ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সব থেকে বেশি করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে যশোর জেলায়। আর সব থেকে কম মাত্র একজন সাতক্ষীরা জেলায়।
যশোরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে একজন সাংবাদিক, তিনজন চিকিৎসক ও একজন সেবিকাসহ আরও ১১ জনের শরীরের করোনা সংক্রমণের নমুনা পাওয়া গেছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারের ল্যাবে ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে যশোরের ১১টি নমুনায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৫ জনে।
আর যবিপ্রবি’র জিনোম সেন্টারে ১০৪জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। এ সেন্টারে গত ১৭ এপ্রিল করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে মঙ্গলবার ১১তম দিনে যশোরের ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝিনাইদহের ৩৩টি নমুনা, নড়াইলের ৬টি নমুনা ও মাগুরার ৯টি নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এসেছে।
তিনি আরও জানান, ল্যাবে একাধিক টিম কাজ করছে। যিনি ফলাফল কম্পাইল করেন, তিনি গত ২৪ ঘণ্টার ফলাফলের সঙ্গে আজকের সকালের ফলাফল যোগ করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এজন্য সংশোধিত ফলাফল দেওয়া হয়েছে। আজ মোট শনাক্ত ১১জন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, যশোরে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে আরও তিনজন চিকিৎসক, আগেই আক্রান্ত একজন চিকিৎসকের স্ত্রী, যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের এক সেবিকা এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন। আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব ওই সাংবাদিক যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজের সাক এডিটর হিসেবে কর্মরত। চিকিৎসক তিনজনের মধ্যে দু’জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে এবং একজন সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত।
এ দিকে অবনতিশীল পরিস্থিতিতে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার সকাল ৬টা থেকে যশোরে লকডাউন শুরু হয়েছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অথচ কোনোভাবেই মানুষকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাচ্ছে না। সেই কারণে আরো কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে গোটা যশোর জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ৩১৯ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে রিপোর্ট এসেছে ১৭৩টি। সবগুলোর রিপোর্টই নেগেটিভ। তবে প্রতিদিন যেসব নমুনা পাঠানো হয় তার রিপোর্ট আসে কয়েকদিন পরে এবং প্রথম থেকে বিপুল পরিমান টেস্টের রিপোর্ট পেইন্ডিং থেকে গেছে। এদিকে সাতক্ষীরায় বিদেশ ফেরত মোট ৩ হাজার ৫৭৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে আরো ৩ হাজার ৫৪২ জনকে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের আসোলেশনে রয়েছে ১ জন ও যুব উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে আরো ৭ জন।
–০—–
মঙ্গলবার ১১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৪ জন সুস্থ হয়েছেন। ৭ জন হাসপাতালে, বাকিরা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৪১জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন। এদিকে, সব থেকে বেশি করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে যশোর জেলায়। আর সাতক্ষীরা জেলা রয়েছে সব থেকে কম, মাত্র একজন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগে কোভিড-১৯ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১২জন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি যশোর জেলায় সেখানে আক্রান্ত ৪৪ জন। এরপরই ঝিনাইদহে ২১ জন, নড়াইলে ১৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১১ জন, খুলনায় ৯ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৭, মাগুরায় ৪, মেহেরপুরে ২ ও বাগেরহাটে ১ জন রোগীর শরীরে করোনা সনাক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া বিভাগে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ২৩ হাজার ৪৮৬ জন, এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৭১ জন। বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ১ হাজার ৫৯২জন। এর মধ্যে খুলনায় আছে ৩২ জন। এর ১২ জনই চিকিৎসক, যারা খুলনার একটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ছাড়পত্র পেয়েছে ৯৪৬ জন। আইসোলেশনে ছিলেন ২৭৮ এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১৬০ জন রোগী।
সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের সবকটি জেলা এখন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। যদিও সাতক্ষীরা জেলায় আক্রান্ত একমাত্র ব্যক্তি যশোরে কর্মস্থলে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় চিকিৎসাধীন। এ কারণে এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা মুক্ত দেখানো হয়েছে। তবে সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জন জানান, তিনি সাতক্ষীরা সদরে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, বিভাগের খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, খুলনার রূপসা উপজেলার রাজাপুর গ্রামে নুর আলম খান এবং গত ২২ এপ্রিল মেহেরপুরে ইদ্রিস সাহা নামে একজন মারা যান। পরে পরীক্ষা করে তার দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।