ডাঃ এন এম খায়রুল বাশার:
রোজা রাখাবস্থায় অনেক রোগীর ওষুধ সেবন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।
* সাইনোসাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে :
সাইনোসাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নাকে স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। অনেক রোগী জিজ্ঞাসা করে রোজা রেখে দিনের বেলায় নাকে ওষুধ দেওয়া যাবে কিনা? সেক্ষেত্রে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগে ও ইফতারের পরে নাকে ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করা ভালো। দিনের বেলায় নাকে ড্রপ বা স্প্রে না দেওয়া ভালো।
* কান পাকা রোগ ও অন্য সমস্যা :
কান পাকা রোগ বা কানে অন্যান্য রোগ হলে অনেক সময় কানে ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগে ও ইফতারের পরে কানে ওষুধ ব্যবহার করা ভালো। রোজা রেখে কানে ওষুধ দেওয়া যাবে না। কারণ কানের পর্দায় যদি ছিদ্র থাকে, এ ছিদ্রের মাধ্যমে ওষুধ গলায় চলে যেতে পারে।।
* গলায় টনসিল প্রদাহে : টনসিল প্রদাহে বা গলার অন্যান্য ইনফেকশনের জন্য এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। কিছু এন্টিবায়োটিক দিনে চারবার, কিছু আট ঘণ্টা পর পর, এবং অন্যান্য এন্টিবায়োটিক দুবার বা দিনে একবার খেতে হয়। পবিত্র রমজান মাসে আমরা দিনে একবার বা দুবার খেতে হয় এরকম ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে দিয়ে থাকি। যাতে রোগী ইফতার করে বা সাহরি খাওয়ার আগে বা পরে ওষুধ খেতে পারে।
আর রোজা অবস্থায় মাউথওয়াশ, কুলি ও গড়গড়া- সাবধানে করতে হবে যাতে পানি বা টুথপেস্ট পেটের ভেতর না যায়।
* রমজানে গলা ভেঙে গেলেঃ
রোজা রেখে অনেকে উচ্চস্বরে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করার ফলে গলা শুকিয়ে স্বর ভংগ হতে পারে। গলা ভাঙলেই অনেকে বলে থাকেন গার্গল করতে। কিন্তু এটা ভুল। গার্গলে গলার বিশ্রাম হয় না। সাধারণত গলার বিশ্রাম নেয়া খুব দরকার। আর গলার জন্য গরম পানির ভাপ নিলে অনেকটা উপকার হয়, কারণ শ্বাসনালীতে গরম পানি না গেলেও গরম বাষ্পটা গিয়ে লুবরিকেন্ট-এর কাজ করে। ফলে গলায় আরাম হয়।
তবে রোগীর ১৫ দিনের বেশি গলা ভাঙা থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ ইএনটি সার্জনের কাছে যাওয়া উচিত। যিনি আয়না বা যন্ত্রপাতি দিয়ে স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ডটা পরীক্ষা করতে পারবেন। অনেক সময় আমরা যেটাকে ছোট পলিপ বা দানা ভাবছি, সেটা ল্যারিঙ্গাল ক্যানসারও হতে পারে। বায়োপ্সিতে যদি ক্যানসার ধরা পড়লে তা রেডিয়েশনে ১০০ শতাংশ সেরে যায়। কারণ প্রাথমিক স্তরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েনি।
* ইনহেলার- অত্যাধিক কাঁশি, গলার সমস্যা বা শ্বাসত্বন্ত্রের সমস্যা জন্য অনেক সময় ইনহেলার দরকার হয়। এটি নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে রোটাহেলারে পানি পেটে যেতে পারে। ফলে রোজার ক্ষতি হয়।
* অপারেশন- রোজায় নাক কান গলার কোনো অপারেশন ইফতারের পরে সাধারণত করা হয়। অনেক অপারেশনের রোগী ১/২দিন পর থেকেই রোজা রাখতে পারবেন।
তবে ইমার্জেন্সি কোনো অপারেশন যেমন- নাক কান দিয়ে রক্ত পড়া বা নাকে কোনো ফরেন বডি ঢুকে গেলে তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করতে হবে।
সর্বোপরি রমজান মাসে নাক, কান, গলার অসুখ কম হয়। জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি টিম এ সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য এক রমাজন মাসে পাকিস্তান আসে। তারা গবেষণাকর্মের জন্য পাকিস্তানের করাচী, লাহোর ও ফয়সালাবাদ শহরকে মনোনীত করেন। সার্ভে করার পর তারা যে রিপোর্ট দিলেন তার মূল কথা ছিলো । মুসলমানরা নামাজের জন্য যে অজু করে সেই অজুর কারণে নাক, কান, গলার অসুখ কম হয়। এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ্যতার সহিত রমজানের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।।
ডাঃ এন এম খায়রুল বাশার
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (ওটোল্যারিনগোলজি)-এফপি
এম.এস (ইএনটি এন্ড হেড-নেক সার্জারী)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল)
কনসালটেন্ট, নাক-কান-গলা রোগ বিভাগ।
সম্পাদনায়ঃ মোঃ সাইফুজ্জামান