লাইলাতুল কদর ও মুসলিম উম্মাহ

  আব্দুল আলিম মোল্যা: 
   #প্রারম্ভিকতা:
আরবী লাইলাতুল কদর অর্থ মহিমান্বিত রজনী। লাইলাতুল অর্থ রাত্রি বা রজনী। আর কদর অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদর অর্থ সম্মানিত রজনী। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে ইসলামের মহানবী, হযরত মুহাম্মদ সা: এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত।
#লাইলাতুল_কদরের_গুরুত্ব_ও ফজিলত :
এই রাতের গুরুত্ব পবিত্র কুরআন ও সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আল্লাহ্ তায়ালা এই রাতের নামে পবিত্র কুরআনে একটি সুরা নাজিল করেছেন। সেখানে এই রাতের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবং আল্লাহ্ ঘোষনা করেছেন এই রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কোরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে, “আমি একে নাযিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে”। (সূরা আল কাদর : ১-৫)। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে পৃথিবীতে। লাইলাতুল ক্বদরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মান এ কারনে যে, মহান আল্লাহ্ এই রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল করেন। আল্লাহ্ বলেন, হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা আদ-দুখান,) লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ইসলামের মহানবী বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন। (বুখারি) #লাইলাতুল_ক্বদর_কবে? এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন। সেটা হলো এই রাত সম্পর্কে আমাদের মাঝে একটা ভুল ধারনা আছে। সেটা হলো ২৭ শে রমজান। আমরা ছোট বেলা থেকে জেনে আসছি লাইলাতুল ক্বদর ২৭ শে রমজান। এখনও এই ভুলটা প্রচলিত আছে। সম্মানিত পাঠক আসুন জানার চেষ্টা করি কবে সেই মহিমান্বিত রজনী? লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ নেই। রাসুল সা: নিজে জানতেন না। তাই তিনি নির্দিষ্ট কোনো রাতে এবাদাত করেননি। আমাদেরও বলেননি। লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন, “আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে।” (বুখারি, হাদিস নং :৭০৯)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, “রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। ” (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)। একদা হজরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন, “রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো।” (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭)। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজনের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। ” (মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩)। প্রিয় পাঠক, উপরের সহীহ্ হাদিস পাঠ করলে নূতন করে আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তাই আমাদেরকে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তালাশ করতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এই রাত বঞ্চিত হলে আমরা হবো হতোভাগা। বিশ্বনবী সা: বলেন, ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, “যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, “হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন।” (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)।
এ_রাতের_এবাদাত :
ক) সালাত : সুপ্রিয় সুধী, যেহেতু মহান আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন এই রাত হাজার মাসের চাইতে শ্রেষ্ঠ তাই প্রমানিত যে এই রাতে যে এবাদাতই করবো সেটা হাজার মাসের বা তার অধিক মাসের এবাদাত হবে। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বো। “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে (নামায পড়বে) তার বিগত গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। (ফাতহুল বারী,৪/২৯৪)
খ) দোয়া পাঠ : বেশি বেশি দোয়া পড়বো। কি দোয়া পড়বো সেটাও বিশ্বনবী সা: বলে দিয়েছেন। ** হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? “রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।” (ইবনে মাজা, সহিহ-আলবানি) এছাড়া আরও কিছু দোয়া আছে। সেগুলো পড়তে পারি। যেমন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আলহামদু ল্লিল্লাহ” “সুবহানাল্লাহ”, “আল্লাহুআকবার” “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ”। ইত্যাদি।
গ) কুরআন তেলাওয়াত : আর যেহেতু এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে তাই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। কুরআন পাঠ একটি বাচনিক ইবাদত, যা দীর্ঘ সময় ধরে করা যেতে পারে। যার এক একটি অক্ষর পাঠে রয়েছে এক একটি নেকী। ** নবী (সাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পড়বে, সে তার বিনিময়ে একটি নেকী পাবে… আমি একথা বলছি না যে, আলিফ,লাম ও মীম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর”। (তিরমিযী) এছাড়া কুরআন যদি কিয়ামত দিবসে আপনার সুপারিশকারী হয়, তাহলে কতই না সৌভাগ্যের বিষয়! ** নবী (সাঃ) বলেনঃ “তোমরা কুরআন পড়। কারণ সে কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে”। (মুসলিম)
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদরে এবাদাতকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এবং গোনাহ্ মাফ করার তৌফিক দিন। আমিন।।-(৩)
আব্দুল আলিম মোল্যা
রেকর্ড কিপার
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
সাতক্ষীরা।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।