ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট, বেনাপোল: নিখোঁজ ফটো সাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে বেনাপোল সাদিপুর সীমান্ত থেকে আটক করেছে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের রঘুনাথপুর ক্যাম্পের সদস্যরা। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে চিত্রসাংবাদিক কাজলকে মামলা দিয়ে শনিবার গভীর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বেনাপোল সীমান্তের সাদিপুর গ্রামের মাঠের মধ্য থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন যশোর ৪৯বিজিবি ব্যাটালিয়নের রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী।
তিনি বলেন, তাকে রাতে বিজিবি‘র টহল দলের সদস্যরা সাদিপুর সীমান্তের একটি মাঠের মধ্য থেকে আটক করে। অবৈধভাবে ভারত থেকে আসার সময় তাকে আটক দেখানো হয়। রাতে তাকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিত্রসাংবাদিক শফিকুল কাজলকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপারের অভিযোগে বিজিবি একটি মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। তাকে যশোর আদালতে পাঠানো হবে।
এদিকে কাজলের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়নও নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফোনে কাজলের সঙ্গে কথা হয়েছে। বেনাপোল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই খবর পেয়ে রাতেই স্বজনরা তাকে নিতে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।
তবে কীভাবে তাকে পাওয়া গেল এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
সাংবাদিক কাজলের বিষয়ে বিজিবির রঘুনাথপুর ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী বলেন, ‘বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশের সময় সাংবাদিক কাজলকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি আমাদের হেফাতজতে আছেন। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পক্ষকাল’-এর অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে নিখোঁজের ঠিক ৩০তম দিনে (৯এপ্রিল) সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি বেনাপোলেই চালু হয়েছিল। তখন কাজল নিখোঁজের বিষয়টির তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই মুন্সী আবদুল লোকমান বলেছিলেন, ‘নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি চালু হয়েছিল। লোকেশন দেখিয়েছে বেনাপোল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ও নম্বরটি চালু থাকার সময় কম হওয়ায় বেনাপোলে কোনও অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।’
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পক্ষকাল’-এর অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনও সন্ধান না পেয়ে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম কাজলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় পরিবার। ১৮ মার্চ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক কাজলের সন্ধান চাওয়া হয়। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েকদফা কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিক সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।
সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজও কাজলের ফেরৎ পাওয়ার দাবীতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।