ক্রাইমবার্তা রিপোট: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ আজাদ ওরফে সজলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে নগরের কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যার আগ থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পুলিশ এখনো মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
চিকিৎসক এম এ আজাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় থাকেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার ইফতারির আগ পর্যন্ত মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেম্বারে রোগী দেখেন এম এ আজাদ। ইফতারির কিছু আগে হাসপাতালকর্মীদের ইফতারি আনার কথা বলে নিচে নামেন তিনি। এর পর থেকে তাঁর আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে এম এ আজাদের স্ত্রী মুঠোফেনে কল করেও তাঁর স্বামীকে পাচ্ছিলেন না। পরে তাঁর স্ত্রী বিষয়টি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জহিরুল ইসলাম মনিককে জানান। তিনি সকালে হাসপাতালের কর্মীদের এম এ আজাদের কক্ষে খোঁজ নেওয়ার জন্য বলেন। পরে হাসপাতালের কর্মীরা এম এ আজাদের রুমের সামনে গিয়ে আগের দিনের ইফতার কক্ষের দরজার হুকের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান এবং তাঁরা বিষয়টি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানান। পরে হাসপাতালের ডরমিটরিতে চিকিৎসক এম এ আজাদের রুমের তালা ভেঙে দেখা হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি না থাকায় হাসপাতাল পরিচালক কর্মীদের এম এ আজাদকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। এ সময় হাসপাতালের এক আয়া পুলিশের কাছে চিকিৎসক এম এ আজাদের লাশ লিফটের নিচে পড়ে আছে বলে জানান। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেজমেন্টের লিফট থেকে জরুরি বাহির হওয়া দরজার নিচে এম এ আজাদের লাশটি পড়ে ছিল। সেখান থেকে বেজমেন্টের ফ্লোরের উচ্চতা মাত্র দুই ফুট। আর লিফটির অবস্থান ছিল গ্রাউন্ড ফ্লোরে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিফটি সয়ংক্রিয়ভাবে ওঠানামা করে এবং লিফটের দরজাও সয়ংক্রিয়ভাবে খোলে এবং বন্ধ হয়। এ ছাড়া দরজা খোলার বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে চাবি দিয়ে। এর বাইরে ওই স্থানে কারো অবস্থান করা প্রায় অসম্ভব।
লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকারী বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে দুটি স্থান ভাঙা, গোড়ালি থেঁতলানো, পায়ের পাতায় দুটি ছিদ্র রয়েছে। এ ছাড়া বাম পায়ের গোড়ালি থেকে নিচ পর্যন্ত থেঁতলানো এবং মাংসপেশি ছিল না। যদি লিফট থেকে পড়ে যেতেন তাহলে মাথা ও শরীরে ক্ষতের চিহ্ন থাকার কথা।’
নিহতের মামা মো. মনিরুল সরদার বলেন, ‘এম এ আজাদের কোনো শত্রু আছে কি না অথবা তার সঙ্গে কারো কখনো ঝগড়া হয়েছে—এমন কথা আমাদের জানা নেই। তবে শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় এম এ আজাদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ লিফটের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।’
চাচা শিয়াব হোসেন খোকন বলেন, ‘আজাদের বরিশালে অনেক রোগী আছে। তার ওপর সে এক মাস কোথাও যায়নি। এই এক মাস রোগী দেখার কারণে তার কাছে বড় অঙ্কের টাকা জমা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই টাকা আত্মসাত্ করতে হয়তো কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এম এ আজাদের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা না অন্য কিছু তা বুঝতে পারছি না। তিনি ভদ্র ও ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব হয়েছে কিংবা তাঁর কোনো শত্রু আছে তা আমরা দেখিনি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘লিফট থেকে পড়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। এটি স্বাভাবিক কোনো দুর্ঘটনা বলেও মনে হচ্ছে না। এ ছাড়া মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’