আব্দুল আলিম মোল্যা:এই রমজানেই বদর জয় করার ইতিহাস যাদের তাদের করোনায় কিসের ভয় ? যে জাতীর পূর্বসুরী আমীর হামজা, খালিদ, হাসান আল বান্নাহ,, সে জাতি করোনায় করুনা চাইতে পারে না। মাথা উচু করে রাজত্ব করেছে যে জাতী, সে জাতি একটি ভাইরাসে নুয়ে পড়তে পারে না। ” সম্মানিত পাঠক, করোনা দূর্যোগের মাঝেই রহমতের বার্তা নিয়ে এলো পবিত্র মাহে রমজান। ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস এটি। মসজিদে একসঙ্গে তারাবির নামাজ আদায়, সবাই মিলে ইফতারে অংশগ্রহণ করা রমজানের এক অন্যরকম আনন্দ। কিন্তু এবার সব কিছুতেই কাঁটা বিছিয়ে দিলো করোনা ভাইরাস। এবারের মতো রোজা হইতো আমরা কেউ জীবনে পাইনি। জানি না মহান রাব্বুল আ’লামিন আমাদের উপর কতোটা রাগান্নিত আছেন! কতোটা অপরাধ আমরা করেছি! কোভিড-১৯ কিন্তু ভয়াবহ অসাম্প্রদায়িক। সে চেনে না কে হিন্দু কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান। করোনা অসম্ভব রকম সাম্যবাদী। সে গরীব ধনী, রাজা কিছুই চেনে না, মানে না। সবাই তার চোখে সমান। তাই করোনা নিয়ন্ত্রনে সরকারী নির্দেশনা অনুসারে পবিত্র রমজান মাসে উৎসবমুখর পরিবেশে মসজিদে খতমে তারাবি আদায় এ বছর বন্ধ থাকছে। দেশে সকল এলাকার মুসলমানদের সরকারি এ নির্দেশ, দেশ জাতির স্বার্থে মেনে চলা উচিৎ। ঘরে তারাবিহ পড়ে, রোজা রাখতে হচ্ছে আমাদের। রমজান মাসে সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব রজায় রেখে ঘরে বসে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত করে, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ কবল থেকে দেশকে আল্লাহ্ রক্ষা করুক এমন প্রার্থনা করি। পাঠক, আমাদের মাগফিরাতের সময় এখনও শেষ হয়নি? নাজাতের সময় শেষ হয়নি? এখনও সবকিছুর সময় আছে। তওবার সময় আছে। গুনাহ্ মাফ করানোর সময় আছে। আসুন বেশি বেশি তওবা করি। বেশি দান সাদকাহ্ করি। কারণ দানে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। এই রমজানই তার উৎকৃষ্ট সময়। আমরা জানি করোনা পরিস্থিতিতে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ক্ষুধার্ত মানষের চিৎকার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এখনই সময় আর্ত-মানবতার কল্যানে এগিয়ে যাওয়া। ** নবী সা: বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রেশমি কাপড় পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পবিত্র শরাব পান করাবেন” (আবু দাউদ) ** হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, “দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। যা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে” (মিশকাত শরীফ)। ** “রমজান মাসে রাসূল সা: অন্যান্য মাসের তুলনায় অত্যাধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। আর এই দান-সদকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, বাতাসের গতিবেগের চেয়েও তা দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো! ” (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম)। **অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: রমজান মাসে প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন। (ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ইমান) হাদিসদ্বয়ে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় যে, রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা সুন্নত। আর এতে অবশ্যই অনন্য ফজিলত রয়েছে। রমজানে বেশি বেশি এবাদাত করি। বেশি বেশি দান সাদকাহ্ করি । অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। হইতো এই উছিলায় আল্লাহ্ আমাদের গুনাহ্ মাফ করবেন! সম্মানিত পাঠক, এবার আসুন জানার চেষ্টা করি কোভিড-১৯ কেনো আসলো এবং আমাদের করোনীয় : ১। আল্লাহ বলেছেন– “জলে-স্থলে যে দুর্যোগ, বিপর্যয় মহামারী ধেয়ে আসছে তা তোমাদের হাতের কামাই।” (সুরা রোম) ২। আল্লাহ বলেছেন, “কে তোমাদের ভালো কাজ সম্পাদন করে আর কে খারাপ কাজ করে তা তিনি দেখতে চান। এ জন্য আল্লাহ পরীক্ষা হিসেবে দুর্যোগ মহামারী পৃথিবীতে পাঠান।” ( সুরা মুলক) ৩। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কোনো সমাজে যখন অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ ওই সমাজে মহামারী পাঠান। (সুনানে ইবনে মাজা) ৪। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, আল্লাহ আজাব হিসেবেও পৃথিবীতে এই মহামারী পাঠান। পূর্ববর্তী অনেক জাতির ওপর এ রকম আজাব পাঠিয়েছেন আল্লাহ। ( সহীহ্ মুসলিম) পবিত্র কুরআন ও হাদিসের ৪টা ঘোষনা দেখলাম। আমরা যারা মুসলমান তারা কুরআন হাদিস ১০০% বিশ্বাস করি। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইটালী, ফ্রান্স, জার্মানী, চীন, স্পেন। আর আমরা জানি এই দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নাফরমানি করা হয়। সবচেয়ে বেশি অশ্লীলতা, ন্যুডিজম, পত্রপত্রিকা ম্যাগাজিনে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, নারী-পুরুষের অশ্লীল দৃশ্য, ইন্টারনেট, ইউটিউবসহ অশ্লীলতায় সয়লাব। যেখানে বিশ্বনবী সা: স্বয়ং বলেছেন, অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মহামারী শুরু হয়। সেই তুলনায় মুসলিম দেশগুলোতে অনেক ভালো অবস্থা। তবে মুক্ত নয়। কারণ তারাও অশ্লীলতা মুক্ত নয়। অশ্লীলতা কম তাই মহামারী কম। এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আর বিশ্বাস করতে চাই আমাদের উপর তাঁর রহমত থাকবে। তাই আশাহত হবো না। ভরসা রেখে সাবধানে থাকবো।(-২)
আব্দুল আলিম মোল্যা
রেকর্ড কিপার
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
সাতক্ষীরা।