে কর্মহীন। বেকার জীবনে তারাও এখন অর্থ আর খাদ্য কষ্টে পড়ে গেছেন। অনেককে কোম্পানীর কর্তারা বাধ্যতামূলক ছুটিতে দেশে পাঠাতে চাইছেন।
বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আবর আমিরাত এবং কুয়েত কাতারের মত ধনী দেশগুলোতে। সে সব দেশে বৈধদের যখন এই হাল, অবৈধদের তো রক্ষা নেই। করোনা তাদেন জন্য কাল হয়ে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তাদের দেশে ফিরতেই হবে। কবে করোনাকালে বড়ি বিপদে আজ মধ্যপ্রাচ্যের জেলে থাকা বাংলাদেশিসহ বিদেশি। সবার আগে তাদের ওপর করোনার খড়গ নেমে এসেছে। সুনির্দিষ্ট বা সুস্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে কূটনীতিকদের অনুমান ১১ টি দেশেরর কারাগার ও ডিটেনশন সেন্টার মিলে সেই সংখ্যা ৩০ হাজারের কম হবে না। করোনা আতঙ্কে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের কারাগার ও ডিটেনশন সেন্টারসমূহ খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসাবে তারা অপরাধীদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে মুক্তি দিচ্ছে নিজ নিজ দেশে ফেরতের শর্তে। গত ১২ দিনে সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইনেরর জেল থেকে মুক্তি পাওয়া ৪৩০ জনকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মূলত তাদের পুশ করা হয়েছে। গতকাল সর্বেশেষ কুয়েত থেকে ফিরেছেন ১২১ জন। আজও কুয়েতের একটি ফ্লাইট আসার কথা রয়েছে। তবে ওই ফ্লাইটে কারামুক্ত বাংলাদেশিদের পাঠাচ্ছে নাকী অবৈধ বাংলাদেশি যারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করার পর থেকে প্রত্যাবাসন পূর্ববর্তী ট্রানজিট ক্যাম্পে ( মোট সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন) মানবেতর জীবন করছেন তাদের ফেরানো হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। স্মরণ করা যায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা জেল এবং অবৈধভাবে দেশগুলোতে থাকা শ্রমিকদের ফেরাতে দেশগুলো ঢাকার ওপর যে চাপ তৈরি করেছে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অন্তত ৩ দফা আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ওআইসির নীতিনির্ধারণী এক বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শ্রমিকদের দেশে ফেরা ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন। সর্বশেষ কাল মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশের দূতদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং তাদের চাকরি রক্ষায় লবি করা বা জোরালোভাবে কূটনৈতিক ততপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কুয়েত ফেরত ১২৬ জন কোয়ারেন্টিনে:
এদিকে সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে কুয়েত সরকারের ভাড়া করার জাজিরা এয়ারের স্পেশাল ফ্লাইটে ১২৬ বাংলাদেশি, যারা বিভিন্ন অপরাধে জেলে ছিলেন তারা ফিরেন। সন্ধ্যায় ফ্লাইটটি অবতরণের পর তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
বাহরাইনে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া বাকিদেরও ফিরতে হবে:
এদিকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাহরাইন থেকে প্রথম স্লটে ১৫০ জন ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন ১৩৮ জন। কারাদণ্ড মওকুফ হওয়া ওই বাংলাদেশিদের রোববার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাহরাইন সরকারের ভাড়া করার গাল্ফ এয়ারের একটি স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়। মানামায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, অনেকে মুক্তি পেলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ১৩৮ জনকে বিমানে তোলা হয়েছে। বাকীরা পরবর্তী সময়ে ফিরবেন।
মাস্কাটের জেল ফেরত ২৯২, সৌদি থেকে ফিরেন ১৬৮ জন:
ওদিকে গত শুক্রবার মাস্কাটের জেলে থাকা ২৯২ বাংলাদেশিকে স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় ওমান সরকার। তারও আগে সৌদি আরব চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ওমরাহ করতে গিয়ে আটকে পড়া ১৪৪ বাংলাদেশির সঙ্গে ১৬৮ প্রবাসী, যারা বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে ছিলেন তাদের স্পেশাল বিমানে তুলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। যদিও ঢাকা চেয়েছিল করোনার এই কঠিন মুহুর্তে কোনো প্রবাসী ফেরত না আসুক। বিশেষ করে জরুরি ভিত্তিতে তৈরি হতে যাওয়া ৪০০০ প্রবাসী বা বিদেশ ফেরতের একসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিন সুবিধার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় চেয়েছিল বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব ড. খলিলুর রহমান অবশ্য এটাকে রুটিন মাইগ্রেশন বলছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এটি করোনা সংকটের কঠিন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জেলখানা খালি করা সংক্রান্ত উদ্যোগেরই অংশ। এটি অব্যাহত থাকলে লাখ খানেক বাংলাদেশি কেবল মধ্যপ্রাচ্য থেকেই ফিরবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী।